কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও সৌমেন চক্রবর্তী: সুজন চক্রবর্তীর পরে এবার সুশান্ত ঘোষ। বাম জমানায় নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে নিশানা করল তৃণমূল। সুশান্তের আত্মীয়দের তালিকা প্রকাশ করে কুণাল ঘোষের অভিযোগ, সকলেই সুশান্ত মন্ত্রী হওয়ার সময় চাকরি পেয়েছেন। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিএমের জেলা সম্পাদক। 


তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'বন্যার স্রোতের মতো সিপিএম জমানা নিয়ে অভিযোগ আসছে। সুশান্ত ঘোষের নামে যা অভিযোগ আসছে বিভিন্ন পার্টি অফিস থেকে। সুশান্ত বাবু কিছু বলুন।' সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলেন, 'এগুলো রাজনীতির নামে নোংরামি। এসব করে কমিউনিস্টদের কালিমালিপ্ত করা যাবে না। আর আমাদের এসব নোংরামির জবাব দিতেও ঘেন্না লাগে। যারা এরকম নোংরামি করে, তাদের রাজনীতি এই নোংরামির পথেই শেষ হয়ে যাবে।' বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী পর এবার তৃণমূলের টার্গেটে, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে গত এক বছর ধরে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে।


প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি, যুব তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক থেকে তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য একে একে অনেককেই গ্রেফতার করেছে সিবিআই, ইডি। এই নিয়ে যথেষ্টই চাপে রাজ্যের শাসকদল। 


এই আবহে ফেসবুকে একটি তালিকা প্রকাশ করে কুণাল ঘোষ দাবি করলেন, এদের সকলকেই রাজ্যের মন্ত্রী থাকাকালীন চাকরি দিয়েছেন সুশান্ত ঘোষ। কুণাল ঘোষ লিখেছেন, 'অভিযোগ সত্য? তদন্ত হোক। সিপিএম নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী, কঙ্কালকাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্ত ঘোষের সম্পর্কে সিপিএম সূত্রেই আসা তথ্য। তদন্ত চাই।'...এরপর লেখা হয়েছে, সুশান্ত ঘোষের মন্ত্রী ও বিধায়ক থাকাকালীন ১৫ বছরে নিজের পরিবারের যে চাকরিগুলি দিয়েছেন, তার তালিকা


কী রয়েছে তালিকায়?
প্রথমেই রয়েছে বড়বোন ও ভগ্নিপতির চাকরি। বর্তমানে রিটায়ার্ড। 
আধারনয়ন হাইস্কুলে লাইব্রেরিয়ান পদে ভাগ্নের চাকরি। 
ক্ষীরপাইয়ে সেচ দফতরে ছোট ভাগ্নের চাকরি। 
ছোট বোনের প্রাইমারি স্কুলে চাকরি। 
মেজ বোনের স্বামীর গড়বেতায় প্রাইমারি স্কুলে চাকরি। 
তার পরেও বোনকে ICDS-এর সুপারভাইজারের চাকরি। 
পিসতুতো দুই ভাই ছত্রগঞ্জের তরুণ রায় ও তাঁর দাদার চাকরি। 
এছাডাও মামাতো ভাই...
সুশান্ত ঘোষের স্ত্রী 
শালির চাকরির কথা বলা হয়েছে। 


শেষে কুণাল ঘোষ লিখেছেন, 'ওনার শ্বশুরবাড়ির এবং ওনার ভাইবোন আত্মীয়স্বজন কেউ বেকার নেই।'


পাল্টা তোপ সুশান্তর:
সুশান্ত ঘোষ বলেন, 'আমার বড় বোন জীবনে কোনওদিন চাকরি করেনি। বড় ভগ্নিপতি ৭৭ সালের অনেক আগে চাকরি পেয়েছিলেন। তারা যখন চাকরি পেয়েছে, তখন আমি পরিবহণ দফতর ছেড়ে চলে এসেছি। আমার বোন হাইস্কুলেও চাকরি পেয়েছিল, প্রাইমারি স্কুলের চাকরি পেয়েছিল নিজের যোগ্যতায়। মেধার ভিত্তিতে। আমি যদি প্রভাব খাটাতাম তাহলে আমার আরেক বোন গ্র্যাজুয়েট হওয়া সত্ত্বেও আইসিডিএস -এর চাকরি পেত না, সুপারভাইজার বা অফিসারের চাকরি পেত।'
  
বাম জমানায় জঙ্গলমহলে দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন সুশান্ত ঘোষ। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা গড়বেতার বিধায়ক ছিলেন তিনি। শেষ ও সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন সুশান্ত ঘোষ। তারও আগে সামলেছেন শ্রম, পরিবহণের মতো দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বেনাচাপড়া কঙ্কালকাণ্ডে নাম জড়ায় সুশান্ত ঘোষের। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এখন তিনিই পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক। 


আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের মুখে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে ফের উত্তপ্ত পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না