সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ফের সাফল্য এসএসকেএম-এ (SSKM)। দুরারোগ্য ও জটিল রোগের চিকিৎসা রাজ্যের সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। উত্তর দিনাজপুরের এক বাসিন্দার শরীর থেকে রেসপিরেটরি প্যাপিলোমাইটিস নামের জটিল রোগ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
এর আগে এক-দুবার নয়। ২০০ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের (North Dinajpur) মনোজিত সাহার গলায়। রেসপিরেটরি প্যাপিলোমাইটিস রোগের জন্য অসম্ভব যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। বারবার ছুরি-কাঁচি চলেছে তাঁর শরীরে। শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন! বারবার অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে যেতে হয়েছে তাঁকে-মোট ২০০ বার।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাসিন্দা, বছর ৩২-এর মনোজিত সাহা রেসপিরেটরি প্যাপিলোমাইটিস নামে এক বিরল রোগে আক্রান্ত। তাঁর পরিবারের দাবি, মাত্র ২ বছর বয়সে ভোকাল কডে পলিপ ধরা পড়ে মনোজিতের। সেইসময়ই কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু জটিলতা শুরু হয় তারপর থেকে। দেড়মাস পর ভোকাল কডের সমস্যা ফের ফিরে আসে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, সেইসময় মনোজিতের রেসপিরেটরি প্যাপিলোমাইটিস রোগের কথা জানান শিশুমঙ্গল হাসপাতালের এক ENT বিশেষজ্ঞ।
কী এই রেসপিরেটরি প্যাপিলোমাইটিস রোগ? কীভাবে হয় এই রোগ?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে এই রোগের সংক্রমণ হয়। পুরুষদের শ্বাসনালি ও খাদ্যনালিতে এই ধরনের ভাইরাস থাকতে পারে। পাশাপাশি মহিলাদের সার্ভাইক্যাল ক্যানসারের কারণও এই ভাইরাস।
মনোজিৎ রেসপিরেটরি প্যাপিলোমাইটিস রোগে আক্রান্ত হন মাতৃজঠরে থাকাকালীনই। সেই দু'বছর বয়সে প্রথম অস্ত্রোপচার। তারপর থেকে এক-দেড় মাস ভাল থাকতেন মনোজিৎ। তারপরেই বারবার ঘুরে আসতে থাকে সমস্যা। চিকিৎসকদের দাবি, এই রোগে আক্রান্ত হলে, ভোকাল কডে পলিপ বড় হতে শুরু করলে সংকুচিত হতে শুরু করে শ্বাসনালী। সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট ও কাশি। পলিপ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় কণ্ঠস্বরও। জটিল এই সমস্যার কারণে, ৩২ বছরের মনোজিতের শরীরে অস্ত্রোপচার হয়েছে প্রায় ২০০ বার। কিন্তু সম্প্রতি শিশুমঙ্গল হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে SSKM-এ ভর্তি হন মনোজিত।
সোমবার সেখানেই ফের অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলে অস্ত্রোপচার। SSKM হাসপাতাল -এর ENT বিশেষজ্ঞ সাবরিনা ফারহিন বলেন, 'সব চিকিৎসকরাই ঠিক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই রোগের প্রকৃতিই এই রকম। সামান্য অংশ থেকে গেলেও এই রোগ ফিরে আসে। ভাইরাস আরও নীচে নামলে ফুসফুসে ছড়াতে পারে। অপারেশনের পর রোগী এখন ভালো আছেন।'
মনোজিৎ সাহার বাবা ধীরজ সাহা বলেন, 'ছোটবেলায় এই অস্ত্রোপচার দেড়-দু মাস অন্তর হতো। তারপরে আস্তে আস্তে তিন-চার বা পাঁচ মাস অন্তর করতে হতো।'
এটাই হয়ত শেষবার! মনোজিৎকে এই সমস্যা নিয়ে আর আসতে হবে না হাসপাতালে, এখন এ আশাতেই বুক বাঁধছে তাঁর পরিবার।
আরও পড়ুন: মানবপাচার চক্রের মাধ্যমে বাংলায় রোহিঙ্গারা! NIA চার্জশিটে বিস্ফোরক দাবি