হিন্দোল দে, কলকাতা: RG কর কাণ্ডের আবহে যখন একের পর এক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে থ্রেট কালচারের অভিযোগ উঠেছে এই পরিস্থিতিতে পাটুলিতে (Patuli) একজন চিকিৎসকের বাড়ি তৈরির কাজে বাধা দিয়ে তোলাবাজির অভিযোগ উঠল এলাকার দুই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। ভাইরাল হল চিকিৎসকের নিযুক্ত বাড়ি তৈরির কনট্রাক্টরকে চাপ দিয়ে ফোন করার অডিও। যেখানে তাঁকে ডাক্তারবাবুকে হুমকি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। 


ভাইরাল হওয়া ওই অডিও ক্লিপ শোনা যাচ্ছে, চিকিৎসক নিযুক্ত কনট্রাক্টর বলছেন আমি যে টাকাটা ডাউনপেমেন্ট করেছি সেই টাকাটা তুলে নিতে পারি তাহলে আমি কিছু টাকা দেব। কিন্তু, আমি তার পজিশন পাচ্ছি না। এর উত্তরে ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে অভিযুক্ত একজন তৃণমূল কর্মীকে বলতে শোনা যায়, ডাক্তারবাবুকে চাপ দাও তাহলেই ঠিক টাকা বেরিয়ে আসবে। বলো ৬-৭ জন ছেলে আছে মিনিমাম ৭০ হাজার টাকার নিচে ওরা নামবে না। 


এই বিষয়ে পাটুলি থানায় ওই চিকিৎসকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই তৃণমূল কর্মীকে।  ওই দুই তৃণমূল কর্মী হল ক্রান্তি জানা ও পলাশ নস্কর। ধৃতরা কলকাতা পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার স্বরাজ মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। যদিও এই বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার স্বরাজ মণ্ডলের সঙ্গে বারবার ফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। 


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাটুলি থানার অন্তর্গত গড়িয়া পার্ক এলাকায় নিজের পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নেন এলাকার এক চিকিৎসক। এর জন্য তিনি স্থানীয় একজন কনট্রাক্টর প্রশান্ত দাসকে বরাত দেন। এরপর ওই কনট্রাক্টর পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করতেই তৃণমূল অফিসে ডেকে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ডাক্তারবাবুকে এক লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর-ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে কনট্রাক্টরের দরাদরিতে সেই টাকা কমে দাঁড়ায় ৭০ হাজারে। সেই টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কাজ আটকে রাখা হবে বলে হুমকি দেয় ক্রান্তি জানা ও পলাশ নস্কর। 


এপ্রসঙ্গ চিকিৎসক নিযুক্ত কনট্রাক্টর প্রশান্ত দাস বলেন,  টিএমসি পার্টির ছেলেরা ওয়ার্ড থেকে বাড়ি ভাঙা যেখানে চলছে সেখানে এসে আমাকে বলে তুমি ওয়ার্ড অফিসে এসো তোমাকে কাউন্সিলার ডাকছে। বলে তুমি কি জানো পুরসভার এখন নিয়ম হয়েছে বাড়ি ভাঙার ফলে যে রাবিশ বের হচ্ছে তা পুরসভাকে দিয়ে দিতে হবে। ক্রান্তি জানা বলে আমাদের পিছনে অনেক ছেলে আছে মিনিমাম এক লক্ষ টাকা দিতে হবে। এরপর ভাইরাল হয় কনট্রাক্টর প্রশান্ত দাসের সঙ্গে এক তৃণমূল কর্মীর ফোনে কথোপকথনের অডিও। তাতে এক তৃণমূল কর্মীকে বলতে শোনা যায়, ডাক্তারবাবুকে বলো যে পাড়ার ছেলেরা কাজ করলে ওরা প্রফিট করত এক লক্ষ টাকা। এখন অন্তত ৭০ হাজার টাকা দিতে হবে তাহলে কেউ কাজে আপত্তি করবে না, কেউ আটকাবে না। এর উত্তর প্রশান্তবাবু বলেন যে তিনি ডাক্তারবাবুকে সব কথা খুলে বললে তিনি বলেন, আমি ওদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে নেব।  এর উত্তর ফোনের উল্টো দিক থেকে তৃণমূল কর্মীকে বলতে শোনা যায় যে তাহলে আমাকে কাউন্সিলারের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে।


এপ্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তারক চক্রবর্তী বলেন, "ক্রান্তি জানা বা পলাশ নস্কর আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ নয়। এটা তো একটা ব্যাধি এই বিষয়ে আমি আর কী বলব। আমাদের দল তোলাবাজির সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নয়। প্রশাসন আইন অনুযায়ী এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।" 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।