শ্রীনগর: কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর একমাস কেটে গিয়েছে। এর মধ্যেও একাধিক ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের খবর উঠে এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠল ভারতীয় বায়ুসেনার অন্দরে। মহিলা ফ্লাইং অফিসার ধর্ষণের অভিযোগ তুললেন উইং কমান্ডারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। (Indian Air Force)
জম্মু ও কাশ্মীরের বদগাম থেকে এই অভিযোগ সামনে এসেছে। শ্রীনগরের বায়ুসেনা অভিযোগকারিণী এবং অভিযুক্ত, দু'জনই উপত্যকায় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে মোতায়েন রয়েছেন। বদগাম থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে ইতিমধ্যেই। গোটা ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়েছে, অভিযোগকারিণী এবং অভিযুক্ত, দু'জনই তদন্তে সহযোগিতা করছেন। (IAF Woman Flying Officer)
ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, "মামলার বিষয়ে অবগত রয়েছি আমরা। বদগামের স্থানীয় থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। শ্রীনগরে বায়ুসেনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা। সব পক্ষই তদন্তে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে।" অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, গত দু'বছর ধরে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন তিনি। যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি, মানসিক অত্যাচারও চালানো হচ্ছে তাঁর উপর।
অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বর্ষবরণ পালিত হচ্ছিল অফিসারদের মেসে। তিনি উপহার পেয়েছিল কি না জানতে চান সিনিয়র। উপহার পাননি জানাতে, অভিযুক্ত উইং কমান্ডার জানান, তাঁর ঘরে উপহার রাখা আছে। সেই মতো ঘরে যেতে বলা হয় তাঁকে। ওই ঘরে কেউ ছিল না। পরিবারের কথা জানতে চাইলে, উইং কমান্ডার জানান, তাঁরা অন্যত্র থাকেন। এর পর তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়।
ওই মহিলা ফ্লাইং অফিসার জানিয়েছেন, তাঁকে 'ওরাল সেক্স'-এ বাধ্য করা হয়। এর পর শ্লীলতাহানি করেন অভিযুক্ত। বার বার বারণ করেন তিনি। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। একটা সময় পর ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে, পালিয়ে আসেন ঘর থেকে। কিন্তু আবারও দেখা হবে বলে জানান ওই উইং কমান্ডার। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে, তাঁকে বারণ করা হয়। এর পর ফের তাঁর সঙ্গে একই আচরণ করেন অভিযুক্ত উইং কমান্ডার।
বিষয়টি নিয়ে দুই মহিলা অফিসারের দ্বারস্থ হন অভিযোগকারিণী। এর পর কর্নেল স্তরের এক আধিকারিক তদন্তের নির্দেশ দেন। জানুয়ারি মাসেই দু'বার মুখোমুখি বসিয়ে বয়ান নেওয়া হয় বলে দাবি অভিযোগকারিণীর। সেই সময় সিনিয়র আধিকারিকের উপস্থিত থাকায় আপত্তি জানান তিনি। ভুল বুঝতে পেরে তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় মাঝ পথে। এর পর অভ্যন্তরীণ কমিটির কাছে নতুন করে অভিযোগ জানান তিনি। বেশ কয়েক মাস পর নেড়েচেড়ে দেখা হয় সেটি।
অভিযোগকারিণীর বক্তব্য, "অবিবাহিত মেয়ে হিসেবে বায়ুসেনায় যোগ দিয়ে কী মানসিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না। স্টেশন কর্তৃপক্ষ পক্ষপাতিত্ব করছেন। অভিযুক্তকে আড়াল করা হচ্ছে। আইসি নিজের কাজ করছন না। অভিযুক্তকেই সমর্থন করছেন সকলে। এসব থেকে দূরে সরে যেতে ছুটি চেয়েছিলাম, তাও দেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং বাকিদের সঙ্গে মিশতে বাধ্য করা হচ্ছে আমাকে, যেন কিছু ঘটেনি। কর্তৃপক্ষের হাতে রোজ হেনস্থার শিকার হচ্ছি আমি।" তিনি বার বার বলা সত্ত্বেও ডাক্তারি পরীক্ষায় ঢিলেমি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা ফ্লাইং অফিসার। তাঁর দাবি, প্রত্যক্ষদর্শী নেই বলে অজুহাত দেখিয়ে মে মাসে তদন্দ বন্ধ করে দেয় অভ্যন্তরীণ কমিটি। যৌন নির্যাতন সকলের সামনে ঘটকে কী করে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তিনি কার সঙ্গে কথা বলছেন, কোথায় যাচ্ছেন, সবকিছুর উপর নজদারি চলছে বলে অভিযোগ। আপাতত বদগাম পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এর আগে, ২০২১ সালেও একই ঘটনা ঘটে। বায়ুসেনার এক মহিলা পাইলট হাইকোর্টে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ জানান। ফ্লাইট কমান্ডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তিনি।