শুভেন্দু ভট্টাচার্য ও পার্থপ্রতিম ঘোষ, তুফানগঞ্জ ও উত্তরকাশী : দিন যত গড়িয়েছে, ততই বাড়তে থেকেছে ভিড়। কোচবিহারের (Coochbehar) তুফানগঞ্জের বলরামপুর এলাকার একাধিক মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন তালুকারদের বাড়ির সামনে। সন্ধে গড়িয়ে উদ্ধারকারী দল যত সুড়ঙ্গে এগিয়ে গিয়েছে, ততই উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের প্রহর ক্রমশ বদলাতে থেকেছে সুখবরের প্রত্যাশায়। আর তারপর ঘড়ির কাঁটায় রাত ৮ টা বাজার পর থেকেই মানিক তালুকদারের বাড়িতে বাজতে শুরু করে উলু-শঙ্খধ্বনি।


খানিকটা পর যখন বাড়ির লোককে ফোন করে মানিক তালুকদার জানান 'আমি ভাল আছি', তারপরই কার্যত কান্নায় ভেঁঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী। আনন্দাশ্রু সামলে ওঠার খানিক পরেই হাসপাতাল থেকে পরিবারকে ভিডিও কল করেন বাংলার শ্রমিক। তখন নিজে কথা বলার পাশাপাশি উপস্থিত গ্রামবাসীদেরও 'ঘরের ছেলের' সুস্থ থাকার খুশির খবর ভাগ করে নেন তাঁর স্ত্রী।


গত ১২ নভেম্বর থেকে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে সিল্কিয়ারা-বারাকোট সুড়ঙ্গে (Uttarakhand Tunnel Rescue) ধসে আটকে ছিলেন ৪১ জন শ্রমিক। যাঁদের মধ্যে তিনজন বাংলার। কোচবিহারের মানিক তালুকদার ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। মাঝের ১৭ দিনের দীর্ঘ অপেক্ষার মাঝে চিন্তায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও কয়েকদিন কাটাতে হয়েছিল তাঁর স্ত্রীকে। অবশ্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেই খুশির খবরটা পেলেন তিনি। ভাগ করে নিলেন সবার সঙ্গে। যারপর নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে জানালেন, 'ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলাম, মাঝের দিনগুলোতে। এখন সুস্থ হয়ে ওঁর বাড়ি ফেরার অপেক্ষা। আশা করব, সুড়ঙ্গে যাঁরা আটকে ছিলেন, সকলেই সুস্থ অবস্থায় তাঁদের বাড়িতে ফিরে যান।'


যদিও গোটা পর্বের মাঝেই মানিক তালুকদারের ছেলের কথায় উসকে গিয়েছে রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক-বিতর্ক। তিনি বলেন, 'চাইব রাজ্যে আরও বেশি শিল্প তৈরি হোক। কাজের জন্য প্রায় ১৫ লক্ষ বাংলার লোককে বাইরে থাকতে হয়। আশা করব তেমনটা না হলে আশা করি এই ধরনের ঘটনাও কমবে।'


প্রায় ৪০০ ঘণ্টার দীর্ঘ উদ্ধারকাজের শেষে মঙ্গলবার সন্ধেয় শেষপর্যন্ত সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা-বারাকোট সুড়ঙ্গের (Uttarakhand Tunnel Rescue) মাঝে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩ জন ছিলেন বাংলার। তাঁদের মধ্যে ২ জনের বাড়ি হুগলির (Hooghly) পুরশুড়ায়। এই দুই যুবকের মধ্যে একজন হলেন পুরশুড়ার হরিণাখালি গ্রামের বাসিন্দা সৌভিক পাখিরা। অপরজন ছিলেন নিমডাঙ্গির বাসিন্দা জয়দেব প্রামাণিক। সঙ্গে ছিলেন কোচবিহারের বলরামপুরের মানিক তালুকদার। বাকিদের সঙ্গে উদ্ধার হয়েছেন তাঁরাও। পাশাপাশি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। তিনজনই সুস্থ রয়েছেন। 


আরও পড়ুন- যন্ত্র নয় ত্রাতা মানুষ, উদ্ধারকারীদের মুখে 'প্রাণ বাঁচিয়েছি এর থেকে খুশির কী হতে পারে'


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।