সন্দীপ সরকার, ঝিলম করঞ্জাই ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী: আর জি কর-কাণ্ডের পর থেকেই, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্য়াগের দাবিতে সরব ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনের চাপে সেই দাবি মানতে হয়েছে রাজ্য় সরকারকে। সূত্রের দাবি, মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে এনিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হয়। শেষে আন্দোলনকারীরা তাঁর রিজওয়ানুর কাণ্ডের সময়কার বক্তব্য় টেনে আনার পর, বিনীতকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেন মমতা। (Vineet Goyal)
প্রতিবাদের জয়। আন্দোলনের জয়। হার না মানা জেদের জয়। আর জি কর-কাণ্ডের পর পুলিশ-প্রশাসনের যে অংশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠেছিল, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের চাপে সেই অফিসারদের সরাতে বাধ্য় হলেন মুখ্য়মন্ত্রী, যাঁদের মধ্য়ে অন্য়তম কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত।(Mamata Banerjee)
সোমবার মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে, বিনীতের অপসারণ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ টানাপোড়েন চলে। সূত্রের দাবি, উত্তরে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, রিজওয়ানুর কাণ্ডের সময় আপনিই বলেছিলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের পদে রাখলে কি প্রমাণ লোপাট হবে না? ১১ সেপ্টেম্বর, ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন অনুষ্ঠানে মমতার এই বক্তব্য় দেখিয়েছিল এবিপি আনন্দ।
সেই সময় মমতা বিরোধী দলনেত্রী। মুখ্য়মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখন তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, কীভাবে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের পদে রেখে দিয়ে সুবিচার সম্ভব? সূত্রের দাবি, সোমবারের বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তাররা এই প্রসঙ্গ তোলার পর মমতা বিনীতকে সরাতে রাজি হন। যদিও কয়েক দিন আগেও মমতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, বিনীতকে সরাতে চান না তিনি। জানিয়ে দেন, নিজে পদত্যাগ করতে চেয়ে তাঁর কাছে আসেন বিনীত। কিন্তু সামনে পুজো। আইনশৃঙ্খলার জানা লোক লাগবে। 'একটু ধৈর্য ধরলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না' বলেও মন্তব্য করেন মমতা। সেই নিয়ে বিস্তর টানাপোড়েন চলছিল।
আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনায় ঘটনাস্থলে আইপিএস অফিসাররা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সাসপেন্ড হন দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার এবং ইন্সপেক্টরকে। আর জি করের খুন এবং ধর্ষণের ঘটনাতেও পুলিশ কমিশনার-সহ একাধিক আইপিএস অফিসার ঘটনাস্থলে যান। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন টালা থানার ওসি। তই উপরতলার লোকজনকে আড়াল করতে নীচুতলার পুলিশকে বলি করা হচ্ছে কি না, এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
প্রাক্তন পুলিশকর্তা অজয় মুখোপাধ্যায় বলেন, "সাবঅর্ডিনেট ব়্যাঙ্ক সফট টার্গেট হচ্ছে। প্রতিবাদ করতে পারবে না কারণ বদলির বিষয় আছে। নামতে পারে শাস্তির খাঁড়া। অনেকেই ভয়ে কাজ করেন। যা বলা হচ্ছে, সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। ভাঙচুর যেদিন হল, সেদিন শীর্ষ কর্তারা পরিস্থিতি দেখছিলেন বোঝাই যাচ্ছে। তাহলে তো সকলকেই সাসপেন্ড করতে হতো!"
মঙ্গলবার সকালে মমতার বাড়িতে যান বিনীত। বিকেলে পুলিশ কমিশনার হিসেবে শেষবারের মতো লালবাজার ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাত বলেন, "৩৮ দিনে তদন্ত প্রক্রিয়ার যে গতি-প্রকৃতি, তা দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলতে বাধ্য হন যে সিপি-কে সরিয়ে দিতে হবে।"