শিবাশিস মৌলিক, দীপক ঘোষ ও আশাবুল হোসেন, কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভাইরাল একটি চিঠি ঘিরে অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। যেখানে নবাগত বিজেপি নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেওয়া হয়েছে। সিবিআই-ইডির ভয় দেখিয়ে তৃণমূল নেতাদের ভাঙানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। চিঠির নিচে সায়ন্তন বসুর (Sayantan Basu) নাম উল্লেখ রয়েছে। চিঠিটি লেখা হয়েছে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে (JP Nadda) উদ্দেশ্য করে। তবে ওই ভাইরাল চিঠির (Viral Letter) সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ।
নাড্ডাকে লেখা চিঠিতে নাম সায়ন্তনের!
ভাইরাল ওই চিঠিতে ইংরেজিতে লেখা হয়েছে, 'পাঁচ-ছ'জন নবাগত নেতাদের হাতে সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে দল। ফের এমন পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সিবিআই-ইডি-কে এড়াতে আরও দলবদলুরা বিজেপি-তে এসে ওঠেন'। এ রকম চলতে থাকলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন তৃণমূল এবং সিপিএম-এর দ্বিমুখী লড়াইয় হয়ে উঠবে বলেও দাবি করা হয়েছে চিঠিতে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ওই চিঠিটি। চিঠিটি লেখা হয়েছে, বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার উদ্দেশে। চিঠির নিচে নাম রয়েছে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুর। চিঠির ছত্রে ছত্রে নবাগতদের, বিশেষত যাঁরা ২০১৯ থেকে ২০২১-এর মধ্যে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ঝরে পড়েছে ক্ষোভ।
এমনকি কিছু নেতা শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতেই অ্যাক্টিভ বলেও দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। তাহলে কি এই চিঠি বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুরই লেখা? চিঠির সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে, সায়ন্তন বলেন, "আমি অনেক চিঠিই দিয়েছি। কোন চিঠি নিয়ে বলছেন, বুঝতে পারছি না। এ নিয়ে বলার কিছু নেই।"
একদা বঙ্গ বিজেপি-র দাপুটে নেতা ছিলেন সায়ন্তন। জেলায় জেলায় তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণ বারবার বিতর্কও তৈরি করেছে। বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সায়ন্তন। লোকসভা নির্বাচনেও লড়েছেন দলের হয়ে। কিন্তু, বর্তমানে রাজ্য কমিটির কোনও পদেই নেই সায়ন্তন। বিজেপি-র অন্দরে কার্যতই কোণঠাসা তিনি।
আরও পড়ুন: Narendrapur Blast:'দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য', নরেন্দ্রপুরকাণ্ডে সরব শমীক, মুখ খুললেন ফিরহাদও
তাহলে কি দলে গুরুত্বহীন হয়ে পড়াতেই সায়ন্তন বসুর অভিমান? এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে বঙ্গ বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "যে লিখেছেন, যাঁকে লিখেছেন, তাঁকেই জিজ্ঞেস করুন। আমি তো বলত পারব না। পঞ্চায়েতের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে প্রচুর লোককে জায়গা ঠিক দেওয়া হয়েছে। এর পরেও যদি কেউ কাজ করতে চায়, করবে।"
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায়ের কথায়, "যে যার নিজেদের মত প্রকাশ করতেই পারে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে যদি চিঠি দিয়ে থাকে তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ব্যাপারটা বুঝবেন।"
তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কথা মুখে বললেও, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই চিঠি ঘিরে বিজেপি-তে স্পষ্টতই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। তাই কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, "যে চিঠি লিখেছেন, তাতে বাংলার মানুষ জানেন, উনি ওঁর চিন্তা ব্যক্ত করেছেন। দেখলাম বিজেপি-র বদলে বামেরা উঠে আসছে। এটা মোহভঙ্গ সিপিএম-এ এ ফিরছে। তবে আমি বলব মানুষ তৃণমূলে ফিরবেন। বিজেপির থেকে সিপিআইএম নয়, তৃণমূলে ফিরছেন।"
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভাইরাল চিঠি ঘিরে অস্বস্তি বিজেপি-তে
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে এই ভাইরাল চিঠিতে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির। এখন দেখার, এই চিঠির বয়ানকে আদৌ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও গুরুত্ব দেয় কিনা।"