প্রদ্যোৎ সরকার, নদিয়া: 'আমি চিনি গো, চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী...', রবি ঠাকুরের এই গান চিরস্মরণীয়। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চারুলতা সিনেমার প্রেক্ষাপটে গান অনন্তকাল ধরে বাঙালির মনে দাগ কেটেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের লেখা কিশোরে কুমারের কণ্ঠে সেই সুরেলা সংগীত আপামর বাঙালির মনে প্রেমের তরঙ্গে বইয়ে দিয়েছে অনন্তকাল।


এই প্রেমের টান মিলিয়েছে ব্রাজিল ও বাংলাকে। লাল টুকটুকে বেনারসীর সাজে ব্রাজিলিয়ান তরুণী বাঙালি বৌয়ের সাজে বিয়ে করলেন নবদ্বীপের গ্রামের বাঙালিবাবুকে। ভালোবাসায় মিলমিশ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ ও এশিয়া মহাদেশ। 


প্রেমের টানেই সুদূর ব্রাজিলের সাও পাউলো থেকে চৈতন্য ভূমি তীর্থনগরী নবদ্বীপে ছুটে এসেছেন ব্রাজিলিয়ান তরুণী। সম্পূর্ণ বাঙ্গালী রীতিনীতি মেনে বাঙালি বধূর সাজে দু'চোখ পান পাতা দিয়ে ঢেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ব্রাজিলিয়ান তরুণী। 


গান্ধর্ব মতে শুভদৃষ্টি থেকে শুরু করে হস্তবন্ধন-মালাবদল থেকে সিঁদুর দান সবটাই হল। যদিও মাঝেমধ্যেই ভাষা সমস্যার জন্য থমকে যেতে হয়েছিল পুরোহিত থেকে শুরু করে নববধূকে। ব্রাজিলীয় তরুণী ম্যানুয়েল আলভেস দ্যা সিলভা বেশ লাজুক স্বভাবের, স্বল্প-বাংলা জানা তরুণীর গলায় ভেসে আশা শব্দ যেন শ্রুতিমধুর শব্দবিহ্বল, নবদ্বীপের পাত্র কার্তিক মণ্ডলের হাতে সিঁদুর পরানোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয় গোটা প্রক্রিয়া। দু'জনের আলাপ প্রায় ছ'বছর আগে থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ, অতঃপর নম্বর আদান-প্রদান। তারপর দীর্ঘ প্রেম, যার পরিণতি পেল গতকাল রাতে। বাড়ির উঠোন জুড়ে তৈরি হয়েছিল প্যান্ডেল। পাত্র কার্তিক সুরাটে একটি অ্যালোপ্যাথিক ক্লিনিক চালান। 


এদিন দেখা গেল বাড়িতে লোকজন এবং আত্মীয় স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে গল্পগুজব করছেন ওই তরুণী। এই গল্পের মাধ্যমে এদেশের ভাষা ও আদব কায়দা বোঝবার চেষ্টাও করছেন।  


তবে কার্তিকের ভাগ্নে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সায়ন ঘোষ মামীকে যত্ন সহকারে বাংলা শেখাচ্ছেন নিয়ম করে। পাত্র কার্তিক বিভিন্নভাবে তার জীবন সঙ্গিনীকে মোবাইলে বাংলা থেকে পর্তুগিজ ভাষায় বদল করে দিচ্ছিল। তবুও পুরোহিতের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় মন্ত্র উচ্চারণ করলেন ব্রাজিলিয়ান তরুণী। 


'আমি ব্রাজিল থেকে ভারতে এসেছেন তারই মধ্যে কিছু কিছু বাংলাও শিখেছে। বিয়ে করে খুব ভালো লাগছে,' এ কথাটিও জানাতে ভুললেন না নববধূ ম্যানুয়েলা আলভেস দ্যা সিলভা। ছেলের মুখেও চওড়া হাসি। 


মাজদিয়া-পানশিলা পঞ্চায়েতের ফরেস্টডাঙা মাঝের পাড়ার চিকিৎসক দিলীপ মন্ডলের একমাত্র ছেলে কার্তিক। 


কার্তিক মন্ডল বলেন, 'আমি নিজে সুরাটে দুবছর যাবৎ অ্যালোপ্যাথিক ক্লিনিক চালাচ্ছি। ৬ বছর ধরে পরিচয় ব্রাজিলের মানোয়েলা এলিভেস দা  সিলভা (Manoela Alvas da Silva) অর্থাৎ মানুর সঙ্গে। ও এমবিএ করে একাউন্টিং - এর কাজ করতো। ওর তো ভাষা পর্তুগিজ। আমি অ্যাপের মাধ্যমে কথা বলতাম। পরবর্তীতে ওর বাবা মা ভাই বোন,পরিবারের সবার সঙ্গে পরিচয় হয়।' সঙ্গে জোড়েন, 'তারপর ওকে ভালবাসার কথা বলি। একমাস পরও মত দেয়। দেড় মাস আগে ও সুরাটে এসেছে। এক সপ্তাহ ধরে এই বাড়িতে এসেছে আসার পরে অনেক বাংলা বুঝতে শিখেছে।  শুক্রবার ওকে সম্প্রদান করে আমার কাকা, জ্যাঠারা।'