কলকাতা: কর্মসংস্থান নিয়ে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নেতাজি ইন্ডোর স্টিডিয়ামে আয়োজিত সভায় সরব হলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র প্রাপ্য টাকা আটকে রাখা সত্ত্বেও, রাজ্যে উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান আটকে যায়নি। বরং গত কয়েক বছরে বাংলায় যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হয়েছে, তা অন্যত্র হয়নি বলে এদিন দাবি করেন  মুখ্যমন্ত্রী। (Mamata Banerjee)


বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে মমতা বলেন, "যাঁরা বলেন শিল্প সম্মেলনে কিছুই হয় না...বলে রাখি, ছ'টা শিল্প সম্মেলন থেকে ১৫ লক্ষ কোটির মতো প্রকল্প এসেছে। এর মধ্যে ১০ লক্ষ কোটি খরচ হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বাকি প্রক্রিয়াগত ভাবে আটকে রয়েছে। একটু জেনে কথা বলুন। কাল সপ্তম শিল্প সম্মেলন হয়েছে। অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছি। ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৮৮ কোটির বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।" (Mamata Banerjee on Employment)


 জিএসডিপি এবং রাজস্বও অভাবনীয় হারে বেড়েছে বলে দাবি করেন মমতা। তিনি জানান, রাজ্যের জিএসডিপি চার গুণ বেড়েছে। চার গুণ বেড়েছে রাজস্বও। কেন্দ্র টাকা না দেওয়া সত্ত্বেও বেড়েছে। বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ৩.৮ শতাংশ। বাজেট বাবদ খরচ ৯ গুণ বেড়েছে। বিনিয়োগ থেকে বাংলায় ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও জানান মমতা। 


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: 'ক্যাশলেস প্রক্রিয়ায় অর্থনীতির উন্নয়ন হয় না', মমতার নিশানায় ডিজিটাল ইন্ডিয়া!


কর্মসংস্থানে ছোট-মাঝারি-ক্ষুদ্রশিল্পকে এগিয়ে রাখেন মমতা। জানান, শুধুমাত্র MSME থেকেই ১ কোটি ৩৬ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। বিরোধীরা যে মিথ্যে রটিয়ে বেড়ায়, তার মোকাবিলা করতে মুখ্যসচিবকে হোয়াইট পেপার তৈরির কথাও জানান তিনি। মমতা জানান, রাজ্যে ছোট-মাঝারি-ক্ষুদ্রশিল্পের ৯০০ ইউনিট রয়েছে। নতুন ক্লাস্টার তৈরি হয়েছে ৬০২টি। 


এর পরই সিপিএম-কে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, "সিপিএম-এর কথা বলা মানায়? ৩৪ বছরে ৪৮টি ক্লাস্টার করেছিল ওরা। ১১ বছরে আমরা ৬০২ করেছি।  রাজনৈতিক ভাবে ওদের কান মুলে দেওয়া উচিত। মিথ্যে কথা বলার একটা সীমা থাকে।"


তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও বাংলায় যথেষ্ট কর্মসংস্থান হয়েছে বলে দাবি করেন মমতা। জানান, আগে তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চাকরি করতে ছেলেমেয়েরা বেঙ্গালুরু চলে যেত। এখন বাংলা অনেক এগিয়ে রয়েছে। এখানে ২,৮০০ তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায় ২ লক্ষের বেশি কর্মী রয়েছেন। টিসিএস, উইপ্রো, কগনিজ্যান্ট, এরিকসন, ক্যাপসেজিমিনির মতো সংস্থা রয়েছে রাজ্যে। বানতলা লেদাক কমপ্লেক্সে উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ুর একাধিক সংস্থা রয়েছে। সেখানে ৫ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আগামী দিনে আরও ৫ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলে দাবি করেন মমতা।


এদিন মমতা আরও জানান, আসানসোল-দুর্গাপুরে শেল গ্যাসে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। সেখানেও কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। দেউচা-পাঁচামি হলে বীরভূম, বর্ধমান,পুরুলিয়ার ১ লক্ষ মানুষের চাকরি হবে। এর পাশাপাশি আঘামী ১০০ বছর কয়লার অভাব থাকবে না বলেও দাবি করেন। মমতা জানান, রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। বিনিয়োগ হচ্ছে ৭২০০০ কোটি টাকা। পাঁচটা অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তোলা হচ্ছে, ডানকুনি-রঘুনাথপুর, জানকুনি-তাজপুর, ডানকুনি-কল্যাণী, ডানকুনি-দুর্গাপুর, দুর্গাপুর-কোচবিহার। মমতার কথায়, "কর্মসংস্থানের ছড়াছড়ি হয়ে যাবে।  বাড়ি তৈরি করতেও সময় লাগে। আমাদের সব রেডি আছে। যাঁরা বিনিয়োগ করতে চান, চলে আসুন।" আলিপুরদুয়ার-জলপাইগুড়িতে পাট্টা তৈরি হয়ে গিয়েছে, দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিকেও সমীক্ষা শুরু হয়েছে বলে জানান।