কলকাতা : রাজ্যের চার পুরসভা আসানসোল, বিধাননগর, চন্দননগর ও শিলিগুড়ির ভোটে ঘাসফুল ঝড়। বিরোধীদের বহু পিছনে ফেলে চারটি পুরসভাতেই ক্ষমতা দখল করতে চলেছে তৃণমূল। এরইমধ্যে চন্দননগর ও বিধাননগর পুরভোটে বিজেপিকে পিছনে ফেলে ভোট শতাংশের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বামফ্রন্ট। শিলিগুড়ি ও আসানসোলে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও তাদের থেকে খুব বেশি দূরে নেই বামফ্রন্ট। এতদিন রাজ্য রাজনীতির বিরোধী রাজনীতির ফোকাস ছিল বিজেপির দিকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম বা কংগ্রেস কোনও আসন পায়নি। কিন্তু বিজেপি ৭৭ আসন পেয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে যে ভোট হয়েছে, তাতে বিরোধী পরিসরের ক্ষেত্রে বিজেপির ক্রমশ পিছু হঠার চিত্র ফুটে উঠছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বিরোধী রাজনীতির ভরকেন্দ্র কি ফের বামফ্রন্টের দিকে যাচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বিধাননগরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামফ্রন্ট। অথচ বিধানসভা ভোটের ফলে নিরিখে এখানে দ্বিতীয় ছিল বিজেপি। বিধাননগর পুরভোটে এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৭৩.৮২ শতাংশ। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৮.৩৫ শতাংশ ভোট। বামফ্রন্ট পেয়েছে ১০.৬৬ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ, প্রাপ্ত ভোটের হারের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে বামফ্রন্ট। কংগ্রেস পেয়েছে ৩.৪৯ শতাংশ ভোট।
আসানসোল পুরসভা অঞ্চলে দুটি বিধানসভা আসন দখলে রয়েছে বিজেপির। কিন্তু পুরভোটে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ১৫.৯০ শতাংশ। এক্ষেত্রে তারা দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও খুব কাছেই রয়েছে বামফ্রন্ট। তাদের প্রাপ্ত ভোট প্রায় ১২ শতাংশ। ২ শতাংশ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে কংগ্রেস।
শিলিগুড়ি পুরভোটে এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৪৮.১৪ শতাংশ। চার পুরসভার মধ্যে শিলিগুড়িতেই তৃণমূলকে কিছুটা লড়াই দিতে পেরেছে বিরোধীরা। ২৩.৮৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে শিলিগুড়ি বিধানসভা আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। বিধানসভা ভোটের ফলে নিরিখে অনেক ওয়ার্ডেই এগিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু পুরভোটে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার সেই নিরিখে অনেকটাই কমে গিয়েছে। অন্যদিকে, বামফ্রন্ট তৃতীয় স্থানে থাকলেও প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বিজেপির থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই বামফ্রন্ট। এখনও পর্যন্ত তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ১৭.১৯ শতাংশ। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ৪.৬৪ শতাংশ।
এর আগে কলকাতা পুরসভার ভোটেও বিজেপিকে পিছনে ফেলে প্রাপ্ত ভোটের হারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বামফ্রন্ট।
বিরোধী রাজনীতির অভিমুখ বামফ্রন্টের দিকে ঘুরে যাচ্ছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিজেপি-সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে একটা বোঝাপড়া আছে। ওরা নিজেদের মতো করে কখনও এককে, কখনও অন্যকে ভোট দেয়। এক্ষেত্রে জগাই-মাধাই-গদাই থিওরি নিয়ে ওরা চলে। আর কেউ না কেউ তো দ্বিতীয় হবে, তৃতীয় হবে। আমরা আমাদেরটা নিয়ে চিন্তিত। দ্বিতীয় স্থানে কে উঠে এল, তা নিয়ে কিছু যায় আসে না।
২১-র বিধানসভা নির্বাচনে এই চার পুরসভায় অবস্থান একেবারেই ভালো ছিল না বামেদের। কিন্তু চার পুরসভাতেই পুরভোটে বামেদের শক্তিবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।