কলকাতা: জেলায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের (Civic Volunteers) দিয়ে স্কুলে পড়ানোর সিদ্ধান্তে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। শিক্ষক হিসেবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের যোগ্যতা নিয়ে তাতে যেমন প্রশ্ন ওঠে, তেমনই অতীতে তাদের ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কও জেগে ওঠে।  সেই আবহেই রাজ্য পুলিশের তরফে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে সার্কুলার জারি করা হল, যাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনও দায়িত্বপূর্ণ কাজ সিভিক ভলান্টিয়ারদের দেওয়া যাবে না (West Bengal Police)। 


শুক্রবার সার্কুলার জারি করে রাজ্য পুলিশ


২৯ মার্চের মধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে গাইডলাইন তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।  সেই মতো শুক্রবার সার্কুলার জারি করে রাজ্য পুলিশ। তাতে হাইকোর্টের নির্দেশ মাফিক কোন কোন কাজে সিভিক ভলান্টিয়ারকে ব্যবহার করা যাবে, সেই সম্পর্কিত তথ্য স্পষ্ট নথিবদ্ধ করে দেওয়া হল (WB Police)। 


ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুলিশকে সহযোগিতা করবেন সিভিক ভলান্টিয়ার। পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসবে ভিড় সামলাতে, বেআইনি পার্কিং রুখতে এবং মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুলিশকে সাহায্যকারীর ভূমিকায় থাকবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। তবে নির্দেশিকায় যে বিষয়টি সবচেয়ে নজর কেড়েছে, তা হল, আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনও দায়িত্বপূর্ণ কাজ সিভিক ভলান্টিয়ারদের দেওয়া যাবে না। একেবারে স্পষ্ট ভাষায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


আরও পড়ুন: Sujan Chakraborty: 'পরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশ করুন', স্ত্রীর চাকরি-বিতর্কে পাল্টা দাবি সুজনের


সম্প্রতি জেলা পুলিশের তরফে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় সিভঙিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে প্রাথমিক স্কুলে পড়ানোর ঘোষণা হয়। সেই ঘোষণায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয় রাজ্য জুড়ে। রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দেন, তাঁর শিক্ষা দফতর থেকে এমন কোনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। শিক্ষা দফতর যেখানে এমন অনুমোদন দেয়নি, পুলিশ এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় কী করে, ওঠে প্রশ্ন। তাতে শেষ মেশ সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে স্কুলে পড়ানোর ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।


তাতেও থামেনি বিতর্ক। কারণ অতীতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে বার বার বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কখনও অধিকার না থাকা সত্ত্বেও লাঠিচার্জ, কখনও বুকে পা তুলে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময়, সিভিক ভলান্টিয়ারের সামনে এসেছে বিরুদ্ধে নানা ধরনের এক্তিয়ার বর্হিভূত কাজ এবং চাঞ্চল্য়কর ঘটনায় জড়িত থাকার ভয়ঙ্কর অভিযোগও।


রাজ্য পুলিশে বর্তমানে ১ লক্ষ ৭ হাজার ১৫ জন সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন। কলকাতা পুলিশ এলাকায় রয়েছেন ৬ হাজার ৯৩২ জন। ২০১২ সালে চুক্তিভিত্তিক এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা হয়। সিভিক ভলান্টিয়ারদের ন্যূনতম শিক্ষা যোগ্যতা আগে ছিল মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। পরে তা আরও কমিয়ে অষ্টম শ্রেণি করা হয়। সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগে নেওয়া হয় না কোনও পরীক্ষাও। 


রাজ্য পুলিশে বর্তমানে ১ লক্ষ ৭ হাজার ১৫ জন সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন


বর্তমানে, সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেতন ৯ হাজার টাকা। মূলত, কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান আছে এরকম সিভিক ভলান্টিয়ারা থানায় ডেটা এন্ট্রির কাজ করেন। সার্জেন্টদের সহযোগিতায় রাস্তায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ, লাইন সামলানো এবং যান নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন সিভিক ভলান্টিয়ারা। থানাতেও মোতায়েন থাকেন। প্রয়োজনে, তাঁরা পুলিশ অফিসারদের সহযোগিতা করেন। নিয়ম অনুযায়ী, সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাছে কোনও অস্ত্র থাকে না। তাঁদের কাছে লাঠি থাকারও কথা নয়। সম্প্রতি পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে প্রশিক্ষণের পর, কলকাতা পুলিশ এলাকায় ফিল্ড পোস্টিং দেওয়া হয় সিভিক ভলান্টিয়ারদের।