বিশ্বজিৎ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: চাকরি (Job) দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে পরিচারিকার কাজ করিয়েছেন। আদিবাসী বলে করেছেন কটূক্তি। হুমায়ুন কবীরের (Humayun Kabir) বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার এক তরুণীর। মানতে নারাজ রাজ্যের করিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী।


চাকরি দেওয়ার নাম করে চেয়েছিলেন ৫ লক্ষ টাকা। ২ লক্ষ টাকা নিয়েও কাজ না দিয়ে পরিচারিকার কাজ করিয়েছেন। আদিবাসী বলে কটূক্তি করতেও ছাড়েননি। রাজ্যের করিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার এক তরুণী। 


অভিযোগকারিণী সবিতা লায়েকের দাবি, চাকরি দেওয়ার নাম করে মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর তাঁকে কলকাতায় ডেকে পাঠান। কিন্তু কাজ দেওয়ার বদলে আড়াই মাস ধরে তাঁকে পরিচারিকার কাজ করানো হয়েছে। অভিযোগকারিণী সবিতা লায়েক বলেন, উনি আমাকে অফিসের মুখ দেখাননি, কিছুই করেননি। বাড়িতেই আমাকে ঝি-চাকরের কাজ করিয়েছে। বাড়ির সমস্ত কাজ। ঘর মোছা থেকে বাথরুম পরিষ্কার থেকে কুকুর বাচ্চা রেখেছিলেন। তার পটি পরিষ্কার থেকে সবকিছু এ টু জেড। ওনার মেয়ের জন্যও কাজ করিয়েছেন। 


চাকরি দেওয়ার জন্য হুমায়ুন কবীর টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ তরুণীর। অভিযোগকারিণীর কথায়, কাজের সূত্রে ওনারা ৫ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। আমি তো দিতে পারিনি। আমার বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। উনি ঘর করার জন্য টাকা রেখেছিলেন। ২ লাখ টাকা মতো। ২ লাখ টাকা ওনাকে দিয়েছেন।  


আরও পড়ুন, তাজমহল আসলে তেজো মহালয় মন্দির! বিতর্ক উস্কে মামলা দায়ের যোগীরাজ্যে


কাজ তো মেলেনিই উল্টে তাঁকে কটূক্তি করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, "একদিন উনি বোতাম সেলাই করতে বলেন। আমি বলি আমি এটা জানি না। উনি একজন মন্ত্রী হয়ে বললেন, তুই কি রাজার বাড়ি থেকে এসেছিস নাকি? আদিবাসী ছোট জাত। জঙ্গলে থাকা লোক এ কী চাকরি করবে। এর জঙ্গলে থাকা দরকার। ওনার স্ত্রীও আমাকে গালাগালি করেছেন। তারপর বলেছে এখানে তোর কোনও আশ্রয় নেই। তারপরের দিন ঘাড় ধাক্কা মেরে বের করে দিয়েছে ওনার বাড়ি থেকে।" 


সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। পাল্টা জবাব দিয়েছে পদ্ম শিবির। রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর বলেন, "মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। বিজেপি প্রোপাগোন্ডা তৈরি করছে। মেয়েটি শীঘ্রই কাজে যোগদান করবে। সে স্বেচ্ছায় কাজ ছেড়ে চলে এসেছে। ওকে দিয়ে কোনও কাজ করানো হয়নি। ও যেদিন জয়েন করবে, আমরা জয়েন কোরিয়ে দেবো। এটা একটা রাজনৈতিক চক্রান্ত বিজেপি এর মধ্যে রয়েছে। উনার কিছু এভিডেন্স আছে আমার কাছে এগুলো দেখালে এক মিনিটের মধ্যে বুঝতে পারবেন এটা মিথ্যে অভিযোগ।" 


বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তন্ময় দাস বলেন, "তৃণমূলের মন্ত্রী হুমায়ুন কবির নিজের দোষ ঢাকার জন্য, নিজের গায়ে যে কাদা লেগেছে সেই কাদা পরিষ্কার করার জন্য বিজেপিকে দোষারোপ করছে। দলিত সম্প্রদায়ের মহিলা তাকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ির চাকরানির কাজ করিয়েছে। বাথরুম পরিষ্কার থেকে শুরু করে জামা প্যান্ট সেলাই সবকিছু করিয়েছে। আজকে সেই মহিলা যখন বুঝতে পেরেছে। তাকে দিনের পর দিন ঠকানো হচ্ছে। তখন তিনি মন্ত্রীর নামে এফআইআর করেছেন। এই ঘটনার সাথে বিজেপি কোন ভাবে জড়িত নয় বা যুক্ত নয়। মন্ত্রীর যাতে উপযুক্ত শাস্তি হয়।" 


তরুণীর দাবি, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে ফেরার ১০ দিনের মাথায় তাঁর কাছে একটি ইস্তফাপত্র আসে। যেখানে বলা হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন। এই নিয়ে রাজভবন, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও ডেবরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তরুণী।