দীপক ঘোষ, অনির্বাণ বিশ্বাস, রঞ্জিত হালদার, কলকাতা: এবার আর নমো নমো করে নয়, জাঁকজমক করেই দুর্গাপুজোর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য বিজেপি। যে পূজো ২০২০-তে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, একুশের ভোটের পর সেই উৎসাহে আক্ষরিক অর্থেই ভাটা পড়েছিল।এবার আবার নতুন উদ্য়মে দুর্গাপুজো করতে চলেছে গেরুয়া শিবির। (BJP-Durga Puja)


২০২০ সালে ইস্টার্ন জোনাল কালচারাল সেন্টার বা EZCC-তে মহাসমারোহে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিল বিজেপি। কিন্তু ২০২১ সালের ভোটে যাবতীয় প্রত্যাশায় ধাক্কা লাগার পর, পুজো নিয়ে উৎসাহে ভাটা পড়ে যায়। গত বছরও কার্যত নমো নমো করে দুর্গাপুজার আয়োজন করা হয় গেরুয়া শিবিরের তরফে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে ধরাশায়ী হলেও, এবার জাঁকজমক করে দুর্গাপুজো করতে চায় রাজ্য বিজেপি। (West Bengal BJP)


বিজেপির সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে আবার ধুমধাম করে পূজার আয়োজন হচ্ছে এবছর। বিজেপি নেত্রী পাপিয়া অধিকারীর কথায়, "কাজ যখন একটা শুরু হয়েছে, শুদ্ধভাবে, পবিত্রভাবে করতে হবে।" এ নিয়ে বিজেপি-কে কটাক্ষ করেছেন সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, "সর্বজনীন থেকে তৃণমূল দুর্গাপুজোকে দাদা-দিদির পুজোতে নিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি সেটাকে দলের পুজোতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এটা দুর্গাপুজোর উৎসবের যে মনোভাব, তাকে খারিজ করা হচ্ছে। এটা বাংলার সর্বজনীন মনোভাবকে খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে এখন।" সুজনের দাবি, তৃণমূল দুর্গাপুজো ক্লাবকে পুজো দিচ্ছে। বিজেপি-ও ভাবছে, ওই পথে হেঁটে যদি কিছু হয়।


আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: 'হিন্দু ভোট বাড়লেই '২৬-এ মমতা প্রাক্তন, ভাইপো জেলে', সুকান্তর কড়া বার্তার পরও অনড় শুভেন্দু

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ফল সামনে আসার পর এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে, বাঙালির মন জয় করতে দুর্গাপুজো আবেগকে কাজে লাগাতে নামে বিজেপি। দিল্লিতে বসে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের Eastern Zonal Cultural Centre বা EZCC-তে সেই দুর্গাপুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ উত্‍সবের সঙ্গে মিশে গিয়ে, ভোটের আগে জনসংযোগে জোর দিতেই, ওই পুজোর আয়োজন করেছিল বলে সেই সময় জোর চর্চা ছিল। কিন্তু সেবছপ বিধানসভা ভোটে বিজেপির বঙ্গ জয়ের স্বপ্ন ধাক্কা খায়। সেই সঙ্গে পুজো নিয়ে তাদের উৎসাহেও কার্যত ভাটা পড়ে।

এমন অবস্থায় দলের অন্দরেই কথা ওঠে যে, একবার পুজো করলে, পর পর তিনবার পুজো করতেই হয়। সেই মতো, ২০২০-র পরের দু'বছর অর্থাৎ, ২০২১ ও ২০২২-এ EZCC তেই পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। এবার ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে, বাঙালির প্রাণের উৎসব, দুর্গাপুজোর আবেগকে হাতিয়ার করে ফের পশ্চিমবঙ্গবাসীর মন ছোঁয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। জোরকদমে চলছে তার প্রস্তুতি। বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই সময় পুজোর গুরুত্ব অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গের পুরনো সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে, বাঙালি-বাঙালিয়ানাকে বাঁচিয়ে রাখতে, সনাতনকে বাঁচিয়ে রাখতে, হিন্দুদের আবেগকে বাঁচিয়ে রাখতে, বিজেপি-র কার্যকতারা তো পুজো করতে চাইবেনই! যে অপসংস্কৃতি, শরিয়তি সংস্কৃতিকে যে প্রচার করার চেষ্টা চলছে, তার বিরুদ্ধে এই উদ্য়োগ।"


যদিও তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার কটাক্ষ করেন বিজেপি-কে। তিনি বলেন, "এই দুর্গাপুজোর মধ্যে অনেক কেলেঙ্কারি লুকিয়ে রয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া যায়, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের জায়গায় পুজো করা যায় না। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি জায়গায় অনুমতি দেওয়া যায় না। কোন অধিকারে এই কাজ করছে, আগামী দিনে প্রশ্ন তুলব আমরা।" এবছর সল্টলেকের EZCC তে সংস্কারের কাজ চলছে। ফলে সেখানে সম্ভব না হলে, উল্টো দিকের ঐক্যতানেই পুজোর আয়োজন করা হবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।