কলকাতা: বিরাট লক্ষ্যমাত্রা রাখা হলেও, বৈতরণী পার হয়নি কোনও বার। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে পৌরসভা নির্বাচন, পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচন, বাংলায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বিজেপি। সেই নিয়ে দলের অন্দর থেকে যখন ক্ষোভ, অসন্তোষ উঠে আসছে, ঠিক সেই সময়ই রাজ্য বিজেপি-র বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে (Sukanta Majumdar) নরেন্দ্র মোদি সরকারে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সুকান্তর জায়গায় এবার রাজ্য বিজেপি-র রাশ কার হাতে উঠবে সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। (West Bengal BJP President)


২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসন পারের লক্ষ্য়মাত্রা বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। এবারের লোকসভা নির্বাচনেও ৩০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্ত লক্ষ্যপূরণ তো দূর বরং, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসনও খুইয়েছে রাজ্য বিজেপি। ৪ জুন নির্বাচনী ফল ঘোষণার পর থেকেই তাই সেই নিয়ে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে। সুকান্তকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যেও বাংলায় নেতৃত্ব বদলের উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, উঠছে প্রশ্ন। (Dilip Ghosh vs Suvendu Adhikari)


বিজেপি-র দলীয় নিয়ম অনুযায়ী, একসঙ্গে দুই পদে থাকা যায় না। তাই কেন্দ্রে মন্ত্রী হলে, রাজ্য সভাপতির পদে সুকান্তর না থাকাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে  সুকান্তর বিকল্প কে হবেন, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরেও। এর আগে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে ৩ থেকে ৭৭ আসনে তুলে আনার পরও দিলীপ ঘোষকে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেবারও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছিল। তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে এসে ওঠা শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্তদের দাপটের সামনে রাজ্য বিজেপি-তে দিলীপ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগও ওঠে। সেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচন। নির্বাচনের ঠিক আগে কেন্দ্র পাল্টে দিয়ে দিলীপকে মেদিনীপুর থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 


হাতের তালুর মতো চেনা মেদিনীপুর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন দিলীপ। সেই সময় বিশেষ ওজর আপত্তি না করলেও, নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দিলীপ। কলকাঠি নেড়ে তাঁর কেন্দ্র বদল করা হয়েছিল, ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হারানো হয়েছে বলে দাবি করেন। সরাসরি রাজ্য নেতৃত্বের দিকে আঙুল তোলেন তিনি। এমনকি দলের অন্দরে যে নব্য এবং আদি বিজেপি দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেদিকেও নিশানা করেন দিলীপ। তিল তিল করে রাজ্যে বিজেপি-কে দাঁড় করানো নেতারা যে এখন কোণঠাসা, তা বুঝিয়ে দেন। পুরনোদের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেন দলকে। 


তাহলে কি রাজ্য বিজেপি-র নেতৃত্বে আবার প্রত্যাবর্তন ঘটবে দিলীপের? নাকি বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারীর হাতেই এবার রাজ্য বিজেপি-র রাশ উঠবে? জল্পনা শুরু হয়েছে সকাল থেকেই। দিলীপ যদি রাজ্যে পদ্ম ফুটিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে গেরুয়া শিবিরকে আগ্রাসী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার শ্রেয় শুভেন্দুকে দেন অনেকে। কিন্তু শুভেন্দুকে নিয়ে বিজেপি-র  আদি-নব্য দ্বন্দ্বের অন্যতম চরিত্র। বিজেপি-র অন্দরেই তাঁকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। সেক্ষেত্রে একেবারে নতুন কাউকে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। 



বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী দু'মাসের মধ্যে রাজ্য বিজেপি-র নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা হবে। সেই নিয়ে দিলীপ, শুভেন্দু বা সুকান্ত এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি যদিও। তবে তাঁদের অনুগামীদের তরফে জোর প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। 'শুভেন্দুদার সৈনিক' নামের একটি ফেসবুক পেজের পোস্টে লেখা হয়, '২০২১ সালে ২০০ আসন জিতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন দিলীপবাবু। লোকসভায় নিজের ভোট ধরে রাখতে পারেননি। ২০১৯ সালে ১৮ আসনে জেতার কৃতিত্ব নিলে, ২০২১ সালে সরকার গঠন করতে না পারার দায়ও দিলীপের। একার কৃতিত্বে যদি ১৮টি আসনে দলকে জেতাতে পারেন, তাহলে দুর্গাপুরের মতো জেলা আসনে হেরে গেলেন কেন'? 



অন্য দিকে, ফেসবুকে 'দিলীপদার সৈনিক' নামের একটি পেজ রয়েছে, যেখান থেকে দিলীপকে রাজ্য সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনার দাবি তোলা হয়েছে। ওই পেজের একটি পোস্টে লেখা হয়, 'দিলীপ ঘোষ বা সুকান্ত মজুমদারকে ক্যামেরায় কাগজে মুড়িয়ে টাকা নিতে দেখেছেন? এঁদের নাম কোনও চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে? সারদা-নারদে অভিয়ুক্ত গদ্দারদের তালিকা দেখে নেবেন'। 'মেরুদণ্ডহীন, দলবদলুদের বিজেপি-র মুখ বানানো যাবে না' বলেও লেখা হয় ওই পোস্টে। সব মিলিয়ে তরজা চরমে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী অবস্থান নেন, সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।


আরও পড়ুন: Sukanta Majumdar: প্রত্যাশা জাগিয়েও বাংলায় ধরাশায়ী BJP, মন্ত্রিত্ব পুরস্কার না শাস্তি? মুখ খুললেন সুকান্ত