সন্দীপ সরকার, ঝিলম করঞ্জাই ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: বাংলায় (West Bengal) বাড়ছে করোনা (Coronavirus)। ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গিও (Dengue)। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (Calcutta Medical College) হস্টেলে আক্রান্ত ৪ পড়ুয়া। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের কয়েকজন চিকিৎসক-অধ্যাপকও সংক্রমণের কবলে। অন্যদিকে, চলতি বছরে মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) ডেঙ্গিতে প্রথম মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির।   


কী পরিস্থিতি রাজ্যের? 


বাংলায় রোগের জোড়া ফলা। একদিকে, করোনা হু হু করে বাড়ছে। উল্টোদিকে, বর্ষার শুরুতে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি। চলতি বছরে মুর্শিদাবাদ জেলায় ডেঙ্গিতে প্রথম মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কায় একের পর এক চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেসামাল হয়েছিল স্বাস্থ্য পরিষেবা। 


২ বছর পরে ফের সেই আতঙ্ক ফিরিয়ে, করোনা থাবা বসিয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল ও আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে। সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে ৪ জন পড়ুয়া করোনা আক্রান্ত। তাঁদের ভর্তি করা হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যালের আরও কয়েকজন পড়ুয়ার করোনার উপসর্গ আছে। তাঁদের হস্টেলেই কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজেও বেশ কয়েকজন অধ্যাপক-চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত বলে সূত্রের খবর।


রাজ্যের করোনা পরিসংখ্যান


গত কয়েকদিনে রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা। বুধবার রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৯৫, বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যাটাই এক লাফে বেড়ে হয় ৭৪৫। আর শুক্রবার দৈনিক সংক্রমণ সাড়ে ছ’শোর ওপরে। শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান, রাজ্যে একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬৫৭ জন। পজিটিভিটি রেট ৭ দশমিক শূন্য চার শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।


আরও পড়ুন, ছবিতে সবচেয়ে লম্বা সেনা কোন জন? সঠিক উত্তর দিতে পারবেন?



করোনা যে কী হারে বাড়ছে, তা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। মে মাসে বাংলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ১৪৫ জন। সেখানে ২৪ জুনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্ত ৪ হাজার ৭৭৯ জন। অথচ মাস শেষ হতে আরও ৬ দিন বাকি। 


স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে, সবার প্রথমে আছে কলকাতা, তারপর উত্তর ২৪ পরগনা, ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। করোনা যেভাবে উত্তরোত্তর বাড়ছে, তাতে অনেকেরই প্রশ্ন, সংক্রমণ বৃদ্ধির এই হারই কি করোনার চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে?


সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে করোনার নতুন কোনও প্রজাতি হানা দিয়েছে কি না, তার হদিশ পেতে, রাজ্যের সমস্ত প্যাথলিক্যাল ল্যাবরেটরিকে সমস্ত কোভিড পজিটিভ নমুনার ‘CT VALUE’-র দিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। নির্দেশিকায় উল্লেখ, কারও কোভিড পজিটিভ নমুনার ‘CT VALUE’ ৩০ বা ৩০-এর কম হলে, সেই নমুনা অবশ্যই পাঠাতে হবে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, "কোন স্ট্রেনে আক্রান্ত হচ্ছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে না, সেই স্ট্রেন মিউটেট হয়ে ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে, আগের চেয়েও খারাপ হতে পারে, সেই আশঙ্কাও আছে।" 


করোনার আতঙ্কের মধ্যেই ধেয়ে এসেছে ডেঙ্গি। চলতি বছরে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রথম ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে লালগোলার বাসিন্দা এক ব্যক্তির। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন তিনি। চলতি বছরে ডেঙ্গিতে জেলায় প্রথম মৃত্যুর পরে এদিন তা নিয়ে বৈঠকে বসে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।