কলকাতা: দত্তপুকুর (Duttapukur) বিস্ফোরণকাণ্ডের নেপথ্যে সন্ত্রাস-যোগ (Terror) নেই তো? বিস্ফোরণের তীব্রতা দেখে সেই সন্দেহ দানা বেধেছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মনে। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন ৯ বছর আগেকার খাগড়াগড় (Khagragarh) বিস্ফোরণকাণ্ডের কথা। যে ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছিল জামাত-উল-মুজাহিদিনের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম।
এগরার পর রবিবার ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল দত্তপুকুর। তার এমন তীব্রতা, যে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে আশেপাশের একাধিক বাড়ি। মৃতদেহ উড়ে এসে পড়েছে বাড়ির চালে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেহাংশ। এই সমস্ত ছবি দেখে, অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে, ২০১৪ সালে পূর্ব বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের কথা।
আর এই প্রেক্ষিতেই, প্রাক্তন গোয়েন্দাদের একাংশ, খাগড়াগড়ে জামাত-যোগের মতো দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডেও জঙ্গি-যোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তা গদাধর চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'বাজির কারখানা একটা ভাল আড়াল। পিছনে বোমা না আইইডি কি তৈরি করা হচ্ছিল তাকে বলতে পারবে'।
বিএসএফ-এর প্রাক্তন ডিআইজি সমীর মিত্র বলেন, 'তারা যে এই জিনিসটা করল, আমাকে সেই খাগড়াগড় মনে করিয়ে দিচ্ছে। মনে করাচ্ছে এগরা। আমাকে মনে করাচ্ছে বাংলাদেশের ইলেকশন আসছে, আর কয়েকমাস পরেই। তার সঙ্গে এর কোনও রিমোট যোগাযোগ আছে কিনা।'
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দত্তপুকুরে বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে, বারাসাত শহর থেকেও বিকট শব্দ শোনা যায়! আর বিস্ফোরণস্থল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে, বেরো-নারায়ণপুরে পরিত্যক্ত ইটভাটায় চলছিল আরও একটি বাজি কারখানা। যা কি না আস্ত যেন বোমার গবেষণাগার।
আরও পড়ুন, নিয়োগ দুর্নীতির পর এবার সমবায় দুর্নীতি? ২ কোটিরও বেশি তছরুপের অভিযোগ
গ্রামবাসীদের অনেকেরই দাবি, বাজির তৈরির আড়ালে সেখানেও চলত বোমা ও বিস্ফোরকের কারবার। এখানেই, ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের সন্দেহ, বাজির আড়ালে সেখানেও কি IED জাতীয় কিছু তৈরি করা হচ্ছিল? ঠিক যেমন খাগড়াগড়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে জামাত উল মুজাহিদিনের জঙ্গিরা করেছিল? বিএসএফ-এর প্রাক্তন ডিআইজি সমীর মিত্র বলেন, 'এই ধরনের যে একটা সফিস্টিকেটেড ও মর্ডান ল্যাবরেটরি তৈরি রয়েছে, সেটা কীসের জন্যে? বাজি তৈরি করতে গেলে তো এইভাবে মেপে মেপে এসব করে না। আমাদের অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। দরকার পড়লে NIA-কে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে।
বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটা হয় না! এমনটাই মত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তা গদাধর চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, 'খাগড়াগড়ে আমরা দেখেছিলাম জামাত উল মুজাহিদিন এই গোষ্ঠীর নাম উঠে এসেছিল। এরা ইন্ডিয়ান সয়েল ইউজ করে IED বানানোর জন্য, টার্গেট বাংলাদেশ। সেই স্মৃতি এখনও আছে। ওখানেও বিভিন্ন রাসায়নিক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে ব্লাস্ট হয়েছিল। এখানেও ল্যাব পাওয়া গেছে। কী আছে সেখানে? বিভিন্ন রাসায়নিক দেখা যাচ্ছে। ওপর ওপর তদন্ত করলে চলবে না।'
এগরায় বাজির কারবারি ভানু বাগের মৃত্যু হয়েছিল বিস্ফোরণের অভিঘাতে। দত্তপুকুরেও মূল অভিযুক্ত হিসেবে যাঁর নাম উঠে আসছে, সেই কেরামত আলি ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
তাই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে মূল অভিযুক্তের মৃত্যুতে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনে কোনও সমস্যা হবে না তো? বিশেষজ্ঞদের মতে, সেক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণের উপর অনেকটাই নির্ভর করতে হবে পুলিশকে।
দত্তপুকুরের বিস্ফোরণস্থল-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে যে রাসায়নিক ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে, সেগুলির বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের রিপোর্টের দিকেও তাকিয়ে আছেন তদন্তকারীরা।