দীপক ঘোষ, কলকাতা: নির্বাচন উপলক্ষে বিজেপির অস্থায়ী মিডিয়া কার্যালয়ের সাংবাদিকদের আপ্যায়ন করা হল দক্ষিণ ভারতীয় খাবারে। শহরের একটি পাঁচতারা হোটেল তৈরি হয়েছে অস্থায়ী এই কার্যালয়। সেখানেই সংবাদিক সম্মেলন শেষে রেওয়াজ অনুযায়ী অন্য দিনের মতোই আয়োজন করা হয়েছিল জল খাবারের। সেই জলখাবারে মিলল ‘উত্তাপম’ আর ‘সাম্বার’ যা এক ধরনের টক ডাল। অনেকেই বিস্মিত হয়ে যান এই ব্যবস্থাপনায়। এনিয়ে নির্ভেজাল রসিকতার মুখে পড়তে হয় বিজেপি নেতাদের। দলের অন্যতম রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, বিষয়টি তাঁরও নজরে এসেছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আর পাঁচজন বাঙালির মতোই তারও একই অনুভূতি। এটা না হলেই ভালো হতো। তবে একইসঙ্গে তিনি রাজনৈতিক নেতার মতোই প্রতিশ্রুতিকে হাতিয়ার করে রসিকতার অস্ত্র ভোঁতা করার চেষ্টা করেন। বলেন, দিন দু’য়েকের মধ্যেই দেখবেন সুদে-আসলে এই ভুল শুধরে নেওয়া হবে।


নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হতেই বিজেপির যাবতীয় কর্মকাণ্ড এখন পরিচালিত হয় হেস্টিংসের আটতলা বিল্ডিং থেকে। যেখানে পাঁচটা তলাই এখন বিজেপির কার্যালয়। মুরলিধর সেন লেনের মূল দফতর এখন কার্যত শুনশান। ভোট ঘোষণার সময় থেকে একটি পাঁচতারা হোটেলও এখন কার্যত বিজেপির তৎপরতার অন্যতম কেন্দ্রস্থল। এখানের বাইরে থেকে আসা ৩০-৩৫ জন নেতা কর্মীর জন্য ঘর নেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টার। সেই মিডিয়া সেন্টারেই আজ, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন শেষে পরিবেশিত হয় উত্তাপম আর সম্বর।


খাওয়া দাওয়া নিয়ে একমাত্র বিজেপির নামের সঙ্গেই জুড়ে আছে বহুবিধ আলোচনা-সমালোচনা। নিরামিষ আহারের প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব আছে এই দলের, এমনটা কান পাতলেই শোনা যায়। ২০১৪ লোকসভা ভোটের পর, এরাজ্যে বিজেপি যখন কোমর বেঁধে ঝাপাল তখন তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে  আপ্যায়ন করা হতো নিরামিষ খাবারেই। কিন্তু এরাজ্যে বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী শিবির বাংলার মানুষের কাছে প্রচার করতে শুরু করলো, এই দল ক্ষমতায় এলে নিরামিষ খাবার খেতে বাধ্য করবে। বাঙালির পাতে নিষিদ্ধ হবে মাছ-ভাত। চারদিকে যখন এই প্রচার দানা বাঁধতে শুরু করেছে তখন সচেতনভাবে বিজেপি এই প্রচার ভোঁতা করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরপরই তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাছের পদ এমনকি চিকেন-মটনও জায়গা পেয়ে গেল পাতে। এই প্রসঙ্গে দলের অন্যতম থিংক ট্যাংক হিসাবে পরিচিত অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মত হল, এই ধরণের অপপ্রচার করছে তৃণমূল। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রধান অনির্বাণ বলেন, "বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের ওপর হস্তক্ষেপের কথা বিজেপি কল্পনাও করতে পারে না। বাংলার মাটি থেকে জন্ম নেওয়া এই দল বাঙালির বাঙালিত্ব রক্ষায় আন্তরিক ভাবেই যত্নশীল। এনিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।" যদিও জয়প্রকাশ মজুমদার কথায় স্পষ্ট, আজকের এই ঘটনা কিঞ্চিৎ বিড়ম্বনায় ফেলেছে বিজেপি নেতৃত্বকে।