প্রকাশ সিন্হা, সুজিত মণ্ডল, প্রদ্যোৎ সরকার, কলকাতা ও নদিয়া : রেশন বণ্টনেও বেলাগাম দুর্নীতি বাংলায় ? দু'দিনে দুই জেলার ১২ জায়গায় ED-র ম্য়ারাথন অভিযান (ED Raid)। কেন্দ্রীয় এজেন্সি (Central Agency) সূত্রে দাবি, তদন্তে সন্ধান মিলেছে মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর। বাকিবুর রহমান নামে ওই ব্যবসায়ীর একাধিক ঠিকানায় হানা দেন ED-র আধিকারিকরা। ED সূত্রে দাবি, একাধিক মোবাইল ফোন-সহ প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। 


শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি। স্কুলে বদলিতে দুর্নীতি। পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি। সমবায়ে লোনের নামে দুর্নীতি থেকে শুরু করে গরু পাচার, কয়লা পাচার। রাজ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত করছে ED ও CBI-এর মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। ঠিক এমন একটা আবহে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (Enfircement Directorate) বা ED-র দু'দিনব্যাপী ম্য়ারাথন অভিযান ঘিরে আরও এক বড়সড় দুর্নীতির ছায়া চওড়া হচ্ছে রাজ্যে। তা হল, রেশন বণ্টনে দুর্নীতি।


ED সূত্রে দাবি, এই দুর্নীতির তদন্তে নেমে তাঁরা এক মন্ত্রীর প্রভাবশালী ঘনিষ্ঠের সন্ধান পেয়েছেন। করোনাকালে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ, বহু জায়গায় রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রায় এক বছর আগে তা নিয়ে FIR দায়ের হয়। তার তদন্তে এবার আরও তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নেমেছে ED। 


কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার মোট ১২টি জায়গায় হানা দেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। বুধবার ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয়েছিল ED-র অভিযান। কোথাও তা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। কোথাও আবার বৃহস্পতিবারও দিনভর চলেছে ম্য়ারাথন অভিযান। ED সূত্রে খবর, রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার তদন্তে বাকিবুর রহমান নামে এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা।


ED সূত্রে দাবি, এই বাকিবুর রাজ্যের এক মন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। রাইসমিলের পাশাপাশি হোটেল, বার, রেস্তোরাঁর ব্যবসা রয়েছে তাঁর। ED সূত্রে দাবি, উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপার বাসিন্দা বাকিবুর রহমানের নানা রকম কারবার জেলায় জেলায় ছড়িয়ে। বৃহস্পতিবার কলকাতার উপকণ্ঠে বাগুইআটি, কৈখালি, দশদ্রোণ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালায় ED। বাকিবুর রহমানের রেস্তোরাঁ, বার থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট এমনকি হোটেলে পর্যন্ত পৌঁছে যান ED-র আধিকারিকরা।


বাগুইআটির দশদ্রোণ এলাকায় বাকিবুরের শ্যালক অভিষেক দাসের ঠিকানাতেও হানা দেয় ED। বুধবার ED-র আধিকারিকরা নদিয়া জেলার ৭ জায়গায় একাধিক মিলে হানা দেন। ED সূত্রে খবর, এর মধ্যে হরিণঘাটার সাতশিমুলিয়ায় নদিয়া মডার্ন রাইস মিল এবং গাংনাপুরের আইশমালিতে NPGRM আটা মিল, দুটিরই মালিক বাকিবুর রহমান। স্থানীয় সূত্রে খবর, এর আগে আয়কর দফতরের কর্মীরাও বাকিবুরের নদিয়া মডার্ন রাইস মিলে হানা দিয়েছিলেন।


শান্তিপুরের কন্দখোলা ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া এলাকায় পাশাপাশি রয়েছে জিকে অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাকশন। এবং ESSG রাইস মিল। দুটি মিলেরই মালিক জনৈক সুব্রত ঘোষ। বুধবার এই দুটি মিলেই তল্লাশি চালায় ED। ED সূত্রে দাবি, রেশন দুর্নীতির তদন্তে তাঁদের এই অভিযানে ৬-৭টি মোবাইল ফোন-সহ প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। 


আরও পড়ুন- ডিয়ার লটারিতে কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ, ২৫ জায়গায় আয়কর-তল্লাশি