কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও ধুমধামের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন রাজভবনে (West Bengal Foundation Day)। রাজভবনের বাইরে পিস মার্চ, বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন। রাজভবনের ভিতরেও অনুষ্ঠান আয়োজন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose)। তাতে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। সেই আবহেই রাজ্য বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনে উদ্যোগী বিজেপি (BJP)। বিধানসভা থেকে মিছিল বার করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। 


সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনে জোর বিজেপি-র (Panchayat Elections 2023)। রাজভবনে আনন্দ-আয়োজনের পর মঙ্গলবার সকালে রেড রোড ধরে এগোয় বিজেপি-র মিছিল। পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনে বের করা হয় মিছিল। বিধানসভা থেকে বেরিয়ে সোজা রেডরোডে পৌঁছে যান শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপি-র বিধায়ক নেতারা। সেই দলে ছিলেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়, স্বপন দাশগুপ্তরা। 


পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন নিয়ে গতকালই রাজ্যপালকে ফোন করেন এবং চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গভঙ্গের যন্ত্রণাময় ইতিহাস জড়িয়ে থাকা ২০ জুন দিনটিতে আনন্দ-আয়োজন কাম্য নয় বলে জানান। রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত অসাংবিধান বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু সেই নিয়ে মমতাকেই আক্রমণ করেন শুভেন্দু। 


আরও পড়ুন: West Bengal Foundation Day: বঙ্গভঙ্গের যন্ত্রণাময় ইতিহাস জড়িয়ে, সেই ২০ জুনই আনন্দ-আয়োজন! পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন ঘিরে বিতর্ক


এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, "সর্দার বল্লভভাই পচেল, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, মহাত্মা গাঁধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, মা সারদা কাউকে ক্রেডিট দিতে রাজি নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানচন্দ্র রায়ের সৃষ্টিকেও অস্বীকার করেন স্বাভাবিক ভাবে আজকের ২০ জুন দিনটিতে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে থাকবে, নাকি পূর্ব পাকিস্তানে থাকবে তা যে ঠিক হয়েছিল, সেটিকেও অস্বীকার করছেন। এর মাধ্যমে রাজ্যের অস্তিত্বও অস্বীকার করছেন উনি।"


শুভেন্দু আরও বলেন, "উনি আসলে বাংলাকে আলাদা দেশ মনে করেন। ক্ষমতা থাকলে আলাদা সংবিধানও বানিয়ে ফেলতেন। আগামী প্রজন্মকে তাই জানানোর দায়িত্ব রয়েছে আমাদের। আমরা অকৃতজ্ঞ নই। সেই সময় বামপন্থীরাও বাংলার ভারতভুক্তির পক্ষে সমর্থন দিয়েছিলেন। ভোট দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। ইতিহাস বিকৃত বা অপ্রাসঙ্গিক করা যায় না।"


পশ্চিমবঙ্গ দিবস বলে যে দিনটিকে ঘিরে এত আয়োজন, ১৯৪৭ সালের সেই ২০ জুন তৎকালীন অখণ্ড বাংলা বিভাজনের বিষয়টি রাজ্য বিধানসভায় উত্থাপিত হলে, বঙ্গভঙ্গের পক্ষে বেশি ভোট পড়ে। ফলে দু'টুকরো হয়ে যায় বাংলা। তৈরি হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) এবং একটি অংশ ভারতে রয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ নামে। 


এর পর ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা অর্জন করে ভারত। কিন্তু সেই স্বাধীনতা অর্জিত হয় পঞ্জাব এবং বাংলা বিভাজনের মাধ্যমে। আজও সেই যন্ত্রণাময় ইতিহাস কুরে কুরে খায় শিকড় বিচ্ছিন্ন মানুষদের। ইংরেজ চলে গেলেও, তাদের টেনে যাওয়া বিভাজনের ক্ষত রয়ে গিয়েছে দগদগে হয়ে। তাই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্তে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।