কলকাতা: রয়েছেন দশ জন শিক্ষিকা, কিন্তু ছাত্রীর সংখ্যা শূন্য! নবান্ন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই ছবি হাওড়ার শিবপুরের যমুনাবালা বালিকা বিদ্যালয়ের। কোথাও আগাছার জঙ্গলে ঘিরে ধরেছে গোটা স্কুলকে। জেলায় জেলায় সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে দিন দিন কমছে পড়ুয়া সংখ্যা। বাড়ছে উদ্বেগ।


পড়ুয়ার অভাবে ধুঁকছে স্কুল: শিক্ষাঙ্গনের কলরবের চেনা ছবি এখানে অধরা। দশ জন শিক্ষিকা। ছাত্রীর সংখ্যা শূন্য। তিন তলা স্কুল বিল্ডিং যেন পোড়ো বাড়ি। চারপাশে আবর্জনা। এই ছবি নবান্ন (Nabanna) থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে হাওড়ার শিবপুরের যমুনাবালা বালিকা বিদ্যালয়ের। স্কুলের প্রাথমিক বাংলা মাধ্যমে ১৬ জন পড়ুয়া, শিক্ষিকা ২ জন। ইংরেজি বিভাগে পডুয়ার সংখ্যা শূন্য, রয়েছেন দু'জন শিক্ষিকা। মাধ্যমিক বিভাগে দশ জন শিক্ষিকা, নেই কোনও ছাত্রী। জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয়কুমার পাল জানিয়েছেন,পড়ুয়া না থাকায় শিক্ষিকাদের অন্য স্কুলে সরিয়ে দেওয়া হবে।


কলকাতা থেকে জেলা প্রায় সব জায়গায় সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে কমছে পড়ুয়া সংখ্যা। রাজ্যে ৮ হাজারের বেশি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০ এর নিচে। ২২৬ টি স্কুলে নেই ১ জনও পড়ুয়া। তবে কি পড়ুয়ার অভাবে রাজ্যে ৮ হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ হতে চলেছে? স্কুল শিক্ষা দফতরের এই চাঞ্চল্যকর তথ্যই উদ্বেগ বাড়িয়েছে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের সাতকড়ি বঙ্গ হিন্দি প্রাথমিক বিদ্য়ালয়। আগাছার জঙ্গলে ঘিরে ধরেছে গোটা স্কুলকে।কারণ, করোনার সময় থেকে পড়ুয়াশূন্য স্কুল। অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনারই মন্দিরবাজার ব্লকের মণ্ডবতলা রামনাথপুর জুনিয়র হাইস্কুল। পড়ুয়াশূন্য স্কুল তালাবন্ধ। টেবিল-চেয়ার-বইপত্রে জমছে ধুলো। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাধেশ্যাম পুরকায়স্থ বলেন, "জুনিয়র হাইস্কুলটি পুনরায় চালু হোক। পাশাপাশি স্কুল থাকলে পঠনপাঠনের সুবিধা হত ও পড়ুয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেত।''

ছাত্রীর অভাবে ধুঁকছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির জোতরাম-সাতগেছিয়া বাজার বালিকা বিদ্যালয়। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে আছেন ২ শিক্ষিকা, নেই পড়ুয়া। সহকারী শিক্ষিকা পার্বতী আঁশ বলেন, “২০১৩ সালে যখন স্কুলে যোগ দেন তখনও প্রায় ৮০ জন পড়ুয়া ছিলো। তারপর আস্তে আস্তে ২০২২-২৩ সালে সেই পড়ুয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় শুন্যয়। প্রশাসনিক স্তরেও জানানো হয়েছে। যে রকম নির্দেশ আসবে সেইমতো কাজ হবে।’’ রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির এই অবস্থার জন্য সরকারি নীতিকেই দায়ী করছে শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশ। যদিও সরকারি সূত্রে দাবি, এর নেপথ্যে রয়েছে রাজ্যে হাজার হাজার বেসরকারি স্কুল গজিয়ে ওঠা। পাশাপাশি সরকারি সূত্রে আরও দাবি, জন্মহার কমে যাওয়াও পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকার একটা কারণ হতে পারে।


আরও পড়ুন: LPG Cylinder Price: গৃহস্থের হেঁশেলে স্বস্তি? কমছে রান্নার গ্যাসের দাম