মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: সংবাদ শিরোনামে বারবার এসেছে তাঁর নাম। স্বাধীনতার সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে থেকে লড়াইও করেছিলেন। শতোর্ধ্ব সেই হারাধন সাহা প্রয়াত। লোকসভা ভোটের আগেই প্রয়াত হলেন জেলার সব থেকে বয়স্ক ভোটার। জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়া কাঁকসার জঙ্গলমহলের হারাধন সাহা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। 


ভোটার কার্ডে যার বয়স ১০৫, পরিবারের দাবি আরও দু এক বছর বেশী হবে। বৃহস্পতিবার তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। সমবেদনা জানালেন মন্ত্রী। এই খবর ছড়িয়ে পড়তে কাঁকসার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভিড় জমান। মন খারাপ গোটা জঙ্গলমহলবাসীর। 


গত কয়েক মাস ধরে বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। সন্ধ্যা ৭টা ৫মিনিটে কাঁকসার মলানদিঘির সরস্বতীগঞ্জের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে নাতি নিত্যানন্দ সাহাকে সঙ্গে নিয়ে পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন নির্বাচন কেন্দ্রে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে না পারলেও বাড়িতে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের সামনে পোস্টাল ব্যালটে দিয়েছিলেন ভোট। 


২০২৩ ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে আবার লাঠি হাতেই ভোট দিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন নির্বাচন কেন্দ্রে। আবার দোরগোড়ায় আরেকটি লোকসভা নির্বাচন। জেলার মানুষ ভেবেছিলেন এবারেও লোকসভা নির্বাচনের সাক্ষী থাকবেন তিনি। হঠাৎ কয়েক মাস ধরে বার্ধক্য জনিত সমস্যা বাড়তে থাকে তাঁর। বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৫মিনেটে কাঁকসার জঙ্গলমহলের সরস্বতী গঞ্জের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন হারাধন সাহা। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সবাই। 


শোনা যায় ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করতে এসেছিলেন জহরলাল নেহেরুরা। 'বন্দে মাতরম' ধ্বনি দিয়ে তাঁদের লড়াইয়ের সঙ্গীও হয়েছিলেন তিনি। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে হারাধন সাহাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সরস্বতী গঞ্জের বাড়িতে পৌঁছালেন রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূলের সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় এবং মলানদিঘী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন তারা। 


তারপরেই মৃতদেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হল জয়দেবের কদমখন্ডির ঘাটে। মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, 'ওঁর মত একজন মানুষ ছেড়ে চলে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। স্বচ্ছ জীবন যাপন করতেন তিনি। এলাকার মানুষের বিপদেও ঝাঁপিয়ে পড়তেন। ওঁর আত্মার চির শান্তি কামনা করেন। আক্ষেপের সুরে নাতি নিত্যানন্দ সাহা জানিয়েছেন, দাদু তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। দাদুকে ছাড়া তারও এক মুহূর্ত চলত না। তার দিনের শুরুটাই হতো দাদুর সঙ্গে গল্প দিয়ে। এভাবে দাদু তাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় নিজেকে বড় একা লাগছে বলে জানান তিনি। 


এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, "ওদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। উনি আমাদের  খোঁজ রাখতেন। এই মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক।" 


আরও পড়ুন, আজই বিজেপিতে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, শুভেন্দু-সুকান্তর সঙ্গে আর কে থাকবেন?