কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সুমন ঘড়াই ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: অবসর নেওয়ার পরেও শিক্ষকদের একাংশ পেনশন পাচ্ছেন না। এই অভিযোগে সরগরম শিক্ষা মহল। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরেও, পেনশনের নিশ্চয়তা মিলছে না। অর্থ দফতর সূত্রে খবর, পেনশনের ফাইলের প্রসেসিং চলছে। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, সমস্যা মোকাবিলায় নতুন পেনশন নীতি আনছে সরকার।



সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের অবসর জীবনের ভরসা পেনশন! সেখানেই কি এবার পড়ছে কোপ? অভিযোগ, অবসর নেওয়ার পরও শিক্ষকদের একাংশ পেনশন পাচ্ছেন না! যেমন, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দা শুভেন্দু খাটুয়া। খেজুরি বজবজিয়া ঈশ্বরচন্দ্র শিক্ষা নিকেতনের প্রাক্তন এই শিক্ষক অবসর নিয়েছেন গত মাসে। তাঁর দাবি, সমস্ত কাগজপত্র জমা দিলেও, তাঁর পেনশনের ফাইল বাতিল করা হয়েছে! 


অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শুভেন্দু খাটুয়া বলেন, "ডি আই অফিস পেনশন ফাইল শিক্ষা দফতরে পাঠায়, সেই ফাইল বাতিল করে আমার কাছে পাঠায়, কাজে যোগ দেওয়ার প্রথম ২ বছর ধরে পাস গ্র্যাজুয়েট হিসেবে কাজ করেন, এরপর উচ্চশ্রেণিতে ক্লাস নেওয়ার অনুমতি, ওই ২ বছরের কথা উল্লেখ করে ফাইল বাতিল করা হয়েছে, ডেপুটি ডিরেক্টর চন্দন রুদ্রর সঙ্গে দেখা করেন, তিনিও আশ্বাস দিতে পারেননি, হাইকোর্টে যাব।"    


আরও পড়ুন, ডাক্তারদের ভোটে ধুন্ধুমার, ভুয়ো ভোটার-ছাপ্পার অভিযোগে তুলকালাম শহরে


অভিযোগ, শুভেন্দু খাটুয়ার মতোই সদ্য অবসর নেওয়া শিক্ষকদের একাংশ পেনশনের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না। শিক্ষা দফতর সূত্রে দাবি, "জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে ৫% পেনশনের কাগজপত্র আটকে আছে। কারণ, উপযুক্ত প্রামাণ্য তথ্য যাচাই পর্ব এখনও শেষ হয়নি। বাকি পেনশনের কাগজপত্র ডিপার্টমেন্ট অফ প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন অ্যান্ড গ্রুপ ইনস্যুরেন্সের দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।" 


এদিকে, অর্থ দফতর সূত্রে খবর, গত কয়েক মাসে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, ডিপার্টমেন্ট অফ প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন অ্যান্ড গ্রুপ ইনস্যুরেন্সে তাঁদের বেশ কিছু পেনশন সংক্রান্ত ফাইলের প্রসেসিং চলছে। সেই কাজ শেষ হয়ে অর্থ দফতরে পৌঁছলেই, ফাইল ছাড়া হবে। এদিকে এই নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধেছে বাম-কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, "শিক্ষকদের পেনশন দিচ্ছেন না, বলছে টাকা নেই, এই শিক্ষকরা কতটা চাপে সেটা বোঝার ক্ষমতা মমতার নেই, মমতা এটাও জানে এই শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে গেলেও ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না, তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না মমতা।" 


সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ি বলেন, "মানুষের ওপর সাড়ে ৫ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ চাপিয়েছে রাজ্য, খেলা-মেলা হচ্ছে, অথচ ডিএ, পেনশন দিতে পারে না, নাতো উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, নাতো অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের পেনশন দিতে পারছে।" বিতর্কের আবহে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। আপাতত এটাই দেখার সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেনশন-বিভ্রাটের সমাধান কবে হয়।