রুমা পাল,কলকাতা : রাজভবন এবং তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংঘাত চরমে। খালি করা হল রাজভবন, ডাকা হয়েছে বম্ব স্কোয়াডকে। CRPF এবং কলকাতা পুলিশকে দিয়ে যৌথ উদ্যোগে তল্লাশি করাতে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। বম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, সিভিল ডিফেন্স-সহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টকে রাজ্যপালের নির্দেশে রাজভবনে আসতে বলা হয়েছে। তার কারণ, তিনি তল্লাশি অভিযান চান এবং তাঁর উপস্থিতিতেই চান। এই পরিস্থিতিতে তাঁর শিলিগুড়ি সফর কাটছাঁট করে ফিরছেন রাজ্যপাল। গতকাল সকালে রাজ্যপাল সকলের জন্য রাজভবন খুলে দিয়েছিলেন। এটা দেখানোর জন্য যে কল্যাণ বন্দ্যোাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, সেরকম রাজভবনে কিছুই নেই। রাজ্যপালের নির্দেশে রাজভবনে শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান। কর্মীদের বের করে খালি করা হয়েছে রাজভবন। রাজভবনে স্নিফার ডগ নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে CRPF, কলকাতা পুলিশ। একজন সাংসদের মন্তব্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেটাই বোঝানোর জন্য রাজ্যপাল বারবার কড়া প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। এই ধরনের মন্তব্যে মানুষের কাছে হিংসাত্মক বার্তা যায়, অন্য ধরনের পরিবেশ তৈরি হয় বলে মনে করেন রাজ্যপাল। তাই তিনি তল্লাশি অভিযান চান।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বেনজির, বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছিলেন তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে রাজভবনের দরজা খুলে দেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার রাজভবনের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, রবিবার ভোর ৫টা থেকে খোলা থাকবে রাজভবনের দরজা। সাংসদ, নাগরিক সমাজ ও সাংবাদিকরা এসে যাচাই করে দেখতে পারেন (তৃণমূল) সাংসদের অভিযোগ অনুসারে কোনও অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত আছে কিনা। আর যদি তা ভুল হয়, তাহলে সাংসদের কাছে রাজ্যবাসীর সামনে ক্ষমা চাওয়া এবং তাঁর হিংসাত্মক মন্তব্যের জন্য বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার পথ খোলা আছে।
শনিবার SIR-এর সমর্থনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। সেই প্রেক্ষিতেই রাজ্যপালকে বেনজির আক্রমণ শানান তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "রাজ্যপালকে আগে বলুন যে রাজ্যপালের ভবনে যেন বিজেপির সমস্ত ক্রিমিনালদের রাজভবনে না রাখে। রাজভবনে বসে ক্রিমিনালদের রাখছেন আর সবাইকে একটা করে বন্দুক দিচ্ছেন, বোমা দিচ্ছেন, মেরে এসো তৃণমূলের লোকেদের। আপনি আগে সব এগুলো বন্ধ করুন। আপনার মতো অপদার্থ রাজ্যপাল যতদিন থাকবে, বিজেপির চাকরবাকর রাজ্যপাল যতদিন থাকবে, ততদিন ভাল জিনিস পশ্চিমবাংলায় কোনওদিন দেখতে পাবেন না।"
পাল্টা কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপালও। তিনি বলেন, "আমি চাই এটার তদন্ত হোক। মাননীয় সাংসদ কি নির্বাচনের সময়ে হিংসার পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন ? বিহারের ফলাফল দেখে তিনি কাঁপছেন ? দিল্লির নেতাদের মন্তব্যে মাননীয় সাংসদ যদি অস্বস্তি বোধ করেন সেটা তাঁর রাজনৈতিক দুর্ভাগ্য। আমি খতিয়ে দেখছি এটা ঘৃণা ভাষণের আওতায় পড়ে কিনা। এটা যদি আগামী নির্বাচনে হিংসার বার্তা হয় সেটা কখনও সহ্য করা হবে না। এই রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য জনগণকে বিভ্রান্ত করে, কেউ যাতে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য না করেন, তা দেখার দায়িত্ব আমার সাংবিধানিক সহকর্মী মুখ্যমন্ত্রীর। আমি নিশ্চিত, তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন।"