উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : স্কুলে নিয়োগ (Recruitment Scam) থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, মিড ডে মিল, একশো দিনের কাজ, প্রায় বছরখানেক ধরে রাজ্য়জুড়ে অন্য়তম ইস্য়ু দুর্নীতি (Scam)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের (TMC) দিকে। সেসবেরই কী প্রভাব পড়ল সাগরদিঘির ভোটে ? তেমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।


উপনির্বাচনের ফল কী কোনও ইঙ্গিত ?


মাঝে ২ বছরেরও কম ব্যবধানে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জেতা, মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি আসনটি উপনির্বাচনে (Sagardighi By-Election) হাতছাড়া হল তৃণমূলের। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের (Political Analyst) দাবি, সাধারণত উপনির্বাচনে অ্যাডভানটেজে থাকে শাসকদল। সিংহভাগ ক্ষেত্রে জয়ীও হন শাসকদলের প্রার্থীরাই। আর সেখানে সাগরদিঘিতে ২২ হাজার ৯৮০ ভোটে জিতলেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। সেই ভিত্তিতে ধরলে, ২ বছরে, সাগরদিঘি বিধানসভায় তৃণমূলের ভোট কমল ৭২ হাজারেরও বেশি ! এদিকে, সাগরদিঘিতে হারের কারণ নিয়ে আলোচনা করতে শুক্রবার বৈঠকে বসছে তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা।  


'ইস্যু' দুর্নীতি


এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সাগরদিঘিতে তাহলে উলটপুরাণ হল কী করে ? তৃণমূলের পরাজয়ের নেপথ্যে কাজ করল কোন কোন ফ্যাক্টর ? বিশেষজ্ঞদের দাবি, গত কয়েক বছরে রাজ্য জুড়ে ওঠা একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের কারণেই শাসকদলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন একাংশের ভোটাররা। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে (Assembly Election) তৃণমূল বিপুল ভোটে জিতলেও, তারপর সামনে আসে রাজ্যের শিক্ষা দুর্নীতি। অভিযোগ ওঠে, কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে চাকরি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গ্রেফতার হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। হাজতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত চেয়ারম্যান ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য সহ শিক্ষা দফতরের একটা বড় অংশ। অন্যদিকে, আগুনে গরম থেকে হাড় কাপানো ঠান্ডা, রোদ-জল-ঝড়ের মধ্যে শয়ে শয়ে দিন ধরে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন যোগ্য প্রার্থীরা। 


বিশেষজ্ঞদের দাবি, সাগরদিঘিতে তৃণমূলের থেকে ভোটারদের মুখ ফেরানোর আরও একটি সম্ভাব্য কারণ আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের ভুরি ভুরি অভিযোগ ওঠে রাজ্যে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিযুক্তরা শাসকদলের পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি। এই প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলনেতার অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্যে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে আসে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এছাড়াও ১০০ দিনের কাজেও, ব্যাপক বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে রাজ্যে। কোথাও খাতায় কলমে কাজ হলেও, বাস্তবে কিছুই না হওয়ার অভিযোগ। কোথাও আবার জবকার্ড নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এমনকি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে মিড ডে মিলেও। গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও। গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও (Anubrata Mandal)।


আরও পড়ুন- তৃণমূলের থেকে কি মুখ ফেরাচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ? সাগরদিঘির ফল ঘিরে শুরু আলোচনা, তরজা