পার্থপ্রতিম ঘোষ, ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী ও সৌমিত্র রায়, কলকাতা : রাজ্য সরকারি প্রকল্পে 'ট্যাব'-এর কোটি কোটি টাকা হাতাতে কি নামমাত্র টাকায় ভাড়া নেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট? তার জন্য কি মিডলম্যানদের ব্যবহার করা হয়েছিল? জেলায় জেলায় সাইবার ক্যাফের আড়ালেই কি 'ট্যাবে'র টাকা হাতানোর ছক কষা হয়েছিল? রাজ্যে দিকে দিকে সরকারি প্রকল্পে দেওয়া ট্যাবের টাকা জালিয়াতির অভিযোগ যত বাড়ছে, গ্রেফতারির সংখ্যাও বাড়ছে। সামনে আসছে চোখ কপালে তোলার মতো তথ্য। বুধবার উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের জেরা করে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, দুজনকেই বলা হয়েছিল অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা রাখতে দিলে,৩০০ টাকা কমিশন দেওয়া হবে। অর্থাৎ, কারচুপি করে রাজ্য সরকারের 'তরুণের স্বপ্ন' প্রকল্পের টাকা হাতাতে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট! সূত্রের খবর, ৩০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন দেওয়া হয়েছে।
অ্যাকাউন্ট ভাড়া করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় মিডলম্যান পাঠানো হয়েছিল। আর এদের টার্গেট ছিল মূলত বয়স্ক মহিলারা। লালবাজার সূত্রে খবর, ট্যাব জালিয়াতির জন্য যে আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করা হয়েছে, তার অধিকাংশই উত্তরবঙ্গের। সম্ভবত এই প্রতারণা চক্রের 'এপিসেন্টার' উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া।
সূত্রের খবর, চোপড়া ও সংলগ্ন এলাকাতেই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে এই টাকা ঢুকেছে। পুলিশ সূত্রে দাবি, প্রায় ৮০% জালিয়াতিই এই এলাকায়। অন্যদিকে মালদা থেকে যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই সাইবার ক্যাফের মালিক। সেখানে বসেই রীতিমতো ছক কষে টাকা হাতানোর ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করছে পুলিশ।
মাস্টারমাইন্ড রকি শেখ ভগবানপুরের একটি স্কুলের চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক। সূত্রের খবর, ধৃত হাসান শেখ ও
শ্রবণ সরকার এই রকির কাছে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। এরমধ্যেই আবার জড়িয়েছে রাজনীতি।
তার কারণ, বৈষ্ণবনগরে ধৃত শ্রবণ সরকারের বাবা কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের SC সেলের সভাপতি জিতেন্দ্রনাথ সরকার যদিও বলেছেন, ' আমার ছেলে কোনওদিনই ট্যাব কেলেঙ্কারিতে জড়িত নয়। সৎ ছেলে, ....জানি না রকিকে পুলিশ ধরেছে কিনা। তখন জানতাম না, এখন জানছি রকিকেও ধরেছে। '
বৃহস্পতিবার চোপড়া থেকে নুর আলম নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করে তমলুক থানার পুলিশ। সূত্রের দাবি, চা বাগানের মালিক নুর আলমের অ্যাকাউন্টেও ঢুকেছে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ ট্যাবের টাকা! পুলিশ সূত্রে দাবি,কলকাতাতেই ১০৭ জন পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢোকেনি!অন্যান্য জেলায় ৭৮১ জন পড়ুয়া টাকা পায়নি বলে দাবি করা হয়েছে পুলিশ সূত্রে।
যদিও বিভিন্ন জেলা থেকে যে পরিসংখ্যান উঠে আসছে, তাতে সংখ্যাটা আরও বেশি হওয়ারই আশঙ্কাা। আর এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকেই দুষছে বিরোধীরা। কীভাবে সরকারি ওয়েবসাইটে ঢুকে তথ্য বদল করে গায়েব করা হল কোটি কোটি টাকা? ডেটা এন্ট্রি করতে বাইরের কোনও সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কি? জানতে বৃহস্পতিবার সাইবার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিকাশ ভবনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, ট্যাব কেলেঙ্কারির তদন্তে প্রতারণা দমন ও সাইবার ক্রাইম শাখার আধিকারিকদের নিয়ে SIT গঠন করা হয়েছে।