সুদীপ চক্রবর্তী, করুণাময় সিংহ ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কালিম্পঙ এবং উত্তর দিনাজপুর: ট্যাব কেলেঙ্কারির অভিযোগ এবার কালিম্পঙে। জেলার বেশ কিছু পড়ুয়ার ট্য়াবের টাকা গায়েব করার অভিযোগে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থেকে গ্রেফতার হলেন একজন। অন্যদিকে, মালদার ট্যাব কেলেঙ্কারিকাণ্ডে  প্রথম গ্রেফতার মালদা সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশের হাতে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণার শিকার হয়েছে ১ হাজার ৯১১জন পড়ুয়া। ট্যাব কেলেঙ্কারির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ১৩ জনকে।


 ট্য়াবের টাকা নিয়ে জালিয়াতির জাল কি ছড়িয়েছে কালিম্পঙেও? কেলেঙ্কারির নেপথ্যে কি সেই উত্তর দিনাজপুর-যোগ? তরুণের স্বপ্ন চুরি করে উত্তর দিনাজপুরই কি হয়ে উঠছে 'বাংলার মিনি জামতাড়া'? তেমনই অনুমান তদন্তকারীদের। কালিম্পং-এর গরুবাথান থানার পুলিশে সূত্রে খবর, জেলার কিছু পড়ুয়ার ট্য়াবের টাকা অ্য়াকাউন্টে ঢোকার অভিযোগে ইসলামপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এক যুবককে। ধৃত মহম্মদ আলম মুস্তাকিন ইসলামপুর থানার অলিগঞ্জের বাসিন্দা।  
 
 কলকাতা পুলিশ সূত্রে দাবি, ট্যাব-জালিয়াতির তদন্তে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ টাকা ঢুকেছে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া, ইসলামপুর এবং বিহারের কিষাণগঞ্জের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে। দক্ষিণবঙ্গের এডিজি  সুপ্রতিম সরকার বলেন, চোপড়া ও মালদা থেকে প্রচুর এই ধরনের কাজ হচ্ছে। সেটা আমরা দেখেছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, মালদায় ট্যাব জালিয়াতির অভিযোগে মালদা থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে একজনকে।


 শুক্রবার মালদার বৈষ্ণবনগর থানার তিনশতদিঘি এলাকায় হানা দিয়ে সেরাজুল মিয়া নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মালদার গাজোলের একটি স্কুলের এক ছাত্রের দশ হাজার টাকা ঢুকেছিল তার অ্যাকাউন্টে। ধৃতেরা প্রত্যেকে অন্য জেলার ট্যাব কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলে অভিযোগ। এই প্রথম মালদার ট্যাব কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল জেলারই একযুবককে।


পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও পর্য়ন্ত ১২০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রতারণার শিকার হয়েছে ১ হাজার ৯১১জন পড়ুয়া। ট্যাব কেলেঙ্কারির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ১৩ জনকে। উত্তর দিনাজপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ জনকে। এরই মধ্যে এদিন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে কিচকতলা হাইস্কুলের ১৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর ট্যাবের টাকা উধাও বলে অভিযোগ উঠেছে। 


 উত্তর দিনাজপুরের কিচকতলা হাইস্কুলের ছাত্র মহম্মদ শাহেনশা বলেন,' যেদিকে সবাইকে মানে, স্কুলের জানা গিয়েছিল, যে টাকা ঢুকেছে খাতায়। আমি এসেছিলাম স্কুলে, দেখলাম আগে ব্যাঙ্কে যাই। টাকা ঢুকেছে কিনা, তারপর দেখলাম, ঢোকেনি।' উত্তর দিনাজপুরের কিচকতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক  সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমরা প্রথম দিকে এটা বুঝতে পারিনি। আমরা প্রায় ১০-১২ দিন পরে জানতে পারলাম ১৩ জন বাচ্চার টাকা জালিয়াতি হয়ে গেছে। তারপর আমি ওই মুহূর্তে মানে, কালবিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ আমি ইসলামপুর সাব ডিভিশন পুলিশ সাইবার ক্রাইম অফিসে আমি একটা অভিযোগ করি।' ইসলামপুর সাইবার ক্রাইম দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল সূত্রে খবর, চোপড়া, গোয়ালপোখর ও কেরলের অ্যাকাউন্টে এইসব টাকা ঢুকেছে। ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। 


আরও পড়ুন, TMC কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে BJP-তে আহ্বান সুকান্ত মজুমদারের, 'ওখানে থাকলে..'


 'তরুণের স্বপ্ন' প্রকল্পেই তরুণের স্বপ্নভঙ্গ। কলকাতা থেকে জেলা-  রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় উঠছে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সরকারের দেওয়া ট্য়াবের টাকা জালিয়াতির অভিযোগ। শোরগোল শুরু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। ধৃতদের জেরা করে চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রে খবর, 'TAB' জালিয়াতির জন্য যে আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করা হয়েছে, তার অধিকাংশই উত্তরবঙ্গের। সেই সব আইপি অ্যাড্রেসের সূত্র ধরে তদন্ত হচ্ছে।