অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও সৌমিত্র রায়, কলকাতা : শহর থেকে শহরতলি, শহরতলি ছাড়িয়ে জেলা। বিভিন্ন জায়গায় বাড়ছে বজ্রপাত আর সেই কারণে মৃত্যুর সংখ্যা। যার জন্য প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি, মূলত দূষণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বদলে যাওয়া বায়ুপ্রবাহের ধরন, বাতাসের ধূলিকণা, কলকারখানা উগরে দেওয়া ধোঁয়া- সব মিলিয়ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে বজ্রপাতের।

কয়েক ঘণ্টার মধ্য়ে ৫ জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু ! বৃহস্পতিবার বজ্রপাতে বাঁকুড়ায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। পূর্ব বর্ধমানে ৫, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২, পুরুলিয়া এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে এক জন করে।তবে এখন বাজ পড়া যেভাবে বেড়েছে, তা অনেকেরই চোখে পড়েছে। প্রশ্নটা হল, শুধুই কি প্রাকৃতিক কারণ, নাকি হাত আছে মানুষেরও ? 

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে দূষণ বাড়ার জন্য মেঘের মধ্যে ধূলিকণা বেড়ে চাপ ও তাপের তারতম্য হচ্ছে। ফলে, বজ্রগর্ভ মেঘ বা থান্ডার ক্লাউড তৈরি হচ্ছে বেশি। উঁচু বাড়ির জন্য বায়ুপ্রবাহের ধরন বদলেছে, সেটাও বজ্রপাতের কারণ। কংক্রিটের বাড়িঘর, পিচের রাস্তার জন্য তাপ বাড়ছে। এতেও পরিবর্তন ঘটছে বায়ুপ্রবাহে। যার ফলে, বজ্রপাতের পরিমাণও বাড়ছে।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত বলেন, "গ্লোবাল ওয়ার্মিং হচ্ছে। যেহেতু তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, সুতরাং বায়ুর এখন জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বেড়ে গেছে। ফলে, জলীয় বাষ্প বেড়ে গেছে। এই কারণে বজ্র-বিদ্যুৎ বেড়ে গেছে।" 

বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রগর্ভ মেঘের নীচের দিকে নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেশি থাকে। আর ওপরের দিকে থাকে পজিটিভ চার্জ। বজ্রপাত তখনই হয় যখন মেঘের মধ্যে নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে যায়। উল্টো দিকে মাটিতে পজিটিভ চার্জ জমা হয়। বজ্রগর্ভ মেঘ ও মাটিতে তৈরি হওয়া দুই বিপরীতধর্মী চার্জের পরিমাণ বাড়লে মাঝের বাতাসের বাধা অতিক্রম করে একটি লাইন তৈরি হয়, যাকে বলে স্টেপড ল্যাডার। মেঘে যে শক্তিশালী ক্ষেত্র তৈরি হয় তার প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় ১০ হাজার ভোল্ট বিদ্যুৎ থাকে। ফলে চারপাশের বাতাসও আয়নিত হয়ে যায়। ফলে এই পথেই মেঘ থেকে বিদ্যুৎ শক্তি মাটিতে নেমে আসে। যাকে বলা হয় বজ্রপাত। 

বঙ্গোপসাগরে ফের ঘূর্ণাবর্তের ফলে সৃষ্ট হয়েছে নিম্নচাপ। আর এই নিম্নচাপের প্রভাবে সোমবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। এর পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে রবিবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। নিম্নচাপের কারণে এখন কয়েকদিন সমুদ্র উত্তাল থাকবে। আর তার ফলে নিরাপত্তার জন্য সোমবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ সপ্তাহান্তে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।