মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, (দুর্গাপুর), পশ্চিম বর্ধমান: মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক শিকল বন্দি। দর্গাপুরের কাঁকসার শঙ্কর সরকার নামে ওই যুবককে বন্দি অবস্থায় কাটাতে হচ্ছে জীবন।


শঙ্কর ছেলেবেলা থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন। আর তার জন্যই পরিবারের লোকজন শঙ্করকে কখনও চেন দিয়ে বেঁধে রাখেন ঘরে, আবার শঙ্কর যখন বাইরে বেরোয়, পাছে ছেলে হারিয়ে  যায় , সেজন্য তার জন্য পায়ে শেকল পরানো থাকে শঙ্করের পায়ে।মঙ্গলবারও দেখা গেল একই চিত্র।


 বেশ কয়েকবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা হয়েছে শঙ্করের। কিন্তু কোনো সুফল মেলেনি, বরং উল্টে ছেলেটির বাঁ চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।পরিবারে 'নুন আনতে পান্তা ফুরোয়' দশা, তাই বড় কোনও চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেনি শঙ্করের পরিবার। দুর্গাপুরের কাঁকসার অজয়পল্লীর বাসিন্দা শঙ্করের বাবা অন্যের জমিতে চাষ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন। তাই বড় নামকরা চিকৎসকের কাছে যাওয়াটা এই সরকার পরিবারের কাছে ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখা’র মতো। তাই আর্থিক অনটনের সংসারে এখন শঙ্করকে কাটাতে হচ্ছে নিগড়ে বাঁধা এই জীবন। যে শিকল  যে শুধু আষ্টেপৃষ্ঠে শঙ্করকে বেঁধে রেখেছে তা নয়, মানসিক ভারসাম্যহীন এই ছেলেটির ভাগ্যকেও বেঁধে রেখেছে অসহায়তার বেড়াজালে। আর এক মা তার স্নেহময়ী কোলের বাঁধন ছিঁড়ে যেন ছেলে বেরিয়ে না যেতে পারে,তার জন্য কখনও ঘরে চেন দিয়ে বেঁধে রাখেন,  আবার কখনও বা পায়ে সেই চেন পরিয়ে রাখেন। যাতে করে মানসিক ভারসাম্যহীন এই ছেলে  হারিয়ে না যায়। 


কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রবোধ মুখোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না। অভাবী পরিবারের ছেলেটি যাতে চিকিৎসার সুযোগ পায় তার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। দুর্গাপুরের কাঁকসার অজয়পল্লীর হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে শঙ্কর  খুব একটা জ্বালাতন করে না কাউকে।  লোহার শেকলের চেন ভেঙে  মুক্ত পরিবেশে শঙ্কর একদিন বুক ভরে শ্বাস  নেবে, এমনই স্বপ্ন বুক বাঁধেন তার মা। সত্যি কি সেই সুদিন ফিরবে? প্রশ্নটা সহজ, কিন্তু উত্তরটা ততটাই কঠিন। তবে কাঁকসার অজয়পল্লীর মানসিক ভারসাম্যহীন শঙ্করের এই লোহার চেন বাঁধা জীবন যন্ত্রণার ছবি একরাশ লজ্জা আর প্রশ্নের বেড়াজালে বন্দি করে দিয়েছে এই সমাজকে।