মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান:  সরকারি জমির (Govt Land) ওপর বেআইনি নির্মাণ করে লোক বসানোর পরিকল্পনার অভিযোগ। অভিযোগের কাঠগড়াতে নাম জড়াল বিদায়ী বোরো চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরের ছেলের নাম। সরকারি স্তর থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন (Police) সবাইকে জানিয়েও কাজের কাজ কিছু হয়নি। ক্ষোভে ফুঁসছেন দুর্গাপুরের (Durgapur) সগরভাঙার কিউ ব্লকের বাসিন্দাদের একাংশ। 'ভিত্তিহীন অভিযোগ' দাবি, তৃণমূল নেতার (TMC Leader)। রাজনৈতিক তরজা শুরু। 


দুর্গাপুর পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে সগরভাঙা কলোনির কিউ ব্লক সরকারি হাউজিং আবাসন। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা দুর্গাপুর পুরসভার চার নম্বর বোরো কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিত চট্টোপাধ্য়ায় ও তাঁর দলবল সরকারি হাউজিং দফতরের জমি দখল করে বেআইনি নির্মাণ করছে। শুধু তা নয় সেই জমিতে ঐ বেআইনি নির্মাণ করে প্লট করে করে প্রতিটি প্লটে লোক বসানোর পরিকল্পনার অভিযোগ। স্থানীয় সগরভাঙা কলোনির কিউ ব্লকের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বেশ কয়েক মাস ধরে বারবার বারণ করা সত্ত্বেও দিনে দুপুরে সরকারি এই জমির ওপর বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। স্থানীয় কোকওভেন থানা থেকে শুরু করে হাউজিং দফতর এমনকি মহকুমা প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না, বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন দিন সাতেক আগে এই বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করে দিতে গেলে বাঁধা দেয় স্থানীয় তৃণমূল নেতার ছেলে অভিজিত চট্টোপাধ্য়ায়। তাঁর যুক্তি ছিল যেহেতু নাগরিক পরিষেবার কাজে ব্যবহৃত জঞ্জাল সাফাইয়ের গাড়িগুলি রাখার জায়গা নেই, তাই এই ঘর বানিয়ে সেগুলি রাখার ব্যবস্থা করা হবে।


কিন্তু উত্তেজিত স্থানীয় কিউ ব্লকের বাসিন্দাদের একাংশ, এই প্রস্তাব মানতে রাজি ছিল না, সেইদিন প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে তাঁরা। বাসিন্দাদের দাবি মাফিক তখনকার মতো কাজ বন্ধ করে দেওয়া হলেও এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করাতে তাঁদেরকে দেখে নেওয়ার হুঁমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। অভিযোগের আঙুল স্থানীয় প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বোরো চেয়ারম্যান সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিত চট্টোপাধ্যায়-সহ কয়েকজন এর বিরুদ্ধে। জনতার ব্যাপক ক্ষোভের মুখে পড়ে তার হয়ে ক্ষমা চান তৃণমূল নেতা সুনীল চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিত চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সগরভাঙা কলোনির কিউ ব্লকের বাসিন্দাদের একাংশর গুরুতর অভিযোগ, রীতিমতো বাইক বাহিনী তাদের ওপর নজরদারি শুরু করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, নিজেদের পিঠ বাঁচাতে দুর্গাপুর নগর নিগমের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু কলোনি সংলগ্ন ঘুসিকডাঙাতে রেলের জমিতে গড়ে ওঠা রেলের উচ্ছেদের নোটিস পাওয়া বস্তিবাসিদের বসানোর চেষ্টা চলছে ঐ সরকারি জমিতে।অবিলম্বে সরকারি জমির ওপর তৈরি এই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার দাবি জানায়, স্থানীয় কিউ ব্লক সরকারি হাউজিং কলোনির বাসিন্দাদের একাংশ। এই বিষয়ে সরব বিরোধী বিজেপি ও সিপিআইএম নেতৃত্ব।


আরও পড়ুন, 'ত্রিপুরায় নোটার থেকেও কম ভোট পাবে তৃণমূল', বললেন শুভেন্দু


মাস খানেক আগেই এই সগরভাঙা কলোনিতে সরকারি আবাসন আর অব্যবহৃত জমিগুলি দেখার জন্য বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা সরকারি হাউজিং কলোনিতে আসেন, কথা বলেন আবাসিকদের সঙ্গে। কীভাবে সরকারের অব্যবহৃত জমিকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি সরকারি এই দফতরের আবাসন দখল মুক্ত করার ওপর জোর দেন। আর সেখানেই এবার সেই সরকারি জমি দখল করে বেআইনি নির্মাণকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে এই বেআইনি নির্মাণ করে প্লট করে করে বিক্রি করে দেওয়ার। যদিও বিরোধীদের অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলে দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা দুর্গাপুর পুরসভার চার নম্বর বোরো চেয়ারম্যান সুনীল চ্যাটার্জী, উল্টে এর জন্য তিনি স্থানীয় সরকারি হাউজিং দফতরের এক শ্রেণীর আধিকারিকদের বিরুধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সরব হয়েছেন। শাসক দলের নেতা খোদ সরকারি দফতরের এক শ্রেণীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হওয়াতে বিরোধীরা বলছেন এতদিন যে দুর্নীতির অভিযোগে তারা সরব ছিলেন আজ খোদ শাসক দলের এক নেতা একই অভিযোগ করে তাদের অভিযোগযে শীলমোহর দিয়ে দিলেন। এতকিছুর পরও কাজ না হলে প্রয়োজনে তারা সরকারি জমির ওপর বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলবেন বলে হুঁশিয়ারি স্থানীয়দের।