সোমনাথ দাস, চন্দ্রকোনা : দীর্ঘ ১০ বছর পর অবশেষে আপাতত শিকলবন্দি জীবন থেকে মুক্ত বছর সাতাশের মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুরের শিকলবন্দি যুবক প্রশান্ত পূজারীকে নিয়ে যাওয়া হল চিকিতসার জন্য। সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরই গতকাল বিকেলে ওই যুবকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন ব্লকের বিডিও, জয়েন্ট বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। রাতে দেখা করতে যান চন্দ্রকোনা বিধানসভার বিধায়ক অরূপ ধারাও। তাঁরা কথা বলেন যুবকের মায়ের সঙ্গে। এরপরই আজ শিকলবন্দি প্রশান্তকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।  


স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন সাতাশ বছরের প্রশান্তকে তাঁর মা ছবি পূজারী বাধ্য হয়ে বাড়ির উঠোনের খুঁটিতে বেঁধে রাখতেন। ছেলের চিকিৎসা করানোর জন্য তিনি বাড়ি বাড়ি ভিক্ষাও করেছেন। ছেলের চিকিৎসা করানো এবং সংসার চালাতে গিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটছিল তাঁর। রেশন ছাড়া কোনও সরকারি সাহায্যই পাননি বলে জানিয়েছিলেন ছবি দেবী। অবশেষে গতকাল সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরই টনক নড়েছে জেলা থেকে ব্লক প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের। 


সূত্রের খবর, রবিবার সকালে প্রথমে চন্দ্রকোনা দুই নম্বর ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের অধিনে থাকা চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচের নির্দেশে এদিন শিকলবন্দি যুবক প্রশান্ত পূজারীর বাড়িতে যান আরবিএসকে-র মেডিক্যাল অফিসার ড. অমল পান ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। যুবকের মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। এরপর মানসিক পরিস্থিতি যাচাই করতে গল্পের ছলে দীর্ঘক্ষণ প্রশান্ত পূজারীর সঙ্গে কথা বলেন ড. অমল পান। যুবকের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করিয়ে তা পাঠানো হয় চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ ও ব্লক প্রশাসনের কাছে। এর কিছুক্ষণ পরই বিডিও অমিত ঘোষ, চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ ড. গৌতম প্রতিহার ও মহকুমাশাসকের দফতরের এক আধিকারিক যুবকের বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যান। মা ছবি পূজারী শিকল খুলে তাঁকে স্নান করিয়ে নতুন পোশাক পরিয়ে তৈরি করে দেন। অ্যাম্বুলেন্সে যুবকের সঙ্গে তাঁর মা-ও যান। বিডিও এবং হাসপাতালের বিএমওএইচ-র পক্ষ থেকে জানা যাচ্ছে, চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রথমে যুবকের প্রাথমিক চিকিতসা করানো হবে এবং আরও কিছু পরীক্ষা করানো হবে। পরবর্তীকালে প্রয়োজন মতো চিকিতসার প্রয়োজনে তাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়াও হতে পারে। এতদিন ধরে ভিক্ষে করে করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। এবার সরকারি উদ্যোগে ছেলের চিকিৎসা হবে, এই আশায় বুক বেঁধেছেন মা ছবি পূজারী।


আরও পড়ুন-


শিকলে বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে, দোরে দোরে ভিক্ষা করে অসহায় মা