সৌমেন চক্রবর্তী, পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার হিড়িক। ১০ দিনে ২ কোটি টাকা তুলে নিলেন গ্রাহকেরা। সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনের মনোনয়ন জমার দিন তুমুল গন্ডগোলের অভিযোগ। ঝামেলার জেরে আতঙ্কে কাঁটা গ্রাহকদের বড় অংশ। লিমিট বেঁধে দিলেও টাকা তোলার হিড়িক কমেনি, দাবি ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের। ব্যাঙ্কের উপর আস্থা নেই, সাফ জানিয়েছেন গ্রাহকদের একাংশ। সন্ত্রাসের ভয়ে এই কাণ্ড বলে কটাক্ষ বিরোধীদের। যদিও মনোনয়ন জমার দিন কোনও অশান্তি হয়নি বলে দাবি করেছে শাসকদল। 

এক গ্রাহকের সাফ দাবি, ভয়ে টাকা তুলে নিচ্ছি। সমিতির ওপর ভরসা রাখতে পারছি না। ৫৪ বছরের পুরনো সমবায় ব্যাঙ্ক। অথচ সেই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ওপরেই এখন আর ভরসা রাখতে পারছেন না পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর এলাকার বাসিন্দারা। 

কয়েকদিনের মধ্যেই এই সমবায় ব্যাঙ্কে ক্ষমতায় আসতে চলেছে তৃণমূল। আর সেই খবর মিলতেই টাকা নয়ছয়ের আশঙ্কায় কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে নিজেদের গচ্ছিত আমানত তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের গৌরা-সোনামুই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে। 

সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ১০ দিনে ২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। এই পরিস্থিতি রুখতে সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। গৌরা-সোনামুই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার সৈকত জানা বলেন, 'গ্রাহকরা টাকা তুলে নিচ্ছে এটা সত্যি। এখনও অবধি প্রায় ২কোটি টাকা উঠে গেছে। লিমিট (টাকা তোলার) বেঁধে দিতে বাধ্য হয়েছি। যদি প্রত্যেক দিন দু'শো-আড়াইশো আমানতকারী এসে টাকা তোলার কথা বলে, সেক্ষেত্রে আমরা এটা বাধ্য হয়েছি। এখন আপাতত ২০ হাজার টাকা।' 

কিন্তু কীসের ভয় তাড়া করছে গ্রাহকদের? 

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ১৭ ও ১৮ জুন এই সমবায় ব্যাঙ্কের ভোটের নমিনেশন পর্বে ব্যাপক গন্ডগোল হয়। এর আগে এই সমবায়সমিতি সিপিএমের দখলে ছিল। অভিযোগ, নতুন করে ভোটের জন্য বিরোধীদের কাউকেই মনোনয়ন তুলতে দেয়নি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। ওই সমবায় সমিতির ৫৩টি আসনের মধ্যে ৫৩টিতেই নমিনেশন জমা দেন শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। বিরোধীদের অভিযোগ, সমবায় সমিতি তৃণমূলের দখলে আসতে চলেছে বুঝেই তড়িঘড়ি টাকা তুলতে শুরু করেন গ্রাহকরা।

ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষ বলেন, 'এলাকার যারা সমবায়ের গ্রাহক, তাঁরা বুঝেছে ওই সমবায় যদি তৃণমূল দখল করে তাহলে সমস্ত টাকা যা আমানত আছে, সমস্ত টাকা নয়ছয় হয়ে যাবে। এই জন্যই মানুষ তাঁর আমানত তুলে নিচ্ছে।' 

পশ্চিম মেদিনীপুর সোনাখালি এরিয়া কমিটির সিপিএমের সম্পাদক অমল ঘোড়ুই বলেন, 'দাসপুর ২ নম্বর ব্লকে ইতিমধ্যে ৮-১০টা সমবায় সমিতি তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সমবায় সমিতিগুলি কোনওটা বন্ধ হয়ে গেছে। কোনওটা বন্ধ হওয়ার মুখে। কোটি কোটি টাকা ওখান থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের যাঁরা পরিচালনা করতেন তাঁরা টাকা নয়ছয় করেছেন, লুঠ করেছেন। তার ফলে জনগণের টাকা লুঠ হয়ে যাওয়ার কারণে আর এখানের ক্ষেত্রে জনগণ আর আস্থা রাখতে পারছেন না।' 

যদিও বিরোধীদের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা সিপিএমের উস্কানির দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল নেতৃত্ব।আগামী ১৩ জুলাই গৌরা-সোনামুই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ভোট। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নমিনেশনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা ঠুকেছে সিপিএম।১৭ জুলাই সেই মামলার শুনানির সম্ভাবনা।