কলকাতা: নিরলস সাহিত্যচর্চার জন্য বাংলা অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। বিশিষ্টজনদের মধ্যে নিজে যদিও মঞ্চে ওঠেননি পুরস্কার নিতে। তবে লেখালেখি যে তাঁর অত্যন্ত পছন্দের, বার বার জানিয়েছেন তা। তাঁর লেখা বইয়ের বিক্রিবাটাও যে কম নয়, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন বার বার। তবুও কবিতা লেখার ধরন নিয়ে বার বার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)। উড়ে এসেছে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টের  বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও (Justice Abhijit Ganguly) তাঁর লেখা ‘এপাং-ওপাং-ঝপাং’ কবিতাটিকে ‘অখাদ্য’ বলে কটাক্ষ করেছেন (Mamata Banerjee Poems) ।


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee Poems: ‘ওপাং ওপাং ঝপাং’, ‘হরে করে কম্বা’, কেন লেখেন এমন কবিতা, ব্যাখা করেছেন মমতা নিজেই


তবে শুধুমাত্র ‘এপাং-ওপাং-ঝপাং’ই নয়, ‘হরে করে কম্বা’ থেকে প্রায় সব লেখার জন্যই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মমতাকে। যদিও কটাক্ষ কানে তুলতে নারাজ মমতা। তাঁর যুক্তি, বাচ্চাদের জন্য় লিখতে গেলে, বাচ্চাই বনে যেতে হয়। রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য় নিশানা করা ছাড়া, মমতার কবিতা নিয়ে ব্য়ঙ্গ-বিদ্রুপের কিছু নেই, এমনটা মনে করেন তাঁর অনুগামীরাও। তাঁদের মতে, সরল এবং ব্যাঞ্জনা নির্ভর কবিতা লেখেন মমতা। দেশে-বিদেশে এমন ‘ননসেন্স রাইম’ বা আজব ছড়ার কার্যতই ছড়াছড়ি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং একশ্রেণির মানুষের রাজনৈতিক আদর্শের বিপরীত শিবিরে অবস্থান বলেই, মমতাকে কটাক্ষ সইতে হয়। রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাই আগেই বলেছিলেন, "একমাত্র বাঙালিদের একটি অংশই এমন করতে পারে। বলতে ইচ্ছে করে, রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি। অ-বাঙালিরা এমন করতেন না।”


সাহিত্যের ভাষায় বাঁধাধরা নিয়ম না মেনে, অর্থহীন, সারল্যে ভরা, হাস্য-কৌতুক উদ্রেককারী ছড়াকেই আসলে বলা হয় আজব ছড়া বা  কাণ্ডজ্ঞানহীন ছড়া, ইংরেজিতে 'ননসেন্স রাইম'। ‘এপাং-ওপাং-ঝপাং’, ‘হরে করে কম্বা’র মতো মমতা লেখা ছড়াগুলিও সেই গোত্রেই পড়ে বলে মত তৃণমূলের তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যেরও। তাঁর মতে, সমালোচকদের কটাক্ষের লক্ষ্য আসলে মমতা লেখা কবিতা নয়, ব্যক্তি মমতা। তাই বিতর্কের মধ্যে সরাসরি অন্নদাশঙ্কর রায়ের উল্লেখ টেনে আনেন দেবাংশু। বাংলার অকাদেমি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দেবাংশু 'আজব ছড়া' বই থেকে অন্নদাশঙ্করের লেখা 'পিং পং' কবিতাটি তুলে ধরেন। এই কবিতা অন্নদাশঙ্কর না লিখে মমতা লিখে থাকলে, তারও সমালোচনা হতো বলে বুঝিয়ে দেন তিনি।


আরও পড়ুন: Justice Abhijit Ganguly: 'এপাং-ওপাং-ঝপাং...! এমন অখাদ্য জিনিস রাখবেন না', বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যে বিতর্ক


যদিও বিপরীত অবস্থানও নিতে দেখা যায় অনেককে। বাংলা অকাদেমি নিয়ে বিতর্কে অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস উপদেষ্টা মণ্ডলী থেকে পদত্যাগ করেন। মমতাকে পুরস্কৃত করায় 'বাংলা কবিতা আক্রান্ত' বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মমতা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমানে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীও বটে। তাঁর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে গোটা দেশে। তাঁর লেখা ছাপার জন্য যে প্রকাশকরা উদগ্রীব হয়ে থাকবেন, অর্থহীন লেখা হলেও যে 'স্তাবকে'র অভাব পড়বে না, তা বলা বাহুল্য।  তাই মুখ্যমন্ত্রীর লেখালেখির বিরোধিতা না করলেও, তাঁকে বাংলা অকাদেমির মতো পুরস্কার দেওয়া বাড়াবাড়ি বলেই মত ছিল তাঁর।


তবে প্রশংসা হোক বা সমালোচনা, কোনও কিছুই গায়ে মাখতে নারাজ মমতা। লেখার ধরন নিয়ে সমালোচনার জবাবে তাঁর সাফ বক্তব্য, “ভাল চিন্তা মানুষকে বিকশিত করে। আমি যখন ছোট ছিলাম, ছোট ছোট কবিতা পড়তাম, 'আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে', ‘কাঠবেড়ালি কাঠবেড়ালি,' এ সব নিয়ে কেউ কখনও প্রশ্ন করেনি। এখন দেখি, এরা কোন গ্রুপ জানি না। হয়ত সমাজের বড় অংশ হবেন। তাঁদের সম্মান করি। তবে ভাবতে বলব। আপনি যখন বাচ্চার জন্য কিছু  তৈরি করবেন, তখন আপনাকেও প্রথমে বাচ্চা সাজতে হবে। মনটা হতে হবে বাচ্চার মতো। তবেই বাচ্চাকে তার মতো করে শিক্ষা দিতে পারবেন।”