সৌভিক মজুমদার ও প্রদ্যোৎ সরকার, কলকাতা: চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণায় অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহাকে (TMC MLA Tapas Saha) কেন গ্রেফতার করা হয়নি? কেন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি? জানতে চেয়ে রাজ্যের হলফনামা (Affidavit Of State) ও কেস ডায়েরি (Case Diary) তলব করলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা (Justice Rajasekhar Mantha)। আদালতের উপর আস্থা আছে। প্রতিক্রিয়া তাপস সাহার।


কী ভাবে নাম জড়াল তাপস সাহার?
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি রয়েছেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। পরিণতি কি একই হতে চলেছে তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার ক্ষেত্রেও? বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের এক প্রশ্নে মাথাচাড়া দিল সেই জল্পনা!! কেন গ্রেফতার করা হয়নি তাপস সাহাকে? রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চাইলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। বিধায়কের অবশ্য প্রতিক্রিয়া, 'আমরা ভারতের মানুষ। বিশেষ করে আমি তো বিধায়ক। আমরা আইন মেনে চলব। আইনের প্রতি আস্থা ভরসা সমস্তটাই ছিল। গত এক বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে সে ষড়যন্ত্র চলছিল, আজ মহামান্য আদালত সব কিছু শুনে সব কিছু বুঝে যা বলেছে, যেটা দিয়েছে তা হচ্ছে ইডি, সিবিআই হবে না।' ২০১৮ সাল থেকে স্কুলে চাকরি দেওয়ার অভিযোগে, তাপস সাহার বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে, হাইকোর্টে মামলা করেছেন বিজেপি নেতা ও আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। সম্প্রতি, ট্যুইটার হ্যান্ডলে একটি অডিও ক্লিপও শেয়ার করেন তরুণজ্যোতি। সেখানে প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারির চাকরি দেওয়া ও তার জন্য টাকার লেনদেনের বিষয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে কথা হচ্ছে। মামলাকারী বিজেপি নেতার দাবি, ফোনের একটি কণ্ঠ হচ্ছে তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার। যদিও এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। টাকার বিনিময়ে স্কুলে চাকরি দেওয়ার অভিযোগে তাপস সাহা-সহ চারজনের বিরুদ্ধে FIR-ও দায়ের হয়। তাপস সাহা ছাড়া বাকি তিনজনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। 
কিন্তু, নির্দিষ্ট সময়ে চার্জশিট পেশ না করায়, নিম্ন আদালতে তাঁরা জামিন পেয়ে যান। এই প্রেক্ষাপটেই বৃহস্পতিবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা, রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চান, কেন গ্রেফতার করা হয়নি তাপস সাহাকে? কেন তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি? তার উত্তর হলফনামা দিয়ে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। মামলার কেস ডায়েরিও তলব করেছেন তিনি। হাইকোর্টে CBI-এর তরফে জানানো হয়েছিল, তাপস সাহার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে, তাদের কোনও অসুবিধা নেই। এই প্রেক্ষাপটে CBI-কে তদন্তভার দেওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরাল করে বিচারপতি এদিন বলেন,' নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইতিমধ্যেই তদন্ত করছে CBI, এক্ষেত্রেও একই অভিযোগ। তাই আদালত ভাবছে যে, একই বিষয়ে দু'টি সংস্থা তদন্ত করলে তদন্ত প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে না তো?' সেই সঙ্গে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১০ এপ্রিল। ততদিন তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে রাজ্য পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখা। সেই সঙ্গে বিচারপতি মান্থা আরও বলেন, তাপস সাহাকে গ্রেফতার না করার বিষয়টি ছাড়া, এখনও পর্যন্ত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আদালতের কোনও প্রশ্ন নেই।


হলফনামা তলব
অন্যদিকে, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির শিক্ষক দীপক জানার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলাতেও রাজ্য সরকারের হলফনামা তলব করেছে আদালত। শিক্ষা ও খাদ্য দফতরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, শুধু টাকা তোলাই নয়, টাকা ফেরত চাইলে, তৃণমূলের নাম করে হুমকিও দিতেন দীপক। ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের দাবি তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চাকরিপ্রার্থীরা। সেই মামলাতেই রাজ্যের হলফনামা তলব করেছেন বিচারপতি। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১০ এপ্রিল।

আরও পড়ুন:রেড রোডে ধর্নায় মমতা, সমর্থন জানালেন পার্থ, স্মরণ করালেন নেত্রীর লড়াইয়ের কথা