কলকাতা:  নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়ার পরই তাঁর থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছিল দল। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গ যে তিনি ছাড়েননি, তা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। কলকাতার রেড রোডে তৃণমূলনেত্রী (TMC) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নায় এ বার সমর্থন জানালেন তিনি (Mamata Banerjee)। জানালেন, বাংলার প্রাপ্য মমতা আদায় করেই ছাড়বেন। 


আদালত চত্বরেই সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন পার্থ


বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হয় পার্থকে। আদালত চত্বরেই সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন পার্থ। মমতার ধর্না নিয়ে প্রশ্ন করলেন বলেন, "কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই চিরকালই ছিল। শুধুমাত্র ধর্না নয়, তিনি বাংলার হয়ে দীর্ঘদিন লড়াই করা একজন সংগ্রামী নেত্রী। তিনি বাংলার ভাগ্য দেখবেন, উন্নয়ন দেখবেন। বাংলার প্রাপ্য অর্থ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদায় করেই ছাড়বেন।" অর্থাৎ আরও একবার মমতা এবং তৃণমূলের পাশে থাকার বার্তা দিলেন পার্থ। 


আরও পড়ুন: Partha Chatterjee: 'নিজের প্রজ্ঞায় কথা বলেছি, কেউ শিখিয়ে দেয়নি', শুভেন্দুকে জবাব পার্থর


ঘটনাচক্রে একদিন আগে পার্থর নাম শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও।  তবে তাঁর বার্তা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। অভিষেক জানান, তৃণমূল দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস করে না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করে তা বুঝিয়ে দিয়েছে দল। অভিষেককে বলতে শোনা যায়, "যদি এসএসসি কাণ্ডে প্রসন্ন রায়ের বাড়ি থএকে দিলীপ ঘোষের বাড়ির দলিল উদ্ধার হয়, কেন দিলীপ ঘোষের কাস্টোডিয়াল ইন্টারোগেশন হবে না? বিজেপি করলে আইন আলাদা? তৃণমূল যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করে, তোমাদের ক্ষমতা থাকলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, শুভেন্দু অধিকারী, বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে সাসপেন্ড করে দেখাও। তার পর প্রশ্ন তুলবে।" 


এর আগে, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূল হেরে যাওয়ার পরও ইতিবাচক মন্তব্যই করেছিলেন পার্থ


তার পরই এ দিন মমতার সমর্থনে মুখ খুললেন পার্থ। এই প্রথম নয় যদিও। এর আগে, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূল হেরে যাওয়ার পরও ইতিবাচক মন্তব্যই করেছিলেন পার্থ। সাগরদিঘিতে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাসের কাছে তৃণমূলের পরাজয়ের পর যখন কাটাছেঁড়া চলছে, সেই সময় পার্থকে বলতে শোনা যায়, "তৃণমূল দলটি থাকার, থাকবে। আরও বাড়বে।" 


এ দিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও একহাত নেন পার্থ। শুভেন্দু, দিলীপ ঘোষ, সুজন চক্রবর্তীরা চাকরির সুপারিশ করেছিলেন অভিযোগ করেছিলেন পার্থ। তাঁর সেই মন্তব্যের সঙ্গে কুণাল ঘোষের একটি ট্যুইটের বক্তব্য মিলে গিয়েছিল। তা নিয়ে পার্থকে শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন শুভেন্দু। এ দিন শুভেন্দুর সেই অভিযোগের জবাব দেন পার্থ। বলেন, "আমি অসত্য ভাষণের কোনও উত্তর দিই না। অসত্য, বাস্তবহীন এবং কোনও তথ্যনির্ভর নয়। আমি জীবনে যা করি, উনি বিরোধী দলনেতা, ভাল করে জানেন। আমার বিদ্যা, বুদ্ধি এবং রাজনতিক প্রজ্ঞার মধ্যে থেকেই কথা বলি আমি। আমাকে কেউ শিখিয়ে দেয় না। আমি অন্তত ওঁর কাছ থেকে প্রত্যাশা করি না।"


নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ানোর পর থেকেই বার বার বিদ্ধ হয়েছেন পার্থ। গত সপ্তাহে তা নিয়ে মুখ খোলেন পার্থ। আদালতে ঢোকার সময় বলেন, "যে সুজন চক্রবর্তী, দিলীপবাবু, শুভেন্দুবাবুরা বড় বড় কথা বলছেন, তাঁরা নিজের দিকে দেখুন, উত্তরবঙ্গে তাঁরা কী করেছেন। ২০০৯-'১০ সালের সিএজি রিপোর্ট পড়ুন। সমস্ত জায়গায় তদ্বির করেছেন, যেহেতু আমি বলেছি করতে পারব না। আমি নিয়োগ কর্তা নই, আমি এ ব্যাপারে কোনও সাহায্য় তো দূরের কথা, কোনও বেআইনি কাজ করতে পারব না। শুভেন্দুর ২০১১-'১২ সালটা দেখুন না! DPSC টা দেখুন না, কী করেছিল তারা!"