সুমন ঘড়াই, মুন্না আগরওয়াল ও প্রবীর চক্রবর্তী: কেন বাংলায় বারবার সফট টার্গেট হচ্ছেন আইনরক্ষকরা? অতীতে পুলিশকে আক্রমণ বা হুমকি হুঁশিয়ারির ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই কি প্রশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে হামলাকারীরা (Attacks on Police)? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? অতীতে আক্রান্ত পুলিশকর্মীদের পরিবারের সদস্যদেরই বা মত কী? (West Bengal Police)


রাজ্যে বার বার আক্রান্ত হয়ে চলেছে পুলিশ


কালিয়াগঞ্জ থেকে কালিয়াচক, কুলটি থেকে কলকাতা, রাজ্যে বার বার আক্রান্ত হচ্ছে পুলিশ (Kolkata News)। ইদানীং কালে পর পর এমন ঘটনা সামনে এসেছে।২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে, ছাত্রভোটের মনোনয়ন তোলা নিয়ে তুমুল সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে মৃত্যু হয় ডিউটিতে থাকাকালীন সাব ইন্সপেক্টর তাপস চৌধুরীর। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের প্রাক্তন বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার বিরুদ্ধে। আজ অবধি সেই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি হয়নি!


প্রয়াত তাপস চৌধুরীর স্ত্রী মিনতি চৌধুরী বলেন, "পুলিশ যেন সহজলভ্য হয়ে গেছে। যে কেউ পুলিশকে ধরে পেটাতে পারে। সবার জন্য পুলিশ জীবন দেয়, আর পুলিশকেই টার্গেট করছে। আমার স্বামীকেও মেরে পেলল, এখনও শাস্তি হল না। সরকারকে অনুরোধ, আপনি কড়া হাতে মোকাবিলা করুন। ফ্যামিলি ছেড়ে কাজ করবে, আর তাদের এরকম মার খেতে হবে। পুলিশকে মারা যেন জলভাত হয়ে গেছে। এইভাবে যদি করে, তাহলে তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আর পুলিশে চাকরিই করবে না।"


আরও পড়ুন: Sukanya Mondal: অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা, কেনা হয়েছে জমি, কিন্তু নেই হিসেব, নজরে অনুব্রত-কন্যার সম্পত্তি


২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পুলিশের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দেন অনুব্রত মণ্ডল। পুলিশকে বোমা মারার কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। তার পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সালে বীরভূমের দুবরাজপুরে, সাব ইন্সপেক্টর অমিত চক্রবর্তীকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বোমার ঘায়ে মৃত্যু হয় তাঁর। স্বামীর মৃত্যুতে পুলিশের চাকরি পান অমিতের স্ক্রী পুতুল চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, "দলমত নির্বিশেষে কাজ করতে পারছি না। আমাদের তো দলদাস করে রেখেছে!"

দার্জিলিংয়ে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিক হত্যাকাণ্ডে এফআইআর-এ নাম ছিল বিমল গুরুংয়ের। কিন্তু ২০২১-এর ভোটের আগে সেই তাঁকেই দেখা যায় পুলিশি নিরাপত্তায় কলকাতায় ফিরছেন।  বিধানসভা নির্বাচনে খোলাখুলি তৃণমূলকে সমর্থন কথা জানান তিনি।


উবে গিয়েছে উর্দির ভয়!

আর তাতেই নানা মহলে প্রশ্ন, পুলিশ মেরে কিংবা হুমকি দিয়েও পার পাওয়া যায়, এটা বুঝতে পেরেই কি উর্দির ভয় উবে গিয়েছে? পুলিশের রাজনীতিকরণের ফলই কি এটা?

কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় বুধবার  নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, বৈঠকে ডিজিকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, "পুলিশ কী করছিল? এই ঘটনা ঘটল কী করে? পুলিশ অ্যাক্টিভ ছিল না? এসপি-রা কী করছিলেন? ইমিডিয়েট ব্যবস্থা নিন। এরকম ঘটনা বার বার ঘটছে। ইনটেলিজেন্স কী করছিল? তাদের কাছে খবর ছিল না?"

এর পর তিনি বলেন, "পুলিশ বুট পরে গটগট করে হাটুক। তাহলেই বুলেটের কাজ করবে। আমরা আর্মড পুলিশকে কাজে লাগাচ্ছি না। কিন্তু তার পরও আপনারা লাঠি ব্যবহার কেন করেন না? ভয় দেখান। লাঠি উঁচিয়ে ভয় দেখান।"

এ দিকে মঙ্গলবার কালিয়াগঞ্জ থানার এক টোটচালক গুলিবিদ্ধ হন বলে অভিযোগ। যদিও, পুলিশের দাবি, কোনও গুলি চালানো হয়নি, রবার বুলেট ব্যবহার করা হয়েছিল।