৮ জানুয়ারি: আনন্দপুরে গ্যাংওয়ার, গুলি


বছরের শুরুতেই ভয়াবহ গ্যাংওয়ারের সাক্ষী ছিল কলকাতাবাসী। ৮ জানুয়ারি বিকেলে, একের পর এক গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে আনন্দপুর। গুলশন নগরে দুষ্কৃতীদের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ছবি ভাইরাল হয়। বহুতলের ছাদ থেকে চলতে থাকে গুলি। জখম হন দু’জন। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রোমোটিং ও এলাকা দখলকে কেন্দ্র করেই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধে। এই ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


 ৪ জানুয়ারি: জুনিয়র মৃধা খুনে গ্রেফতার


প্রায় ১০ বছর আগে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়র মৃধাকে খুনের অভিযোগে প্রেমিকা প্রিয়ঙ্কাকে গ্রেফতার করে CBI। ২০১১ সালের ১২ জুলাই বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে জুনিয়র মৃধার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। প্রথমে দুর্ঘটনা মনে করা হলেও, পরে জানা যায় গুলি করে খুন করা হয়েছিল তাঁকে। CID খুনের কিনারা না করতে পারায়, কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে পরিবার। আদালতের নির্দেশে তদন্তভার নেয় CBI।


 ১৫ জানুয়ারি: শুভ্রা কুণ্ডু গ্রেফতার


রোজভ্যালি মামলায়, ১৫ জানুয়ারি গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডুকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে সংস্থার কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। সেই টাকা তিনি বিদেশেও পাচার করে থাকতে পারেন বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। ২০১৫ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল গৌতম কুণ্ডুকে।


 ১৩ ফেব্রুয়ারি – বাবু মাস্টারের উপর হামলা


১৩ ফেব্রুয়ারি বাসন্তী হাইওয়েতে হামলার মুখে পড়েন, তৃণমূল ছেড়ে আসা বিজেপি নেতা বাবু মাস্টার ওরফে ফিরোজ কামাল গাজি। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ব্যাপক বোমাবাজি করা হয়। গুরুতর জখম হন বাবু মাস্টার ও তাঁর গাড়ির চালক। তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠলেও, তারা সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। ২৭ অক্টোবর বিজেপি ছাড়েন বাবু মাস্টার।


 ১৭ ফেব্রুয়ারি: জাকির হোসেনকে বোমা


বিধানসভা ভোটের আগে, ১৭ ফেব্রুয়ারি, মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে, বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন, তৎকালীন শ্রমপ্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তদন্তে নেমে দু’জনকে গ্রেফতার করে  CID। পরে এই ঘটনার তদন্তভার নেয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা NIA। প্রাক্তন মন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে চার্জশিটে জানায় NIA। এবারও জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনে, তৃণমূলের টিকিটে লড়ে, জেতেন জাকির।


 ১৯ ফেব্রুয়ারি: মাদকাণ্ডে গ্রেফতার পামেলা গোস্বামী


মাদককাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে, ১৯ ফেব্রুয়ারি, নিউ আলিপুরে গ্রেফতার হন বিজেপির তৎকালীন যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক পামেলা গোস্বামী। তাঁর কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকার কোকেন বাজেয়াপ্ত হয় বলে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়। গ্রেফতারের পর বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে ফাঁসানোর অভিযোগ তোলেন পামেলা।


 ২৩ ফেব্রুয়ারি: রাকেশ সিং গ্রেফতার


মাদককাণ্ডে পামেলা গোস্বামীর গ্রেফতারির চারদিন পরই বিজেপি নেতা রাকেশ সিং-কেও গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৩ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বর্ধমানের গলসি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সেদিন  রাকেশ সিংয়ের বাড়িতে পুলিশি অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। দুপুরে সেখানে পৌঁছয় পুলিশের বিশাল বাহিনী। কিন্তু, ঢোকার সময় পুলিশকে বাধা দেন বিজেপি নেতার বাড়ির নিরাপত্তায় থাকা CISF জওয়ানরা। এরপর পুলিশের সামনে এসে দাঁড়ান রাকেশ সিংয়ের ছেলে। দীর্ঘক্ষণ চলে বচসা। সেদিন রাতেই রাকেশ সিংকে গ্রেফতার করা হয়। তল্লাশিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে, তাঁর দুই ছেলেকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।


. ১০ মার্চ: নন্দীগ্রামে জখম মমতা


বিধানসভা ভোটের আগে, নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে মনোনয়ন পেশের দিন, সেখানে জখম হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরুলিয়া বাজারে গাড়ি থেকে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, তখনই ৪-৫ জন যুবক ধাক্কা দেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁ পায়ে, কোমরে ও মাথায় চোট লাগে। গ্রিন করিডর করে কলকাতায় আনা হয়। হুইল চেয়ারে বসেই গোটা বিধানসভা ভোটের প্রচার করেন তিনি।


 ১২ মার্চ: কয়লা পাচারকাণ্ডে প্রথম গ্রেফতার


কয়লা পাচারকাণ্ডে প্রথম গ্রেফতার করে CID। মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি, ওরফে লালার ঘনিষ্ঠ রণধীর সিং-কে অন্ডাল থেকে গ্রেফতার করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই কয়লা ও গরু পাচারকাণ্ডে অভিযুক্ত, তৃণমূলের যুব নেতা বিনয় মিশ্রর ভাই বিকাশকে দিল্লিতে গ্রেফতার করে ED। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টে রক্ষাকবচ পেয়ে যান লালা। ফলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও গ্রেফতার করতে পারেনি CBI। এই ঘটনার তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে ECL কর্তৃপক্ষ ও সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা CISF-এর ভূমিকাও।


 ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২৯ মার্চ: নিমতায় আক্রান্ত বিজেপি কর্মী


২৭ ফেব্রুয়ারি, উত্তর চব্বিশ পরগনার নিমতায়, বিজেপি কর্মী গোপাল মজুমদারের বাড়িতে চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাঁর ৮৫ বছরের মা-কে বেধড়ক মারধর করা হয়। ২৯ মার্চ, বিধানসভা ভোটের মাঝেই মৃত্যু হয় আক্রান্ত শোভা মজুমদারের। ৫ অভিযুক্ত আদালতে আত্মসপর্ণন করেন।


 ১০ এপ্রিল: শীতলকুচিতে গুলি


১০ এপ্রিল, চতুর্থ দফার বিধানসভা ভোটের দিনে, রক্তাক্ত হয় কোচবিহারের শীতলকুচি। জোড়পাটকির ১২৬ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হন চার জন। বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে জানান, একটি দল অন্য দলকে ভোটদানে বাধা দিচ্ছিল।  ইভিএম ও বুথ ভাঙচুর করা হয়। পোলিং অফিসার ও হোম গার্ডকে মারধরও করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কুইক রেসপন্স টিম। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। এরপরই আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালায়। ঘটনার তদন্তভার নেয় CID। ২৯ এপ্রিল, পুনর্নির্বাচনের দিন ফের উত্তেজনা ছড়ায় ১২৬ নম্বর বুথে। ভোট মিটতেই কোচবিহারের তৎকালীন পুলিশ সুপার দেবাশিস ধরকে সরিয়ে দেওয়া হয়।


 ৮ মে- কসবায় হিট অ্যান্ড রান


৮ মে, কসবায় একের পর এক গাড়িকে ধাক্কা মারে বেপরোয়া BMW। প্রাণ হারান এক পথচারী। চার অভিযুক্ত ও হুকা বারের মালিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ভয়ঙ্কর করোনাআবহের মধ্যেও কীভাবে খোলা রাখা হয়েছিল বার? সেই নিয়ে ওঠে প্রশ্ন।


 ২ মে- কাঁকুড়গাছিতে অভিজিৎ সরকার খুন


২ মে, বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিন কাঁকুড়গাছিতে, খুন হন বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার। অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। FIR-এ নাম থাকা ২০ জনের মধ্যে, ৮ জনকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। পরে তাঁদের নিজেদের হেফাজতে নেয় CBI। বাকি ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তারা। অন্যদিকে চার মাস পর অভিজিতের মৃতদেহ হাতে পায় পরিবার। মর্গ থেকে মৃতদেহ নেওয়ার সময়ে ধুন্ধুমার বাঁধে NRS-এ। হোমগার্ডকে চড় মারেন বিজেপি নেতা দেবদত্ত মাজি।


 ৯ জুন: নিউটাউনের শ্যুটআউট


৯ জুন নিউটাউনের বুকে ঘটে যায়, হাড় হিম করা এনকাউন্টার। পরপর গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে সাপুরজির সুখবৃষ্টি আবাসন। STF-এর গুলিতে মৃত্যু হয় পাঞ্জাবের কুখ্যাত গ্যাংস্টার জয়পাল ভুল্লার ও তাঁর সঙ্গী যশপ্রীত সিং খাড়ারের। দীর্ঘদিন ধরে আবাসনেই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে লুকিয়ে ছিল তারা। লুধিয়ানায় দুই ASI-কে খুন-সহ বহু অপরাধে অভিযুক্ত ছিল ভুল্লার।


 ১৯ জুন: কালিয়াচকে বাবা, মা, বোন, ঠাকুমাকে খুন


এবছর, মালদার কালিয়াচকের ১৯ বছরের এক তরুণের কাণ্ডকারখানা, সারা রাজ্যের মানুষের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে। বাবা-মা-ঠাকুমা-বোনকে খুন করে বাড়িতেই কবর দিয়েছিলেন মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা আসিফ মহম্মদ। বাড়িতেই মিলেছিল গোপন রাস্তা। ধৃতের দাদার দাবি, তাঁকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন ভাই। পুলিশের কাছে তাঁর কীর্তিকলাপ ফাঁস করেন দাদাই। ১৯ জুন উদ্ধার করা হয়, চারজনের মৃতদেহ।


 ২ জুন: কলকাতা মেডিক্যালে  টসিলিজুমাব চুরি


জুন মাসে, ১১ লক্ষ টাকার ২৬টি টসিলিজুমাব ইঞ্জেকশন গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনায়, চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নাম জড়ায় তৃণমূল বিধায়ক ও চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক দেবাংশী সাহার। তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও অনিয়মের কথা উল্লেখ ছিল বলে সূত্রের খবর। বদলি করা হয় অভিযুক্ত সিস্টার ইন চার্জকে।


 ১০ জুন: কালিয়াচকে চিনের নাগরিক ধৃত


অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার অভিযোগে, ১০ জুন মালদার মিলিক সুলতানপুরে, চিনের নাগরিক হান জুনওয়েকে গ্রেফতার করে BSF। তাঁর নামে ব্লু-কর্নার নোটিস জারি করা হয়েছিল। ধৃতের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ভারতীয় সিম চিনের পাচারের অভিযোগ ছিল। এর আগেও বেশ কয়েকবার ভারতে এসেছিলেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের হান জুনওয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগ থাকায়, ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে সেরাজ্যে নিয়ে যায় যোগী সরকারের পুলিশ।


 ২৩ জুন: ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ড, দেবাঞ্জন গ্রেফতার


করোনাকালে সাধারণ মানুষ যখন ভ্যাকসিন পেতে মরিয়া, ঠিক তখনই তোলপাড় ফেলে দেয় জাল ভ্যাকসিনকাণ্ড। সামনে আসে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। ২৩ জুন কসবা থেকে গ্রেফতার করা হয় দেবাঞ্জন দেবকে। যিনি দিনের পর দিন ভুয়ো IAS পরিচয় দিয়ে, ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প চালাচ্ছিলেন! এমনকী, পরে জানা যায়, সেই ক্যাম্পে যে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছিল, সেটাও ভুয়ো। আর সেই ভুয়ো ক্যাম্প থেকে ভুয়ো ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন খোদ তৃণমূল সাংসদ মিমি চক্রবর্তী অবধি। ভুয়ো IAS দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে হেভিওয়েট রাজনীতিকদের ছবিও সামনে আসে। তদন্তে নেমে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে পুলিশ।


 হরিদেবপুর ও সুভাষগ্রামে JMB গ্রেফতার


১১ জুলাই, হরিদেবপুর থেকে তিন সন্দেহভাজন JMB জঙ্গিকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতরা ফেরিওয়ালা সেজে ঘুরে বেড়াত। পরে এই ঘটনার তদন্তভার নেয় NIA। দোসরা নভেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষগ্রাম থেকে আব্দুল মান্নান নামে আরেক সন্দেহভাজন JMB জঙ্গিকে গ্রেফতার করে NIA। সূত্রের খবর, হরিদেবপুরে ধৃত জঙ্গিদের জেরা করেই উঠে এসেছিল তাঁর নাম।


 ২ অগাস্ট: খোঁড়া বাদশা গ্রেফতার, বিষমদকাণ্ডে যাবজ্জীবন


এক দশক পর, এবছরই সংগ্রামপুর বিষমদকাণ্ডে সাজা ঘোষণা করে আলিপুর জেলা-দায়রা আদালত। খুন, গুরুতর ক্ষতিসাধন-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির চারটি ধারায় মূল অভিযুক্ত নূর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১১-র ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট, উস্তি, মন্দিরবাজার-সহ ডায়মন্ড হারবার মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিষমদ খেয়ে শুরু হয় মৃত্যুমিছিল। বিষমদ খেয়ে মোট ১৭২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অনেকের অঙ্গহানিও হয়েছিল। এরপরই, জনরোষ আছড়ে পড়ে নুর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশার বাড়িতে। তার মদের ভাটি মাটিতে মিশিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।


 ১৩ অগাস্ট- সজল ঘোষ গ্রেফতার


বাড়ি থেকে এক বিজেপি নেতার গ্রেফতারি ঘিরে, এবছর নাটকীয় পরিস্থিতি দেখেছে কলকাতাবাসী। ১৩ অগাস্ট, লাথি মেরে বাড়ির সদর দরজা ভেঙে, বিজেপি নেতা সজল ঘোষকে গ্রেফতার করে মুচিপাড়া থানার পুলিশ। তারপর টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। স্লোগান দিতে দিতে থানা অবধি যান সজল ঘোষ। পরে অবশ্য তিনি জামিন পান।


 ২২ অগাস্ট: শ্যামাপ্রসাদ গ্রেফতার


বিপুল টাকা তছরুপের অভিযোগে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। প্রথমে কংগ্রেসের হয়ে, পরে তৃণমূলের হয়ে বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব সামলান তিনি। ২০১৬-তে বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেলেও, বিষ্ণুপুর  পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসকও নিযুক্ত হন। কিন্তু, গত বছর ওই পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। সেই  অভিযোগেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।


 ২৬ অগাস্ট: শিক্ষিকাদের বিষপান


উত্তরবঙ্গের জেলায় বদলি করে দেওয়ার প্রতিবাদে বিকাশভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান কয়েকজন শিক্ষিকা। প্রকাশ্যে বিষপান করে তিনজন আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন বলে অভিযোগ। ২৬ অগাস্ট যে আন্দোলনকারীরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, পরে তাঁরাই যোগ দেন তৃণমূলে।


 ৬ সেপ্টেম্বর: কাঁকসায় স্ত্রীকে খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ


পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় স্ত্রীকে খুন করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। কুকুরের বেল্ট দিয়ে স্ত্রীর গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করেন বলে জানান নিহতের স্বামী। আত্মসমপর্ণকারী বিপ্লব পারিয়াদ, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কর অফ ইন্ডিয়ার মামরাবাজার শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ছিলেন। ৬ বছর আগে ওই শাখায় একই পদে থাকা সমরেশ সরকার, প্রেমিকা ও তাঁর শিশুকন্যাকে খুন করে গঙ্গায় ফেলতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন।


 ৬ সেপ্টেম্বর- বেহালায় মা-ছেলেকে খুন


৬ সেপ্টেম্বর, বেহালার পর্ণশ্রীতে ভরদুপুরে কুপিয়ে খুন করা হয় মা ও ক্লাস এইটের ছেলেকে। অনলাইনে ক্লাস হওয়ার মাঝেই খুন করা হয় পড়ুয়াকে। এক সপ্তাহের মধ্যে খুনের কিনারা করে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা থেকে নিহত মহিলার দুই মাসতুতো ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। টাকা ধার না পেয়েই তাঁরা দিদি ও ভাইপোকে খুন করেন বলে জানায় পুলিশ।


 ১২ সেপ্টেম্বর: গোর্কিসদনের সামনে গুলি


গোর্কিসদনের সামনে হাওড়ার ব্যবসায়ী পঙ্কজ সিং-কে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। এক দল দুষ্কৃতী মোটরবাইকে এসে, ব্যবসায়ীর গাড়ি আটকে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। ১২ সেপ্টেম্বর, অল্পের জন্য পঙ্কজ প্রাণে বাঁচলেও কলকাতার বুকে শ্যুটআউটের ঘটনা শোরগোল ফেলে দেয়।


 ২২ সেপ্টেম্বর: ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির কর্মী ধৃত


১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে, ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির কর্মী মধুসূদন মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ তুলেছিল। সেই তদন্তে নেমেই রাইফেল ফ্যাক্টরির কর্মীকে গ্রেফতার করে সিবিআই। 


 ২১ সেপ্টেম্বর: সুচকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড


সাড়ে তিন বছরের শিশুকে সুচ ফুটিয়ে খুনের ঘটনায়, মা ও তাঁর প্রেমিককে মৃত্যুদণ্ড দেয় পুরুলিয়ার আদালত। ২০১৭-র জুলাইয়ে শরীরে একাধিক ক্ষত নিয়ে একটি শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিলেন হাসপাতালে। এক্স-রে তে শিশুর শরীরে সাতটি সুচ মিলেছিল। পরে মৃত্যু হয় তাঁর। সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণেই শিশুটিকে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।


 ৯ অক্টোবর: দেবব্রত মাইতি খুনে ধৃত ১১


বিধানসভা ভোটের পর নন্দীগ্রামে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতিকে খুনের ঘটনায়, ১১ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে CBI। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের জামাইও। ১১ জনকে গ্রেফতারির কয়েক দিন আগেই, ১২ জনকে জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। যার প্রেক্ষিতে ১১জনের গ্রেফতারিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে তৃণমূল।


 ১৭ অক্টোবর: গড়িয়াহাটে জোড়া খুন


কলকাতার বুকে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ১৭ অক্টোবর গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়া রোডের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকী এবং তাঁর গাড়ির চালক রবীন মণ্ডলের রক্তাক্ত মৃতদেহ। তদন্তে নেমে, প্রথমেই খুনের অন্যতম মূল চক্রী মিঠু হালদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করা হয়, ধৃত মিঠুর ছেলে, মূল অভিযুক্ত ভিকিকে। বাড়ি কেনার নাম করে গিয়ে, কর্পোরেট কর্তার সম্পত্তি লুঠের উদ্দেশ্যেই খুন করা হয় বলে দাবি করে পুলিশ।  


 ২২ অক্টোবর: রায়নায় খুন


পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় রহস্যজনকভাবে খুন হন কলকাতার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল। ২২ অক্টোবরের ওই ঘটনায় মোট ৬জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আত্মসমর্পণ করেন নিহতের খুড়তুতো ভাই। কলকাতার বাবুঘাট থেকে ধরা হয় সুপারি কিলারকে। গয়া থেকে গ্রেফতার হন আরও দু-জন। পুলিশ সূত্রে দাবি, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদের কারণে ব্যবসায়ীকে খুন করতে ২০ লক্ষ টাকা সুপারি দিয়েছিলেন তাঁর খুড়তুতো ভাই।


 ১৬ অক্টোবর: শিল্পীকে হুমকি, গ্রেফতার


সঙ্গীতশিল্পী রাশিদ খানকে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে, উত্তরপ্রদেশ থেকে দু-জনকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। অভিযোগ, ৫০ লক্ষ টাকা না দিলে স্নাইপার দিয়ে খুন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল শিল্পীকে। ধৃতদের একজন আগে রাশিদের গাড়ির চালক ছিলেন। অন্যজন ছিলেন শিল্পীর প্রাক্তন কর্মী। পুলিশ সূত্রে দাবি জেরায় ধৃতরা জানান, কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ায় আক্রোশেই হুমকি ফোন করেছিলেন তাঁরা।


 ২৬ অক্টোবর: আলাপনকে হুমকি চিঠি


প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে হুমকি চিঠি পাঠিয়ে গ্রেফতার হন অরিন্দম সেন নামে এক চিকিৎসক-সহ তিনজন। তাঁর স্বামীকে খুন করা হবে বলে, হুমকি চিঠি এসেছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। ধৃতরা আরও কয়েকজনকে হুমকি চিঠি পাঠিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।


 ৮ নভেম্বর: সিভিক ভলান্টিয়ারের অত্যাচার


৭ নভেম্বর, কলকাতার একটা ছবি নাড়িয়ে দেয় সকলকে। এক্সাইড মোড়ে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তির উপর বুট পরা পা চেপে ধরে শাস্তি দিতে দেখা যায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। মারেন একের পর এক লাথিও। ভাইরাল হয় সেই ভিডিও। আমেরিকার জর্জ ফ্লয়েডের মতো এই ব্যক্তির করুণ পরিণতি না হলেও, সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয় এই ঘটনা। দুঃখপ্রকাশ করেন পুলিশ কমিশনারও। অভিযুক্ত তন্ময় বিশ্বাসকে সাসপেন্ড করা হয়।


 ১২ নভেম্বর: সিতাইয়ে BSF-এর গুলি


১২ নভেম্বর কোচবিহারের সিতাইয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে BSF-এর গুলিতে মৃত্যু হয় তিন সন্দেহভাজন গরুপাচারকারী। নিহতদের মধ্যে একজন ভারতীয়। BSF-এর কাজের পরিধি ১৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বির্তকের মধ্যে এই ঘটনা কেন্দ্র-রাজ্য তরজা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।


 ২০ নভেম্বর: হাওড়ায় হোমে নির্যাতন


বিশ্ব শিশু দিবসেই, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে আসে হাওড়ার সালকিয়ায়। শিশুদের উপর যৌন নিগ্রহ চালানোর অভিযোগে, ২০ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় একটি বেসরকারি হোমের মালিক-সহ ১১ জনকে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন হাওড়ার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়রের ছেলে, পুত্রবধূ এবং সমাজকল্যাণ দফতরের এক আধিকারিকও।


 ২৭ নভেম্বর: হাঁসখালিতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু


সৎকার করতে গিয়ে, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় চলে যায় ১৭টা প্রাণ। ২৭ নভেম্বর রাতে, নদিয়ার হাঁসখালিতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা মারে শববাহী লরি। মর্মান্তিক এই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক শিশু ও মহিলা-সহ ১৭ জনের। আহত হন আরও কয়েকজন। মৃতদের পরিবার পিছু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ২ লক্ষ টাকা করে সাহায্য ঘোষণা করে।


 ১ ডিসেম্বর: নোদাখালিতে বিস্ফোরণ


পয়লা ডিসেম্বরের সকালে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নোদাখালি। বাড়ির মালিক-সহ মৃত্যু হয় ৩ জনের। বিস্ফোরণের তীব্রতায় উড়ে যায় ঢালাইয়ের ছাদ। ওই বাড়িতে অবৈধভাবে বাজি তৈরি করা হত বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। মজুত করা প্রচুর বিস্ফোরক থেকেই বিস্ফোরণ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।