টিভি খুলে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সাংবাদিক বৈঠকে ছিল চোখ। প্রথমে পাশের হার , তারপর একের পর এক কৃতীর নাম ঘোষণা করছিলেন সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। প্রথম দশে ৬৯ টি নাম। রত্নখচিত রেজাল্ট। পরপর নামগুলো শুনছিল অদ্রিজা। হঠাৎই হল ঘোষণা ...রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুলের অদ্রিজা গণ, উত্তর ২৪ পরগনার নিমতার বাসিন্দা। ভাল রেজাল্ট করার আত্মবিশ্বাস ছিলই, কিন্তু প্রথম দশে ! ভারতে পারেনি মেয়েটি। আর এই ঘোষণা আত্মস্থ হতে না হতেই অভিনন্দনের বন্যা। আনন্দে আত্মহারা পরিবার ও বন্ধু মহল। অদ্রিজা তো শুধু একজন প্রতিশ্রুতিবান ছাত্রী নন, অদ্রিজা অনুপ্রেরণার আরেক নাম। অদ্রিজা উদাহরণ। অদ্রিজা লড়াইয়ের আরেক নাম। 

Continues below advertisement

যে ছোট্ট মেয়েটি মাত্র ক্লাস সিক্সেই বুঝে গিয়েছিল, আগামীর পথটা বড্ড কঠিন। বুঝে গিয়েছিল কর্কট-দংশন কতটা যন্ত্রণার। ষষ্ঠশ্রেণিতে পড়ার সময় অদ্রিজার শরীরে ধরা পড়েছিল টি-সেল লিম্ফোমা ক্যানসার  । ফুসফুসে জল জমেছিল, হয়েছিল মাংস পিণ্ড। বই, গল্পের বই, গান, আবৃত্তি নিয়ে থাকা মেয়েটার জগৎটা গেল বদলে। মুম্বইতে টাটায় ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে গেল অদ্রিজা। মাসের পর মাস চিকিৎসা। বাবা-মা মুখে না বললেও ছোট্ট মেয়েটা সেদিন বুঝে গিয়েছিল একটা কঠিন লড়াই লড়ছে সে। পরপর কেমোথেরাপি । একের পর এক কড়া ডোজের ওষুধ আর চরম অনিশ্চয়তা...মা বাবার মন বলত...সব কবে ঠিক হবে? মেয়েটা সব বুঝত। একদিন সে বলেছিল...মা তুমি আমায় বলোনি কেন? আমি তো বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু তোমার যদি কষ্ট হয়...তাই বলিনি। 

২ বছর ৮ মাস ধরে চিকিৎসা। ৮২ টা কেমোথেরাপি। এক দম অন্য রাজ্যে, অন্যরকম পরিবেশে দিনযাপন। সবটাই জয় করে ফেলল একদিন অদ্রিজা। কঠিন লড়াইয়ে পাশে যেমন পরিবার ছিল, তেমন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সাহায্য করেছে স্কুল। উচ্চ মাধ্যমিকের থার্ড সিমেস্টারের পরীক্ষায় সম্ভাব্য সেরা দশে নবম স্থানে সে। ৯৭.৩৭ শতাংশ নম্বর  তাঁর ঝুলিতে। 

Continues below advertisement

লড়াই সহজ ছিল না। এখনও নয়। ক্যান্সার জয় করে ফেরার পরও কঠিন নিয়মানুবর্তিতায় বাঁধা জীবন। রাত জেগে পড়া নয়, বাইরের খাবার নয়, অনিয়ম নয়। তাই স্কুলের পর কয়েক ঘণ্টা পড়েই ঠিক সময় ঘুমোতে চলে যায় সে। এই বয়সের মেয়ে হয়েও বাইরের খাওয়া-দাওয়া থেকে দূরে। মা জ্যোতি গণ পেশায় শিক্ষিকা। বাবা জয়মঙ্গল গণও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক। দুজনের অনুপ্রেরণা ছিলই। তবে দুজনেই ক্রেডিট দিচ্ছেন, মেয়ের অসামান্য অধ্যবসায়কে, সেই সঙ্গে স্কুলকেও। মায়ের কথায়, কঠিন সময়ে স্কুলে মেয়েটাকে আগলে রেখেছিলেন স্কুলের মাতাজী ও শিক্ষিকারাই। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি, পুরনো সহকর্মী, পরিবার, ঘনিষ্ঠ পরিজনদের। 

আগামী দিনে মনস্তত্ব নিয়ে পড়াশানো করতে চায়, ভগিনী নিবেদিতার হাতে আদর্শে বেড়ে ওঠা অদ্রিজা। কারণ, সে জানে চরম অন্ধকারের মধ্যেও আলোক ঠিকানা কীভাবে খুঁজে পেতে হয়। তেমন করেই এই অবসাদ, হতাশার পৃথিবীতে মানুষকে ভাল রাখবে সে। অদ্রিজার স্কুল শিক্ষিকা মাও চান স্বপ্নপূরণ হোক মেয়ের। 


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI