হরিয়ানার মেয়ে। মূলত ব্যবসায়ী পরিবার। বাবা ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। পানিপথের বাসিন্দা হলেও পেশা সূত্রে চলে আসা দিল্লি। এই প্রতিবেদনের মুখ্য চরিত্র যিনি, সেই সোনলের জন্মও দিল্লিতে। বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সবই দিল্লিতে। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছেন রবীন্দ্র পাবলিক স্কুল, প্রীতমপুরায়। ছোটবেলায় খুব যে পড়াশোনায় ভাল ছিলেন তা নয়। আর পাঁচটা বাচ্চার মতই ছিলেন। পরে DAV পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় সবকিছু ঠিক ছিল না। পরীক্ষায় খুবই খারাপ করেন। সংসার চালাতে, তিন ভাইবোনের পড়াশোনা সামলাতে বাবার লড়াই নাড়িয়ে দিয়ে যায় সোনলকে। মনে জোর আনেন। ক্লাস সেভেন থেকে ছবিটা পালটে যেতে থাকে। তারপর আর পিছনে তাকাননি। টুয়েলভ পর্যন্ত প্রতি ক্লাসে হয় ফার্সট হয়েছেন। নয়তো এক থেকে তিনের মধ্যে থেকেছেন। 


তবে ক্লাস ইলেভেনে সায়েন্স নিয়ে পিছিয়েছিলেন। প্রথম প্রথম ভাল লাগেনি পড়তে। নম্বর খারাপ আসেনি, কিন্তু কোথাও যেন কমতি থেকে যাচ্ছিল। অগত্যা, স্ট্রিম চেঞ্জ করে কমার্স নেওয়া। রেজাল্ট ভাল হয়। দিল্লির শ্রীরাম কলেজ অব কমার্সে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যান। সেটা ২০০০ সাল। একইসঙ্গে কম্পানি সেক্রেটারির জন্য পড়াশোনা শুরু করেন।  B.Com অনার্স এবং CS-এর পড়াশোনাও চলতে থাকে। রাস্তা কখনই UPSC-র জন্য ছিল না। ভাবনাতেই ছিল না IAS। বরং ছিল উলটো। ভাবনায় ছিল বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি করবেন কখনও। CS হবেন।


গ্র্যাজুয়েশনের পড়া চলছে তখন। কোনও এক ম্যাগাজিনে UPSC-র বিষয়ে বিস্তারিত পড়েন। আলোচনা করেন কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে। তারপর মনে হল, একবার চেষ্টা করে দেখাই যাক না। একটা প্ল্যাটফর্ম তো পাওয়া যাবে। দেশের জন্য কাজও করা যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাড়িতে কথাটা পাড়েন। তবে শুরুতে সদুত্তর পাননি কারো কাছ থেকেই। ভবিষ্যৎ চিন্তা ভাবায় সোনলের বাবাকে। অসন্তুষ্ট হন মেয়ের সিদ্ধান্তে। সোনল এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বাবাকে রাজি করাতে তাঁর প্রায় পাঁচ-ছয়মাস লেগেছিল। তারপর পরীক্ষায় বসার ছাড়পত্র পান। তবে, এক শর্তে, ব্যাক-আপ প্ল্যান থাকতে হবে। 


কী এই প্ল্যান B


লাখ লাখ পড়ুয়া বসেন UPSC। নির্বাচিত হন কয়েকশো। অর্থাৎ বেশিরভাগই অসফল থাকেন। তাই যাঁরা পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের সবসময় একটি প্ল্যান B  নিজের কাছে রাখতে হবে। অর্থাৎ IPS, IAS যদি একান্ত না হওয়া যায়, সেই ব্যাক আপ প্ল্যান মোতাবেক কেরিয়ার যাতে অন্যভাবে গড়া যায়। অন্য পেশায় প্রবেশ এবং তাতে সফল হওয়া যায়।  


প্ল্যান B ছিল সোনলেরও। CS পড়েছেন তাই, গ্র্যাজুয়েশনের পরে LLB প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একইসঙ্গে CS ডিগ্রিকে কাজে লাগিয়ে পার্ট টাইম জবও নেন। সঙ্গে চলে UPSC-র প্রস্তুতি। দুহাজার চার সাল থেকে দুহাজার সাত, খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই সময়কাল। একইসঙ্গে তিনটি বিষয়ে তাঁকে মনোনিবেশ করতে হয়। দুহাজার ছয়ে প্রথমবার পরীক্ষায় বসেন। তবে ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি। হতাশ হন। তবে তা সাময়িক। মেন পরীক্ষায় খামতি কী ছিল সেটা বোঝেন। মনের জোর বাড়ান। 


সময় কম ছিল। ফের নতুন করে শুরু। নিজের দুর্বল জায়গা খুঁজে ঘড়ি ধরে উত্তরপত্র লেখা শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম। মেন পরীক্ষা দিয়ে বুঝেছিলেন, ইন্টারভিউ কল পাবেনই। প্রস্তুতিও শুরু করে দেন। পাঁচজন ছিলেন বোর্ডে। ভাল হয় ইন্টারভিউ। ১২ মে, ২০০৮। ফল বেরোয়। এক বন্ধু ফোনে জানান রেজাল্ট। গোটা দেশে ১৩ নম্বরে নাম ছিল নাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না সোনলের। আবেগাপ্লুত। বাবা-মার শেয়ার করেন সেই আনন্দঘন মুহূর্ত। 


 



সোনল গোয়েল


প্রায় ১৫ বছর রয়েছেন সিভিল সার্ভিসে। UPSC প্রত্যাশীদের সঙ্গে বহুবার শেয়ার করেছেন তাঁর অভিজ্ঞতা। পরীক্ষার্থীদের জন্য তাঁর পরামর্শ



  • রোজ নতুন কিছু করতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে এগিয়ে চলার ইচ্ছে। 

  • চ্যালেঞ্জ আসবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী তাকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। 

  • উইনার্স নেভার কুইট- এই মোটো ছিল সোনলের। পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশেও একই বার্তা তাঁর। 

  • নোট তৈরি করতে হবে নিজেকে। যা রিভিশনের সময় কাজে লাগবে। 

  • উত্তর লেখার অনুশীলন মাস্ট। সাম্প্রতিক বিষয়ে আপডেটেড থাকতে হবে। তাই জরুরি দৈনন্দিন খবরের কাগজ পড়া। 

  • যা ভাবছি, তা খাতায় লিখতে পারছি কী, দেখতে হবে তাও। নিয়মিত। 

  • বিগত বছরের প্রশ্নপত্রের উত্তর লেখার অনুশীলন জরুরি (অন্তত শেষ তিন বছরের)।

  • মক টেস্ট সিরিজে হাত পাকিয়ে ফেলতে হবে। যত অনুশীলন, তত লাভ। 


সর্বোপরি নিজেকে মোটিভেট করতে হবে নিজেকেই। স্ট্র্যাটেজি বানিয়ে নিতে হবে যা নিজের সঙ্গে মানানসই। চলতে হবে সেইমত। সোনল মনে রাখতে বলছেন তিনটি C। Courage, Conviction, Consistency। 


একইসঙ্গে তাঁর বার্তা, সবসময় নিজেকে বলতে হবে 'I can, I will ! The Game is not Over, till I Win।' 



তথ্যসূত্র : sonalgoelias.in


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI