উপযুক্ত সতর্কতা না নেওয়ার পরিণতি যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা ফের টের পেল সিআইডির বম্ব স্কোয়াড! লুকনো বোমা উদ্ধারে গিয়ে বিস্ফোরণে মারা গেলেন বম্ব স্কোয়াডের ২ কর্মী!
পুলিশ সূত্রে দাবি, রবিবার রাতে মালদার বৈষ্ণবনগরে তৃণমূল নেতা গিয়াসু শেখের পরিত্যক্ত বাড়িতে বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। সেই সময় আচমকা বিস্ফোরণ ঘটলে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য-সহ চার জন মারা যান। সোমবার ঘটনাস্থলে যায় বম্ব স্কোয়াড। কোনওরকম বিশেষ পোশাক ছাড়াই, হাতে লাঠি নিয়ে লুকনো বোমা খোঁজার কাজ শুরু করে তারা।
চরম এই গাফিলতির মাসুল দিতে হয় কিছুক্ষণের মধ্যেই! জোরাল বিস্ফোরণে ঝলসে যায় বম্ব স্কোয়াডের তিন কর্মীর শরীর! রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তাঁরা।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই তিনজনকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সন্ধেয় আহতদের কলকাতা স্থানান্তরিত করা হয়। মাঝপথে মারা যান, সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের এএসআই বিশুদ্ধানন্দ মিশ্র এবং কনস্টেবল সুব্রত চৌধুরী। আরেক এসএসআই মনিরুল জামানের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাম্প্রতিক সময়ে বারবার সামনে এসেছে সিআইডি ও পুলিশের এই ধরণের গাফিলতির ঘটনা। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে উদ্ধারের পর থানায় মজুত রাখা বোমা ফেটে যায়। উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের এই ঘটনায় জখম হন এক এসআই, এক এএসআই ও একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার।
২০১৩ সালের অগাস্টে আলিপুরদুয়ারে খালি হাতে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে প্রাণ হারান সিআইডি-র বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের কর্মী লালবাহাদুর লোহার। আহত হন ৩ জন।
২০১১ সালের নভেম্বরে বীরভূমে নানুরে গর্তে বোমা রেখে ফাটানোর সময় মারা যান সাব-ইনস্পেক্টর।
২০০৮ সালের এপ্রিলে কালনায় উপযুক্ত পোশাক ছাড়া বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বম্ব স্কোয়াডেরই এক কর্মীর হাত উড়ে যায়!
তারও আগে, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে লালগড়ের ঝিটকার জঙ্গলে ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে বিস্ফোরকে ঠাসা দুধের ক্যান খোলার ফাঁকে বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের এক কর্মী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘কাছে এসে শিখে নিন কী করে মাইন নিষ্ক্রিয় করতে হয়...’। কথাটা পুরো শেষ হয়নি! মুহূর্তের মধ্যে বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন ২ জন। ঘটনায় সংবাদমাধ্যমের কয়েকজন কর্মী-সহ ১৯ জন জখম হন। দৃষ্টিশক্তি হারান এক সাংবাদিক। উপযুক্ত পোশাক ছাড়া বোমা নিষ্ক্রিয় করতে যাওয়ার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।
২০০৫ সালে মাওবাদী হানার তদন্তে গিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা একটি ব্যাগ তুলে নিয়ে এসেছিলেন বারিকুল থানার ওসি প্রবাল সেনগুপ্ত। সহকর্মীদের নিষেধ সত্ত্বেও ব্যাগে হাত ঢোকান। এরপরই ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি!
এবার মালদা। সূত্রের খবর, সিআইডির যে দলটি ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তাঁদের কারও বোমা সংক্রান্ত কোনও প্রশিক্ষণ ছিল না। অতীতের নানা ঘটনা থেকে শিক্ষা না নিয়ে কি বারবার এভাবেই ভুলের মাসুল গুনবে পুলিশ? প্রশ্ন নানা মহলে।