হরিদেবপুর: ভোটে ফের আক্রান্ত শৈশব! হালিশহর, ভাঙড়ের পর এবার হরিদেবপুর।
রাজনীতি কী? কে শাসক? বিরোধীই বা কে? বোঝার মতো বয়স হয়নি সাত বছরের এই শিশুর। কিন্তু, রাজনীতির বিষাক্ত ছোবল রেহাই দিল না তাকেও। ছোট্ট শরীরের পড়ল লাঠির ঘা! ফাটল মাথা!
বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের হরিদেবপুর থানা এলাকার দড়িরচক গ্রাম। বাহুবলীদের ফতোয়ায় ২০১১ সালের পর থেকে অধিকাংশ গ্রামবাসীই বুথমুখো হননি। কিন্তু, কলকাতা পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর আশ্বাসে শনিবার সেই ট্র্যাডিশন ভেঙে ভোট দিতে গিয়েছিলেন শিশুর দাদু সিপিএম সমর্থক অমূল্য বর। এটাই ছিল অপরাধ। যার মাসুল দিতে হল সাত বছরের শিশুকে!
অভিযোগ, শনিবার রাতে দাদুর খোঁজে বাড়িতে চড়াও হয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। গেটের গ্রিল ধরে ঝাঁকাতে থাকে তাঁরা। সে সময় পড়ছিল শিশুটি। হই হট্টোগল শুনে ঘরের বাইরে বেরোয়। তখনই সজোরে গ্রিল ঠেলে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীরা। মাথায় গ্রিলের ধাক্কা লাগে শিশুর। কিন্তু, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তার মাথায় লাঠির বাড়িও বসায় বাহুবলী কাকুরা! শিশুটি জানায়, লাঠি-বাঁশ দিয়ে তার মাথায় মারা হয়।
ঘটনায় শাসক দলের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন শিশুর মা। শুধু এই পরিবারই নয়, শনিবার রাতে গ্রামে আরও বেশকয়েকটি বাড়িতে চড়াও হয় দৃষ্কৃতীরা। বেধড়ক মারধর করা হয় বেহালা পূর্বের নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রর এজেন্টকে।
শিশুর ওপর হামলা ও নির্দল প্রার্থীর এজেন্টকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ এক তৃণমূল নেতা ও শাসক দলের ২ কর্মীকে গ্রেফতার করে। ধৃতেদর বিরুদ্ধে, ৩২৩ ধারায় মারধর, ৪৪৮ ধারায় বেআইনি জমায়েত, ৫০৬ ধারায় হুমকি এবং ৪২৭ ধারায় ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়।
কিন্তু সবকটি ধারাই জামিনযোগ্য হওয়ায়, থানা থেকেই জামিন পেয়ে যান অভিযুক্তরা। ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা। যে পুলিশ পঞ্চম ও ষষ্ঠ দফার ভোটে দেখিয়ে দিয়েছিল, তারা স্রেফ শাসক দলের তল্পিবাহক নয়, সেই পুলিশই কীভাবে এই ধরনের গুরু অপরাধে, লঘু ধারা প্রয়োগ করল? তাহলে ষষ্ঠদফার ভোট মিটতেই কি স্বমূর্তি ধারণ করলেন উর্দিধারীরা? প্রশ্ন আক্রান্ত গ্রামবাসীদের। এদিকে, শিশুকে মারধরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, তৃণমূল কর্মী পরেশ পাত্রকে এখনও খুঁজেই পায়নি পুলিশ।
রবিবার অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে গেলে এবিপি আনন্দকে তার মা জানান, ছেলে তৃণমূল করে, কাল রাতে ছিল, আজ সকালে বেরিয়েছে। শাসক দলের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলেও বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, এমন ঘটনা কাঙ্খিত নয়।
দুষ্কৃতীদের হামলার পর শনিবার রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি হরিদেবপুরের এই আক্রান্ত শিশুর পরিবার। পুলিশ এসেছে, মামলা দায়ের হয়েছে, কিন্তু অভিযুক্তরা জামিনও পেয়ে গিয়েছে! নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে গোটা পরিবার। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এদিন বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা।