জয়পুর: ইতিহাস বলছে মরুরাজ্যে একটানা ক্ষমতায় থাকে না কেউই। পাঁচ বছর অন্তর অন্তর ক্ষমতা হাতবদল হয়। কিন্তু রাজস্থানে এবার সব হিসেব নিকেশ উল্টে দিতে মরিয়া কংগ্রেস। দ্বিতীয় বারের জন্য সেখানে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া তারা। তার জন্য জনমোহিনী প্রকল্প থেকে রাজনৈতিক কৌশল, কিছুতেই খামতি রাখছে না কংগ্রেস। অন্য দিকে, কংগ্রেসের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি-ও। কিন্তু রাজস্থান বিধানসভায় সরকার গড়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেস এবং বিজেপি, দুই দলের গলার কাঁটা অন্তর্দ্বন্দ্ব। (Rajasthan Cvoter Exit Poll)
২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ মিটে গিয়েছে রাজস্থানে। সেই সঙ্গে হাতে এসে গিয়েছে ABP-CVoter Exit Poll-ও। এই বুথফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতা হাতবদলের ধারাই অব্যাহত থাকবে রাজস্থানে। অর্থাৎ কংগ্রেসকে সরিয়ে এবার সেখানে ক্ষমতা দখল করতে পারে রাজস্থান। বুথফের সমীক্ষা অনুযায়ী, এবার রাজস্থানে ৯৪ থেকে ১১৪টি আসন পেতে পারে গেরুয়া শিবির। কংগ্রেস পেতে পারে ৭১ থেকে ৯১টি আসন। তবে আগের চেয়ে ভোটের হার বাড়তে পারে কংগ্রেসের। ২০১৮ সালে যেখানে ৩৯.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা, এবার তা বেড়ে হতে পারে ৪১.১ শতাংশ। (ABP Cvoter Exit Poll Rajasthan)
রাজস্থান বিধানসভার মোট আসনসংখ্যা ২০০। তার মধ্যে গত ২৫ নভেম্বর ১৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। কংগ্রেস প্রার্থীর মৃত্যুর জেরে কর্ণপুর আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। আগামী ৩ ডিসেম্বর ভোটের ফলাফল প্রকাশ। যদিও কংগ্রেসের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। তাঁর দাবি, বুথফেরত সমীক্ষা যা-ই বলুক না কেন, বিজেপি শুধু রাজস্থানেি নয়, পাঁচ রাজ্যেই হারবে এবার।
অশোকের কথায়, "রাজস্থানে আমাদের সরকারকেই টিকিয়ে রাখবেন মানুষ। এর নেপথ্যে তিনটি কারণ রয়েছে, ১) সরকারের বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কোনও অভিযোগ নেই। ২) মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা রয়েছে মানুষের। বিজেপি ভোটাররাও বলছেন, উন্নয়নে কোনও খামতি রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী। ৩) প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা প্রচারে এসে যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন। কেউ পছন্দ করেননি।"
এর আগে, ২০১৮ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে রাজস্থানে উঠে এসেছিল কংগ্রেস। ৯৯টি আসনে জয়ী হয়েছিল তারা। বিজয়ী নির্দল প্রার্থীরাও তাদের সমর্থন দেন। সে বছর বসুন্ধরা রাজে নেতৃত্বাধীন বিজেপি রাজ্যে ৭৩টি আসন পায়। কিন্তু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হলেও, গোড়া থেকেই রাজস্থানে কংগ্রেসের মাথাব্যথার কারণ ছিল গহলৌত বনাম সচিন পাইলটের সংঘাত। শোনা যায়, সচিনের জনপ্রিয়তায় নির্ভর করেই রাজস্থানে কংগ্রেসের ভোটের ঝুলি উপচে পড়ে। কিন্তু অভিজ্ঞতা এবং সমর্থনের নিরিখে গহলৌত মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে যান। আড়াই বছর করে, দু'জনই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে ঠিক হয়। কিন্তু প্রথম আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও, সচিনকে মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছাড়তে রাজি হননি গহলৌত। ফলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন সচিন। পাল্টা শক্তিপ্রদর্শন করে কংগ্রেসকে চাপে ফেলে দেন গহলৌত।
একই ভাবে, অন্তর্কলহ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে বিজেপি-কেও। দিল্লির নেতৃত্ব তেমন গুরুত্ব না দিলেও, সর্বশক্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বসুন্ধরা। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছেন জয়পুরের রাজ পরিবারের সদস্য তথা বিজেপি সাংসদ দিয়া কুমারী। এবার বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। রাজস্থানে বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সতীশ পুনিয়াও মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন। আবার বিরোধী দলনেতা রাজেন্দ্র রাঠৌরকে নিয়েও জোর চর্চা। কেউ কাউকে একচুলও জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হননি। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছাড়াই, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখে এবার রাজস্থানে নির্বাচনী প্রচার চালায় বিজেপি।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।