কলকাতা: পরবর্তী লোকসভ নির্বাচনে বাকি দু'বছর (Lok Sabha Election 2024)। তার আগে বিজেপি-র (BJP) বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে ধরাশায়ী কংগ্রেস (Congress)। তা নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) বিজেপি বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে তুলে ধরার পক্ষে সওয়াল তৃণমূলের (TMC)। গুজরাতের ফলাফলের পর কংগ্রেসের আত্মসমালোচনার প্রয়োজন বলে মনে করছে তৃণমূল। 


মোদির বিকল্প একমাত্র মমতা, বললেন কুণাল ঘোষ


বৃহস্পতিবার গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের (Gujarat Assembly Election Result) ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে গেরুয়া ঝড়ে কার্যত উড়ে গিয়েছে কংগ্রেসে। ২০১৭-য় জিতে আসা অধিকাংশ আসনই হাতছাড়া হয়েছে তাদের। সে বছর যেখানে সমানে সমানে টক্করে ৭৭টি আসন জিতেছিল তারা, এ বার দুপুর ৩টে পর্যন্ত কোনও রকমে ১৬টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ২০১৭- জেতা ৬০টির বেশি আসন হাতছাড়া হয়েছে তাদের। বিজেপি একা ১৫৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।


তাতেই দুপুরে কলকাতায় বসে কংগ্রেসকে একহাত নেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, "কংগ্রেসের আত্মসমালোচনা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। হিমাচলে যে টুকু করেছে, গুজরাতে তা কেন পারল না? কেন গুজরাতে টক্কর দিয়ে লড়াই করা গেল না? কিছু বলতে গেলে গায়ে লেগে যাবে। ভারত জোড়ো যাত্রা করছে, অথচ গুজরাত জুড়তে পারল না। কী করে হবে?"


২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি বিরোধী জোটকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলার প্রচেষ্টা চলছে বিগত এক বছর ধরেই। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন বিরোধী জোট নিয়ে কথা বলতে। সেখানে সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, শরদ পওয়ারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। পরবর্তী কালে এমকে স্ট্যালিন এবং কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গেও দেখা করেন। কিন্তু বাংলায় বিজেপি-কে দুরমুশ করা মমতাকে ২০২৪-এ বিরোধী শিবিরের মুখ করার বিরোধিতা না করলেও, জোটের প্রশ্নে কংগ্রেস তেমন গরজ দেখায়নি বলে শোনা যায়। 


আরও পড়ুন: Congress Election Performance: গুজরাতকে হেলাফেলা! গুনতে হল চরম মাশুল, প্রিয়ঙ্কার সাজানো ঘুঁটিতেই বাজিমাত হিমাচলে


তাই এ দিন গুজরাতে কংগ্রেস ধরাশায়ী হওয়ার পরই জাতীয় ক্ষেত্রে জোট নিয়ে গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টিকে নিশানা করেন কুণাল। তিনি বলেন, "গুজরাতে তো বিজেপি-র সঙ্গে মূল লড়াই ছিল কংগ্রেসের! সেখানে করে দেখানোর জায়গা ছিল। মোদির রাজ্যে কী ভাবে জয়রথ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, ফাঁকা মাঠ পড়ে ছিল! যারা গুজরাতে ব্যর্থ, তারা একক সিদ্ধান্তে, একক কৌশলে দিল্লির লোকসভা সামলাতে পারবে!"


জাতীয় রাজনীতিতে মোদির মোকাবিলা যদি কেউ করতে পারেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই, এ দিন এমন মন্তব্যও করেন কুণাল। তিনি বলেন, "তৃতীয় বিকল্প বা অবিজেপি বিকল্পের ক্ষেত্রে, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল শক্তির ক্ষেত্রে, তৃণমূলের প্রাসঙ্গিকতা এবং প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব আজকের ফলে আবারও প্রমাণিত হল।  নরেন্দ্র মোদির বিকল্প মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। সাত বারের সাংসদ, চার বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, দুই বারের রেলমন্ত্রী, তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী।"


গুজরাতের ফল নিয়ে কংগ্রেসকে আত্মসমালোচনার পরামর্শ কুণালের


জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী জোটকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলার প্রচেষ্টা চলছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। গত কয়েক বছরে নির্বাচনী রাজনীতিতে কংগ্রেসের গ্রাফ লাগাতার যে ভাবে নেমেছে, তাতে কংগ্রেসকে জোটের নেতৃত্বে বসাতে আপত্তি রয়েছে অনেকেরই। আবার কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জোট সম্ভব নয় বলেও মত তাঁদের। কেসিআর-এর মতো বিরোধী শিবিরের কিছু নেতা আবার, বিজেপি-কংগ্রেস, দুই দলকে বাদ দিয়ে তৃতীয় বিরোধী জোট গড়ে তোলার পক্ষে। সেই নিয়ে ডামাডোল চলছেই। সেই আবহে গুজরাতের ফলাফল দিয়েই ২০২৪-এর সম্ভাবনা যাচাই করে দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই।