নয়াদিল্লি: তিহাড়ে বন্দি থাকার সময় জেল থেকেই সরকারি সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। লোকসভা নির্বাচনী চলাকালীন ২১ দিনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন তিনি। আর তার পরই তাঁর হাত ধরে নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করল আম আদমি পার্টি। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট কেজরিওয়ালের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে, রবিবার 'কেজরিওয়াল কি গ্যারান্টি' শীর্ষক ইস্তেহার প্রকাশ করল AAP. (Kejriwal ki Guarantee)
দিল্লিতে এদিন কেজরিওয়ালের হাতেই AAP-এর নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশিত হয়। AAP-এর ইস্তেহার হলেও, ২০২৪ সালে কেন্দ্রে যদি I.N.D.I.A জোট ক্ষমতায় আসে, তাহলে তাঁর এই প্রতিশ্রুতিগুলি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন কেজরিওয়াল। 'মোদি কি গ্যারান্টি' বনাম 'কেজরিওয়াল কি গ্যারান্টি', মানুষকেই যে কোনও একটি বেছে নিতে হবে বলে জানান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। (Lok Sabha Elections 2024)
AAP-এর নির্বাচনী ইস্তেহারে যে ১০ গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল-
বিনামূল্যে বিদ্যুৎ- I.N.D.I.A জোট ক্ষমতায় এলে ২৪ ঘণ্টা নিখরচায় বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান করা হবে গোটা দেশকে। গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা দেখা দেয়। সেই তুলনায় ৩ লক্ষ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার ক্ষমতা রয়েছে। তার পরেও দেশ লোডশেডিংয়ের সমস্যায় জর্জরিত। কারণ ব্যবস্থাপনায় গলদ রয়েছে। দিল্লি এবং পঞ্জাবে আগেই তা করে দেখানো গিয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই গোটা দেশকে বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি।
বিনামূল্যে শিক্ষা- যে কোনও দেশের উন্নয়নের ভিত্তিই হল শিক্ষা। দেশের সর্বত্র, সকলের জন্য উচ্চমানের স্কুল নির্মাণ এবং বিনামূল্যে, উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কেজরিওয়াল বলেন, "শিশুরা সঠিক শিক্ষা পেলে তবেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমানে দেশের স্কুলগুলির অবস্থা শোচনীয়। দেশের ১০ লক্ষ স্কুলে পাঠরত ১৮ কোটি শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দিল্লি এবং পঞ্জাবে আমার যোগ্যতা প্রমাণ করেছি, গোটা দেশেও তা করে দেখাব। এতে মাত্র ৫ লক্ষ কোটি খরচ হবে সরকারের, যার অর্ধেক দেবে রাজ্য,অর্ধেক কেন্দ্র। এই গুণমান ধরে রাখতে বছরে ৫০ হাজার কোটি ঠাকা খরচ হবে। শিশুদের উচ্চমানের শিক্ষার কথা মাথায় রাখলে এই খরচ কিছুই নয়।"
সার্বিক স্বাস্থ্য পরিষেবা- সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবার আওতায় আনাই লক্ষ্য। কেজরিওয়াল বলেন, "দেশের মানুষ সুস্থ থাকলে, তাঁরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। দেশের গ্রামগুলিতে মহল্লা ক্লিনিক শুরু করব আমরা। প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যাবে চিকিৎসা পরিষেবা। জেলা হাসপাতালগুলিকে মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালে পরিণত করা হবে। সকলে সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে পারবেন। কোনও বিমা পরিষেবা নয়। ওটাই সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। দেশের সর্বত্র স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তুলব আমরা, তার জন্য ৫ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে, যার অর্ধেক কেন্দ্র এবং অর্ধেক রাজ্য দেবে।"
আরও পড়ুন: Fact Check: রাহুল গান্ধীর প্রশংসা বাবা রামদেবের ? কী উঠে এল ভিডিও-অনুসন্ধানে ?
চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সমাধান- সীমান্ত এলাকায় চিনের বিরুদ্ধে ভারতীয় এলাকা দখলের অভিযোগ সামনে আসছে। কড়া হাতে এর মোকাবিলা করার কথা জানিয়েছেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, "দেশ সবকিছুর ঊর্ধ্বে। চিন আমাদের এলাকা দখল করেছে। কেন্দ্রকে যখনই সেই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, জবাব আসে, কেউই নাকি কোনও জমি দখল করেনি... অথচ সত্যিটা জানে গোটা পৃথিবী। স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতেও দেখা গিয়েছে। আমাদের সেনা অত্যন্ত শক্তিশালী। স্বাধীন ভাবে তাদের কাজ করতে দেওয়া হোক। কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চলবে এবং সেনাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে।"ট
অগ্নিবীরদের স্থায়ী ভাবে নিয়োগ- সেনায় চুক্তিভিত্তিক পদ্ধতিতে অগ্নিবীর নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখনও পর্যন্ত যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের সকলকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হবে সেনায়। কেজরিওয়াল বলেন, "অগ্নিবীর প্রকল্পে দেশের তরুণদের চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হয় সেনায়, তার পর আবার বেরিয়ে যেতে হবে তাঁদের, কোনও সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। মোটা টাকা বেতনের দায় এড়াতেই এই প্রকল্প এনেছিল কেন্দ্র। কিন্তু দেশের নিরাপত্তায় খরচের সঙ্গে আপস চলে না।"
কৃষকদের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদান- স্বামীনাথন রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী, কৃষকদের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদান করা হবে। কেজরিওয়ালের বক্তব্য, "কৃষকরা তখনই সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারবেন, যখন তাঁরা ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন। এই মুহূর্তে তাঁরা নিজেদের অধিকারের জন্য় কার্যত ভিক্ষা চাইছেন। ফসলের সঠিক দাম না পেয়ে আত্মঘাতী হচ্ছেন।"
দিল্লিকে রাজ্যের স্বীকৃতি- এযাবৎ কেন্দ্রের সঙ্গে দিল্লির শাসনক্ষমতা নিয়ে বার বার সংঘাতে জড়িয়েছে কেজরিওয়াল সরকার। একাধিক ক্ষেত্রে কেজরিওয়াল সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই দিল্লিকে এবার পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেজরিওয়াল।
কর্ম সংস্থান- কর্মসংস্থান নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করার পাশাপাশি, এদিন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানান কেজরিওয়াল। তিনি জানিয়েছেন, I.N.D.I.A জোট ক্ষমতায় এলে প্রথম এক বছরের মধ্যেই ২ কোটি চাকরি হবে।
দুর্নীতি দমন- রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে দলে দলে সকলকে জেলে পোরার প্রথায় ইতি টানার কথা জানিয়েছেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, "সৎ মানুষদেরও আজ জেলে পোরা হচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করা হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ভাবে। এই কারণেই দেশে আজ দুর্নীতির বাড়বাড়ন্ত। বিজেপি-র ওয়াশিং মেশিনকে উপড়ে ফেলা হবে।"
ব্যবসার সহায়ক পরিস্থিতি- কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, I.N.D.I.A জোট ক্ষমতায় এলে পণ্য ও পরিষেবা করকে আরও সহজ করে তোলা হবে। আইনি পথে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে, উৎপাদন এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা ছাড়াই এগোতে পারবেন তাঁরা। চিনকে পিছনে ফেলাই প্রধান লক্ষ্য। কেজরিওয়ালের দাবি, গত ৮-১০ বছরে ১২ লক্ষ বিত্তশালী ব্যবসার ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন, দেশ ছেড়েছেন, কারণ সরকার তাঁদের হেনস্থা করছিল।