নয়াদিল্লি: কয়েক মাস পেরোলেই লোকসভা ভোট (General Election 2023)। তার আগে, ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপি বনাম বাকিদের স্কোরবোর্ড বুঝিয়ে দিয়েছে, 'মোদি-ম্যাজিক' অটুট। এখন প্রশ্ন হল, হিন্দি বলয়ের যে ৩ রাজ্যে (BJP In 3 Hindi Heartland States) বিজেপি স্পষ্ট জনাদেশ পেয়েছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর (Tentative Names For CM Post) কুর্সিতে বসবেন কারা? ভোটপ্রচারে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ করা হলেও রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে কাদের বেছে নেবে গেরুয়া শিবির?  


ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে সম্ভাব্য যাঁরা...
২০১৮ সালের মতো ২০২৩ সালেও যে কংগ্রেসই এখানে সরকার গড়তে চলেছে, তা নিয়ে প্রায় নিশ্চিত ছিল শতাব্দীপ্রাচীন দল। কিন্তু ফলঘোষণার দিন, বেলা গড়াতেই ছত্তীসগঢ়ের ছবিটা বদলাতে থাকে।  এবার ৫৪টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বিশ্লেষণ, এর নেপথ্যে প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের ব্যর্থতার থেকেও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি নেতা 'চাউলবাবা' রামন সিংহের সাফল্য।


রামন সিংহ...
ছত্তীসগঢ়ের এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর 'প্লাস পয়েন্ট' একাধিক। অতীতে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে থাকার সময় ৩৫ কিলো চাল বিলি করে 'চাউলওয়ালে বাবা' নামে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিলেন তিনি। গোটা দেশের মধ্যে দীর্ঘসময় ধরে মুখ্যমন্ত্রীর গদি সামলাচ্ছেন, এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্য অন্যতম রামন সিংহ। বিজেপি সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দু'জনেরই কাছের মানুষ তিনি। এবারও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বলেছিলেন, 'দল সুযোগ দিলে অস্বীকার করব না। কিন্তু নিজে থেকে চাইতে যাব না।'


অরুণ সাও...
ছত্তীসগঢ়ের রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা বিলাসপুরের সাংসদ অরুণ সাও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। শুধু তাই নয়। ছত্তীসগঢ়ের অসংরক্ষিত ৫১টি নির্বাচনী কেন্দ্র তাঁর প্রভাব রয়েছে। জাতপাতের সমীকরণ যে হিন্দি বলয়ের রাজ্য রাজনীতিতে মাথায় রাখা দরকার, তা বিলক্ষণ জানে গেরুয়া শিবির। তাই এই নেতার নামও মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।


বিজয় বাঘেল..
কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো এবং পাটনের প্রাক্তন বিধায়ক ২০০৮ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। ভূপেশ বাঘেলকে পরিবর্তে তাঁরই পরিবারের কাউকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বেছে নেবে কি বিজেপি? 


রেণুকা চৌধুরী...
আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর নামেও ছত্তীসগঢ়ের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি এই রাজ্যে কোনও আদিবাসী মহিলাকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চাইলে রেণুকা চৌধুরী-ই আদর্শ।


'রানিসা' নাকি দ্বিতীয় 'যোগী', রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদের দৌড়ে কারা?

বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া...
ঝালওয়ালের ঝালরাপাটন কেন্দ্র থেকে আরও একবার বিজেপির টিকিটে জিতেছেন রাজস্থানের 'রানিসা'। রাজস্থানের দু'বারের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে নিয়ে ভোটের আগে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল বিজেপিকে। কংগ্রেসকে সরিয়ে মরুরাজ্যে বিজেপির ক্ষমতাদখলের পর এখন প্রশ্ন, ফের তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে দেখা যাবে কি? 


মহান্ত বালকনাথ...
আলওয়ারের সাংসদ মহান্ত বালকনাথের নামও এবার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। 'দ্বিতীয় যোগী' হিসেবে পরিচিত মহান্ত বালকনাথ শেষমেশ মরুরাজ্যের শাসনভার পান কিনা, সেটা আর কয়েক দিনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।


দিয়া কুমারী...
রাজপরিবারের সদস্য দিয়া কুমারীও মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজপরিবারের সদস্যদের মুখ্যমন্ত্রী করার ইতিহাস আগেও রয়েছে। 


আর যাঁরা...
এছাড়া রাজস্থান রাজ্য বিজেপি সভাপতি, সিপি জোশী  এবং কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের নামও শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি, এত দিন বিরোধী দলনেতার দায়িত্বে থাকা রাজেন্দ্র রাঠোরের সম্ভাবনাও একেবারে কম নয়। 


মধ্য়প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রিত্বে কে? সম্ভাব্য নাম যাঁদের...
গোবলয়ের এই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপাতত তিনটি নাম উঠে এসেছে। তালিকায় রয়েছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। মধ্যপ্রদেশের অলিগলি তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। রেকর্ড বলছে, এখনও পর্যন্ত এই রাজ্যের সবথেকে বেশি সময়ের মুখ্যমন্ত্রী তিনি-ই। সেই রেকর্ড আরও দীর্ঘায়িত হবে কিনা, সে দিকে তাকিয়ে শিবরাজ-অনুগতেরা। তবে সেক্ষেত্রে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধািয়ার কী হবে, সেটাও প্রশ্ন। ২০১৮ সালে কংগ্রেস এই রাজ্যে সরকার গড়ার পরও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া-সহ অনুগতদের 'বিদ্রোহে' সরকার পড়ে যায়। এবার স্পষ্ট জনাদেশ নিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সিন্ধিয়াকে কতটা 'অগ্রাহ্য' করা সম্ভব হবে, সে নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। যদিও তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে কোনও উৎসাহ নেই। তৃতীয় নামটি অবশ্যই কৈলাস বিজয়বর্গীয়র। কোনও বিধানসভা নির্বাচন হারেননি তিনি। পাশাপাশি তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রচার চালিয়ে ২০১৪ সালে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্যের মুখ দেখে বিজেপি। তিন শক্তিশালী দাবিদারের মধ্যে কার উপর শেষমেশ আস্থা রাখবে গেরুয়া শিবির? এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা সমীকরণ, জটিল গণিত চলছে। তবে শীঘ্রই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। 


আরও পড়ুন:দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নৌসেনার বিভিন্ন পদের নাম বদলের ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর