বীজপুর: পঞ্চম দফার ভোটে আক্রান্ত শৈশব! বীজপুরে সিপিএম সমর্থক পরিবারের ওপর হামলা। লাঠিপেটা করা হল সাড়ে তিন বছরের শিশুকেও। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার বীজপুরের তৃণমূল প্রার্থীর। কমিশনকে দেওয়া রিপোর্টে শিশুর ওপর হামলার কথা স্বীকার জেলা প্রশাসনের। ঘটনায় ধৃত ৫। মারধর-হুমকি উপেক্ষা করেই ভোট দিলেন শিশুর মা।
মার কোলে চেপে ও মামার বাড়ি ঘুরতে এসেছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে মার কোলে চেপে ভোট দেওয়া দেখতে গেল।
দেখল মায়ের চোখে জল।
ও জানে মা কেন কাঁদছে। রবিবার রাতটা কী করে ভুলবে?
বয়স সাড়ে তিন। প্রতিদিন দত্যি-দানবের গল্প শোনে। কিন্তু, সেই দত্যি-দানবরা যে বাড়িতে ঢুকে এ ভাবে মারধর করবে, সেকি আর ও জানত! ও তো বড়দের কিছুই জানে না। ভোট কী জানে না। রাজনীতি কি জানে না। কিন্তু, সেই রাজনীতি রেহাই দিল না এই নিষ্পাপ শিশুকে। লাঠির ঘা পড়ল ওর নরম ছোট্ট শরীরে! এ রাজ্যের রাজনৈতিক দাদারা ওকেও রেহাই দিল না। অভিযোগের আঙুল উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। ঘটনাস্থল উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুর কেন্দ্রের হালিশহর। ভোটে আক্রান্ত শৈশব!
কিন্তু, কী অপরাধ ছিল এই শিশুটির?
অপরাধ এটাই, যে, তার মামার বাড়ির লোকেরা সিপিএম সমর্থক। অভিযোগ, ভোটের আগের দিন মাঝরাতে বাড়িতে চড়াও হয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বাড়ি ভাঙচুর এবং মারধর করা হয় শিশুর মা ও দাদুকে।
মা ও দাদুকে মার খেতে দেখে আতঙ্কিত শিশুটি জানতে চেয়েছিল...
ওদের মারছ কেন? যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা, আর এক মিনিটও দেরি করেনি দুষ্কৃতীরা। লাঠির ঘা গিয়ে পড়ে সাড়ে ৩ বছরের ছোট্ট শরীরে।
এভাবে কোলের শিশুকে মার খেতে দেখে ভোট দেওয়ার জেদ চেপে যায় মায়ের।
এবিপি আনন্দে এই খবর দেখার পর নড়েচড়ে বসে নির্বাচন কমিশন। জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করে তারা। সেই মতো রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে রিপোর্ট পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। শিশুর ওপর হামলার কথা স্বীকার করেছে তারা। যদিও জেলা প্রশাসনের দাবি আঘাত তেমন গুরুতর নয়। কমিশন সূত্রে এমনটাই খবর। ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পাশাপাশি কমিশনের নির্দেশে এদিন ওই শিশুর বাড়ি যান পর্যবেক্ষক। তারপর কমিশন ও পুলিশের আশ্বাসে ভোট দিতে যান শিশুর মা ও দাদু।
বীজপুরের তৃণমূল প্রার্থীর দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই।
অনেকে আক্ষেপের সুরে বলছেন, আমাদের এমনই রাজ্য, যেখানে উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে রাজনৈতিক দল তার বিজ্ঞাপনে শিশুদের ব্যবহার করে। আবার সেই রাজ্যেই দুধের শিশুকে ভোট সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়! কোন সাফাইয়ে এই লজ্জা লুকোনো সম্ভব? না কি এরপর কেউ কেউ এমনটাও দাবি করবেন, যে ও মিথ্যা বলছে? না, সাড়ে তিন বছর বয়সে আর যাই হোক, অকপটে নিষ্পাপ মুখে ঝুরি ঝুরি মিথ্যা বলা যায় না। বহু তুখোড় রাজনীতিবিদ যে কৌশল, অনায়াসে রপ্ত করতে পারেন, তা এই শিশুর পক্ষে সম্ভব নয়! তাই, এই ছবি দেখার পর সবার মুখ থেকে একটাই শব্দ বেরোচ্ছে....ছিঃ....


গোপাল চট্টোপাধ্যায়, আস্তিক চট্টোপাধ্যায় ও দীপক ঘোষ, এবিপি আনন্দ