কলকাতা: প্রথমে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য।
তারপর নজরবন্দি অবস্থাতেই দীর্ঘক্ষণ বেপাত্তা। অবশেষে প্রায় চার ঘণ্টা গড়ানোর পর গ্রেফতার। কলকাতার ভোটে দিনভর খবরের শিরোনামে কাশীপুরের তৃণমূল নেতা আনোয়ার খান।
সেই আনোয়ার খান, মাসখানেক আগে খুনের চেষ্টা, হিংসা ছড়ানোর মতো অভিযোগে যাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জামিনের পরও কমিশনের নির্দেশে ভোট চলাকালীন যাঁকে নজরবন্দি করে রাখা হয়। যদিও, তার মধ্যেই স্বমহিমায় তিনি। পুলিশের সামনেই ফোনে নির্দেশ দিতে শোনা যায় আনোয়ার বলছেন, কমিশনকে মুপে জুতা মারো। চুনা কালি দে দো। কাশীপুরমে বেশি ভোট করাকে!

তৃণমূল নেতা আনোয়ার খান কোথায় দাঁড়িয়ে এই মন্তব্য করছেন? কাশীপুর উদ্যানবাটীর সামনে। রামকৃষ্ণদেব, স্বামী বিবেকানন্দের একসময়ের ঠিকানা সেই কাশীপুর উদ্যানবাটী। মণীষীদের স্মৃতিবিজড়িত এই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেতা আনোয়ারের মুখনিঃসৃত বাণী মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে বহু বাঙালির।
আনোয়ার খানের এই অবমাননাকর মন্তব্য সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের তরফে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয় তৃণমূল নেতা আনোয়ারের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।



বিশাল বাহিনী নিয়ে কাশীপুরে পৌঁছন ডিসি নর্থ। কিন্তু, নজরবন্দি অবস্থাতেই আনোয়ার তখন বেপাত্তা! আনোয়ারের খোঁজে তাঁর বাড়ি ও কাশীপুর উদ্যানবাটীতেও তল্লাশি চালায় পুলিশ।
শেষমেশ ঘণ্টাচারেক পর কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্রেরই অন্তর্গত সেভেন ট্যাঙ্কস রোডের একটি আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয় আনোয়ারকে।
বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, কমিশনের নির্দেশে নজরবন্দি আনোয়ার খানের সঙ্গে সর্বক্ষণ কলকাতা পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর এবং একজন কনস্টেবল ছিলেন। তাঁদের চোখের সামনে থেকে আনোয়ার বেপাত্তা হয়ে গেলেন কীভাবে? এই পুলিশকর্মীরা তখন কী করছিলেন? কাশীপুর বিধানসভা এলাকায় থাকা সত্ত্বেও তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল না কেন?
এমনকী বিরোধীদের প্রশ্ন, আনোয়ারকে কি আদৌ গ্রেফতার করা হয়েছে? নাকি চার ঘণ্টা নজরের আড়ালে থেকে ভোট করিয়ে তিনি নিজেই ধরা দিয়েছেন? সবটাই আইওয়াশ নয়তো?
আনোয়ার খানের মতো কাশীপুরের আরেক জেল খাটা তৃণমূল নেতা স্বপন চক্রবর্তীকেও এদিন নজরবন্দি করে রেখেছিল কমিশন। সকালে কাশীপুরের কাকাতুয়া অ্যাপার্টমেন্টে তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায় বাইরে থেকে তালা ঝুলছে। তবে সেখান থেকে বেরোতেই, অন্য একটি ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় স্বপনকে। ক্যামেরার সামনে তৃণমূল নেতা স্বপন চক্রবর্তী দাবি করেন, তিনি সারাদিন বাড়ি থেকে বেরোবেন না। যদিও দুপুর গড়াতেই অভিযোগ শোনা যায় স্বপন চক্রবর্তী বাড়ি থেকে বেরিয়ে নানা বুথে গিয়ে ভোট করাচ্ছেন। পরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করেও স্বপন চক্রবর্তীর খোঁজ পাওয়া যায়নি।