বীরপাড়া ও আসানসোল: ‘টিএমসি -র মানে টি ফর টেরর, এম ফর মওত, সি ফর করাপশন’!
রাজ্যে এসে দ্বিতীয় নির্বাচনী জনসভা থেকে এভাবেই তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদী। বাদ গেল না বাম-কংগ্রেসও।
সারদা-নারদ থেকে শুরু করে উড়ালপুল বিপর্যয়— রাজ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনী প্রচারে এসে তৃণমূল সরকারকে নিশানা করলেন নরেন্দ্র মোদী। আসানসোলের সভা থেকে বললেন, আগে দুর্নীতিকাণ্ডে সবসময় সরব হতেন মমতা। এখন কী করে দিদির এই পরিবর্তন ? নারদ স্টিংকাণ্ডে ক্যামেরার সামনে টাকা নিচ্ছেন তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীরা। এখন কেন সরব নন দিদি ? কেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? দুর্নীতির সঙ্গে দিদির আপোস হয়েছে ? গত পাঁচ বছরে শুধু বোমা তৈরির কারখানা হয়েছে। টিএমসি -র মানে টি ফর টেরর, এম ফর মওত, সি ফর করাপশন। ভোটের নামে আগে সায়েন্টিফিক রিগিং হত। এখন দিদির সময় দেখছি সায়েন্টিফিক কোরাপশন।



এ বারের নির্বাচনে দুর্নীতিই যে প্রধান ইস্যু, তা বার বার বুঝিয়ে দিচ্ছে বাম-কংগ্রেস। মোদীও একই পথে হাঁটলেন।  বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের বীরপাড়ায় বিজেপির নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা রাখতে গিয়ে তিনি বললেন, আপনারা নারদা দেখেছেন তো? টিভিতে? মা-মাটি-মানুষের লোকেরা টাকা নিচ্ছিল। টাকার বিনিময়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। কেউ বেশি চাইছে। কেউ বলছে পরের বার কত দেবে? মোদীর কটাক্ষ, মা-মাটি-মানুষের সরকারের এখন স্রেফ মউত (মৃত্যু) এবং মানি (টাকা) রয়েছে।

বুধবার রাজনাথ সিংহ তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ইস্যুকে বুড়ি ছোঁওয়ার মতো ছুঁয়ে গেলেও বৃহস্পতিবার মোদী কিন্তু সেই দুর্নীতির অভিযোগকেই বার বার হাতিয়ার করলেন। কখনও নারদকাণ্ড তো কখনও সারদা-কেলেঙ্কারি। মোদী বলেন, সারদা চিটফান্ডে কার টাকা গেল? গরিবদের, শ্রমিকদের। সেটা ফেরত আসা দরকার। দোষীদের শাস্তি হওয়া দরকার। আর মমতা যদি তাদের আড়াল করেন, তাঁকেও বাড়ি পাঠানো দরকার। তাঁর দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেননি দিদি ? অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দিদি। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। যাঁরা গরীবের টাকা লুঠ করেছেন, তাঁদের গদিচ্যুত করা উচিত।



নারদকাণ্ডের আবহে পোস্তার উড়ালপুল বিপর্যয় তৃণমূলের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে। এ দিন সেই প্রসঙ্গ টেনেও মমতাকে আক্রমণ করেন মোদী। বলেন, এখানে দুর্নীতির ভয়ানক রূপ। ভোটের মধ্যে ব্রিজ ভেঙে পড়ল। মমতা প্রথমে গিয়েই বামেদের উপর দায় চাপিয়ে দিলেন। ব্লেম গেম শুরু করে দিলেন। বাম দেখতে পেলেন, আহতদের দেখতে পেলেন না। কাজ শেষ হলে তো উদ্বোধনের কৃতিত্ব নিতেন।

এই প্রসঙ্গে মমতাকে কটাক্ষ করে মোদী আরও বলেন, উড়ালপুল বিপর্যয়ে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি করবেন দিদি ? ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু বাম আমলের প্রসঙ্গ টানছেন দিদি। বাম আমলে শুরু হলেও দিদিই তো কাজ এগিয়েছেন। বাম আমল ও দিদির আমল একই।



এখানেই শেষ নয়। মমতা-সনিয়া ‘মৈত্রী’ নিয়েও খোঁচা মারেন মোদী। তাঁর অভিযোগ, বারাবার দিল্লিতে ডাকা সত্ত্বেও বৈঠকে যোগ দেন না মমতা। অথচ, রাজধানী গেলেই সনিয়ার সঙ্গে দেখা করার সময় পান। মোদীর দাবি, পরিবর্তনের ডাক দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্যে কোনও পরিবর্তন আনতে পারেননি মমতা। মোদী বলেন, উনি কেমন মুখ্যমন্ত্রী? ডাকলেও কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি আসেন না, তাতে এই রাজ্যের সর্বনাশ হলেও। মোদী যোগ করেন, তিনি আসেন না কারণ মোদী ওই বৈঠক ডেকেছেন। অথচ দিল্লি গেলে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করতে ভোলেন না। হাসিমুখের ছবি বেরোয়। কেন দেখা করেন? এই ঘোঁটে আপনাদের কী লাভ হবে?

মোদীর মুখে সনিয়া-মমতা সখ্যতার প্রসঙ্গ শুনে অনেকেই রীতিমতো চমকে গিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সনিয়ার সঙ্গে মমতার সাক্ষাতের প্রসঙ্গ তুলে ঘুরপথে হয়ত তৃণমূল-বিজেপি আঁতাঁতের অভিযোগ থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করলেন মোদী। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন, মোদী ডেকে যান আর মমতা যান না! বিষয়টা বোধহয় এতটাও জলবৎ তরলং নয়! সাম্প্রতিককালে বারবারই তৃণমূল-বিজেপি আঁতাতের অভিযোগে সরব হয়েছে সিপিএম-কংগ্রেস। যে অভিযোগ আরও জোরাল হয় যখন, রাজ্যে প্রচারে এসেও সারদা-নারদ-উড়ালপুল প্রসঙ্গে কার্যত নীরবই থাকেন মোদী-মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাজনাথ সিংহ! সিপিএম-কংগ্রেসের দাবি, গোটাটাই আসলে দূরত্ব দেখানোর কৌশল। আর তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে অটুট রাখার প্রচেষ্টা! সে কারণেই মোদীর মুখে হঠাৎ সনিয়া-নাম!



তবে, শুধু তৃণমূলকে আক্রমণ করেই ক্ষান্ত হননি মোদী। এদিন কংগ্রেস ও বামকেও একাসনে বসিয়ে আক্রমণ করেন। বামফ্রন্টকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, বাম ও তৃণমূল সবচেয়ে বেশি খারাপ কে, তার প্রতিযোগিতা চলছে। রাজ্যে শুধু ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। দলীয় অফিস খুলতেই ভয় পাচ্ছে কর্মীরা। আবার কংগ্রেসকেও ছাড়েননি তিনি। বলেন, আসানসোলের ভিড় দিদির ঘুম কেড়ে নেবে। সনিয়া গাঁধীরও ঘুম কেড়ে নেবে। মোদী বলেন, কয়লার কালোবাজারি থেকে সিন্ডিকেট, চালু করেছে বামেরা, তৃণমূল এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এঁদের হাত থেকে মুক্তি চায় পশ্চিমবঙ্গ। বাম-কংগ্রেস-তৃণমূলের হাত থেকে মুক্তি চায় রাজ্য।



তিনি এও বলেন, ‘কেরলে কুস্তি, বাংলায় দোস্তি।’ ৩৪ বছর ধরে বাম সরকার ছিল। বাংলাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বামেরা। ৫ বছর আগে বামেদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। এখন বামেদের হাত ধরেছে। একসময় ৪০০ আসন নিয়ে সরকার গড়েছিল কংগ্রেস। এখন আসন ৪০-এ ঠেকেছে।