কয়েক দিন আগেই, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকজ করে নির্বাচন কমিশন। মমতার হয়ে জবাব দেন মুখ্যসচিব। এ নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বিরোধীদের প্রশ্ন, তৃণমূলের সভায় দলনেত্রী কী বলেছেন, তার ব্যাখ্যা কীভাবে মুখ্যসচিব দিতে পারেন? তা হলে কি মমতার নির্দেশেই মুখ্যসচিব জবাব দিয়েছেন? ভোটের মধ্যে কি এ ভাবে প্রশাসনকে কাজে লাগানো যায়? এই ইস্যুতেই এ দিন কৃষ্ণনগরের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র সমালোচনা করেন নরেন্দ্র মোদী।
মোদী বলেছেন, শুনছি, দিদির জবাব দিয়েছেন মুখ্যসচিব। এমনটা হলে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয়েছে। মোদীর মতে, আইনকে সম্মান করা উচিত। সরকারের অপব্যবহার হওয়া উচিত নয়। মমতা অথবা তৃণমূলের জবাব দেওয়া উচিত ছিল। মুখ্যসচিব জবাব দিয়ে থাকলে বিধি ভঙ্গ হয়েছে।
মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে এদিন ইন্দিরা গাঁধীর প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন নরেন্দ্র মোদী। সরকারি যন্ত্রকে ব্যবহার করার অভিযোগে, ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গাঁধীর কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলিতে নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি নির্বাচনী কাজে সরকারি গেজেটেড অফিসার তথা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের তৎকালীন ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) যশপাল কপূরের সহযোগিতা নিয়েছিলেন! এছাড়া, নির্বাচনী জনসভার জন্য মঞ্চ বাঁধতে এবং লাউডস্পিকারের বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্যও উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিভিন্ন গেজেটেড অফিসারের সাহায্য নিয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। এই প্রসঙ্গে তুলে সরকারি অফিসার ব্যবহারের অভিযোগে মমতাকে নিশানা করেন মোদী।
পুলিশ অফিসারদের বদলি থেকে শুরু করে অনুব্রত মণ্ডলকে নজরদারি এবং তাঁকে শোকজ-- এই সব পদক্ষেপের প্রতিবাদে গত কয়েক দিন ধরে বার বার নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়েও এ দিন তৃণমূলনেত্রীকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মোদী। বলেন, মমতা ও তাঁর দল পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে, তাই কোনও দলের সঙ্গে না লড়ে কমিশনের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আমাদের সবার দায়িত্ব কমিশনকে সম্মান করা। নির্বাচন আসবে যাবে, কমিশনের মতো সংস্থা ভেঙে পড়লে দেশ চলবে না। ১৯ তারিখের পর দেখে নেবেন বলে কমিশনকে হুমকি দিচ্ছেন। পাঁচ বছর রাজ্যকে দেখলে কমিশনকে দেখতে হত না, মন্তব্য মোদীর।
মমতার হয়ে মুখ্যসচিবের ব্যাট করা নিয়ে আগেই সরব হয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। শনিবার তারা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে গিয়ে মুখ্যসচিবকে শোকজ করার দাবি জানায়। দিল্লিতে কমিশনের দফতরে যায় সিপিএমও। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই প্রেক্ষাপটে, মুখ্যসচিবের শোকজের জবাব দেওয়ার সমালোচনা করে মমতার উপর চাপ আরও বাড়ালেন নরেন্দ্র মোদী।