অর্ণব মুখোপাধ্যায়, সত্যজিৎ বৈদ্য, সমিত সেনগুপ্ত, কলকাতা: এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করতে পারেনি মোদি সরকার। যার জন্য বিধানসভা ভোটের আগে মতুয়াদের মান ভাঙাতে ভালও বেগ পেতে হয়েছে অমিত শাহদের। সেখানে ইস্তেহারে বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। জানানো হয়েছে, প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী ৫ বছর শরণার্থী পরিবারকে বছরে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি।


২০২১-এ বাংলার ক্ষমতা দখলে মরিয়া বিজেপি, বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতায় এলে সোনার বাংলা গড়ার। কিন্তু কেমন হবে সেই সোনার বাংলা? আজ নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করে বিজেপির দাবি, এটাই তাঁদের সোনার বাংলার সঙ্কল্প পত্র।


কী রয়েছে তাতে? বিজেপি-র ইস্তেহারে বলা হয়েছে, ‘প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজ্য সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ। কেজি থেকে পিজি পর্যন্ত মহিলাদের বিনামূল্যে পড়াশোনা। ‘কিষাণ সম্মান নিধি’তে কৃষকদের বছরে ১০ হাজার টাকা। ক্ষমতায় এসেই সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর হবে। ৫ টাকার বিনিময়ে ৩ বেলা আহারের ব্যবস্থা। রেশনে কেজি প্রতি ১ টাকায় চাল-গম, ৩০ টাকায় ডাল, ৫ টাকায় চিনি মিলবে।’


প্রত্যেক পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হবে গৃহকর্ত্রীদের নামে। মহিলাদের কাছে টানতে ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার বিজেপির ইস্তেহারেও মহিলাদের জন্য ঢালাও পরিকল্পনার ঘোষণা করা হল। রাজ্য সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। ১৮ বছর হলেই মেয়েরা পাবেন এককালীন ২ লাখ টাকা। কেজি থেকে পিজি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারবে বাংলার মেয়েরা। গণপরিবহণে বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারবেন মহিলারা।


ইস্তেহার প্রকাশ করে অমিত শাহ বলেছেন, ‘বিধবা ভাতা মাসিক ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হবে। প্রসূতিদের অনুদান ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার টাকা করা হবে।’


এর সমালোচনা করে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘আমাদের কথা, বাংলা নিজের মেয়েকে চায়। ওরা আমাদের দেখে কপি করছে। ওদের ম্যানিফেস্টোতে নতুন কিছু নেই। আমরা মনে করি, বাংলার মানুষ ম্যানিফেস্টোকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।’


ভোটমুখী বাংলায় ৫ টাকায় মানুষের হাতে মধ্যাহ্নভোজ তুলে দিতে মা ক্যান্টিন চালু করেছে মমতার সরকার। এবার তার পাল্টা দিতে ইস্তেহারে অন্নপূর্ণা ক্যান্টিনের ঘোষণা করল বিজেপি। সেখানে ৫ টাকার বিনিময়ে তিন বেলা খাবার মিলবে।


ফের ক্ষমতায় এলে বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা করেছে তৃণমূল। পাল্টা রেশনে চাল-গমের দাম কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল বিজেপির ইস্তেহারে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে রেশনে ১ টাকা মিলবে এক কেজি চাল বা গম। ৩০ টাকা কেজি ডাল, ৩ টাকা কেজি নুন এবং ৫ টাকায় মিলবে এক কেজি চিনি।


বিজেপি ক্ষমতায় এলে এরাজ্যে অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অমিত শাহ। তিনি সীমান্তে ফেন্সিংয়ের কথাও বলেছেন। এর সমালোচনা করে সৌগত রায় বলেছেন, ‘বলছে, বর্ডারে কাঁটাতার দেবে। অনুপ্রবেশ বন্ধ করবে। বিএসএফ তো ওদের হাতে, কেন বন্ধ হয়নি?’


কিষাণ নিধি সম্মান নাকি কৃষক বন্ধু প্রকল্প? আয়ুষ্মান ভারত নাকি স্বাস্থ্যসাথী? কোন প্রকল্প বেশি ভাল, তা নিয়ে ভোটের আগে তুঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য তরজা। এই প্রেক্ষাপটে বিজেপির ইস্তেহারে বলা হয়েছে, বাংলায় তারা ক্ষমতায় এলে, কিষাণ সম্মান নিধিতে কৃষকদের অ্যাকাউন্টের বকেয়া ১৮ হাজার টাকা পাঠানো হবে। তারপর বছরে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। মৎস্যজীবীরা পাবেন বছরে ৬ হাজার টাকা অনুদান। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের প্রত্যেক গরিবকে আনা হবে।