ঋত্বিক প্রধান, পূর্ব মেদিনীপুর: ১৬ মে বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল এগরার খাদিকুল। প্রাণ গেছিল ১২ জনের। সেখানকার সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতে উড়ল গেরুয়া নিশান। ১৭ আসন বিশিষ্ট সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২টি আসনে দখল নিয়েছে বিজেপি। ৫টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। 


কী ছবি?
শেষ পর্যন্ত, 'সাহারা'র সাহারা হল বিজেপিই! বিস্ফোরণবিধ্বস্ত খাদিকুলের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতে উড়ল গেরুয়া নিশান। পোড়া বারুদের গন্ধটা আজ আর নেই ঠিকই...। কিন্তু, খাদিকুলের কোনায় কোনায় এখনও শোনা যায় প্রিয়জন হারানোর হাহাকার...। গত ১৬ মে, বাজি কারখানায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে প্রাণ যায় মূল অভিযুক্ত-সহ ১২ জনের। এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ভয়াবহ এই ঘটনার দায় কার্যত স্থানীয় পঞ্চায়েতের ওপরেই চাপিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সেই সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী দাবি করেন, স্থানীয় সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতটি বর্তমানে বিজেপি পরিচালিত। পরদিনই সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।সেখান থেকে পুলিশ মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলেছিলেন তিনি। বিস্ফোরণস্থল ঘুরে, স্বজনহারাদের আশ্বস্ত করতে যখন দেখা গেছিল শুভেন্দু অধিকারীকে, সেদিন তখনই গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের মন্ত্রী, সাংসদরা। উঠেছিল চোর স্লোগান। বিস্ফোরণের ১১ দিন বাদে হেলিকপ্টারে সেখানে পৌঁছন মুখ্য়মন্ত্রী. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিস্ফোরণস্থলে না গেলেও, সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বিস্ফোরণকাণ্ডে নিহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। চেক ও চাকরির নথি বিলির বিষয়টি নিজেই তদারকি করতে দেখা যায় তাঁকে। সে বার মুখ্যমন্ত্রীকে এও বলতে শোনা যায়, 'আপনাদের সকলের কাছে আমার মাথা নত। আমি এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি। এবং আপনাদের যদি কোনওরকম কোনও সাহায্য করতে পারি, আপনারা বলবেন।' কিন্তু, তাতেও যে চিঁড়ে ভেজেনি, তেমনটাই বলছে সেখানকার পঞ্চায়েত ভোটের ফল! এদিনের ফল স্পষ্ট হতেই, বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, 'অনেকে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। পরিবারের মাথার ছাদ হারিয়েছে। মানুষ অসহায়। দু'হাত তুলে মানুষকে আশীর্বাদ। তৃণমূল বোমা-বন্দুকের উন্নয়ন করেছে।' ১৭ আসন বিশিষ্ট সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১৮-য় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ৮ জনের সমর্থন নিয়ে চলতি মার্চে, বোর্ড গঠন করে বিজেপি। এবারের পঞ্চায়েতে সেখানে ১২টি আসনে দখল নিয়েছে বিজেপি। ৫টিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। যাঁদের জীবন গিয়েছে, তাঁরা ফিরবেন না। কিন্তু যাঁরা রয়ে গেলেন, সেই বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান এর পর কি উন্নত হবে? উত্তর সময়ের গর্ভে।


আরও পড়ুন:গণনার দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বিপত্তি